১৪ বছরে ‘৩৯ রান’ এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট
উন্নতিই বলতে হবে!
২০১১ সালের কথা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টি–টোয়েন্টিতে মিরপুরে সেদিন ১৩৬ রানের লক্ষ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ৮৫ রান। হেরে যায় ৫০ রানে।
১৪ বছর পরের কথা।
গতকাল দুবাইয়ে সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৩৬ রান। এবার আর এক শর নিচে নয়, বাংলাদেশ করে ২০ ওভারে ১২৪ রান। ১৪ বছর আগে একই টার্গেটে ৫০ রানে হারা বাংলাদেশ কাল হেরেছে ১১ রানে। উন্নতি নয় তো কী! চরম নিন্দুকেরা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, দেশের ক্রিকেট একই জায়গায় স্থির হয়ে নেই। ১৪ বছরে ৩৯ রান এগিয়েছে টাইগাররা।
রান আর উইকেট দিয়ে কী হয়! টি-টোয়েন্টিতে খেলার ধরনটাই আসল কথা। বাংলাদেশ সেটিও কাল দেখিয়েছে। ১৩৬ রানের জবাবে যেভাবে বাংলাদেশ আক্রমণ করেছে, সেটা তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্যই আদর্শ। কাল একটি-দুটো বল ডট হলেই যেভাবে ছক্কা মারার চেষ্টা করেছে দল, তাতে পুরো দেশই গর্বিত হওয়ার কথা।
উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে একটা। নুরুল হাসান সোহানের কথা চিন্তা করুন। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বল ডট খেলার পর ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার অনেকটা নিশ্চিত হয়েই বলেছিলেন, এখনই কিছু একটা হবে। হয়েছেও।
ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন নুরুল! শুধু এই শটটা না, যেভাবে প্রতি বল ‘শাফল’ করে বড় শট খেলার প্রস্তুতিটা নিয়ে রেখেছিলেন নুরুল, তা প্রতিপক্ষ পাকিস্তানও হয়তো মনে রাখবে। এসব শুনে আবার স্কোরকার্ড চেক করতে যাবেন না। ভাববেন না নুরুল ২১ বল খেলে ফিফটি করে ফেলেছেন। তিনি করেছেন ২১ বলে ১৬। স্ট্রাইক রেট ৭৬.১৯। এর মধ্যে আবার নিজের ইনিংসের প্রথম বলে ব্যাটের কানায় লেগে একটি ছক্কা হয়েছে।
তিনে খেলা তাওহিদ হৃদয়কে না টানলেও অনেকে মন খারাপ করতে পারেন। হৃদয় নিশ্চয়ই কাল জানতেন উইকেটের জন্যই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে পাওয়ারপ্লেতে তিন ওভার করাচ্ছেন সালমান আগা। তাতে কী! দিলেন খেলে এক শট। বাকিটা কী হয়েছে তো জানেনই! এমন ভাবনাকে আপনি সম্মান করবেন না?
বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনাকেও সম্মান করতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মেহেদী হাসানের স্ট্রাইক রেট ১০০, গড় ১১। যে কয়েকটি রান তিনি টি-টোয়েন্টিতে করেছেন, বেশির ভাগ আসে স্পিনারদের বিপক্ষে ইনসাইড আউট খেলে। এটাই তাঁর ‘গো টু শট’। এমন একজনকে বাংলাদেশ দল কাল পাঠিয়েছে চার নম্বরে। উদ্দেশ্যে ছিল পেসারদের বিপক্ষে রান করা। রান তিনি করেছেন ১০ বলে ১১। পরে স্পিনারদের দেখেই লোভটা সামলাতে পারেননি। গেলেন ইনসাইড–আউট খেলতে। বাকিটা আপনি জানেন। আউট!
এবারের এশিয়া কাপেরই অন্যতম ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান জাকের আলী। ৬ ম্যাচে ৬৬ বল খেলে একটাও ছক্কা মারতে পারেননি। অথচ তাঁর কাজই নাকি ছক্কা মারা। চেষ্টা অবশ্য করেছেন। শাফল করে অফ স্টাম্পের বাইরে দাঁড়িয়ে মিডউইকেটে মারার প্রচেষ্টা স্পষ্টতই দেখা গেছে। শুধু ব্যাটে লাগেনি বল, এ ছাড়া আর কিছু না!
বাংলাদেশ দলের এশিয়া কাপের গল্পে ওপেনিং নিয়েও একটা আলাদা অধ্যায় থাকবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন দুজনেই করেছেন শূন্য। পারভেজ দল থেকে বাদ পড়লেন, তানজিদ একটা ভালো ইনিংস খেলে তিনিও এক, শূন্য এসব করা শুরু করলেন। কাল তানজিদের জায়গায় দলে এসে পারভেজ আবার করলেন শূন্য। সাইফ বেচারা হেঁটেছেন একলা পথে। দুটি ফিফটি করেছেন। কালও ভালো খেলতে খেলতে ১৮ রানে আউট হয়েছেন।
অবশ্য প্রতি টুর্নামেন্টেই কেউ না কেউ একলা পথে হাঁটেন। দিন শেষে তাঁকে ঘিরেই আলোচনায় হয়। আর চাপা পড়ে যায় দেশের ক্রিকেটের উন্নতির কথা। এবার একটু দুই ফিফটি করা ক্রিকেটারকে নিয়ে আলোচনা কম হওয়ার কথা। কারণ, সাইফ ধারে–ভারে আসলে অমন চরিত্র নয়। তাঁকে ঘিরে সোশাল ‘মিডিয়া ক্যাম্পেইন’ ততটা জমবে না। সহজ কথা ভিউ–বাণিজ্য ততটা আপাতত হবে না। এশিয়া কাপ দিয়েই মূলত তাঁর উত্থান। তাই দেশের ক্রিকেটের ৩৯ রানের উন্নতি নিয়ে কথা হচ্ছে, সামনেও হবে।