সালাহউদ্দীন আসলে কী বলতে চাইলেন না
‘টেস্ট তো আর শেষ হয়ে যায়নি…’, দলকে ভরসা জোগাতেই যেন কথাটা বললেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন। কিন্তু তিনি নিজে কি ভরসা পাচ্ছেন তাতে!
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পুরোনো গল্পের নতুন মঞ্চায়নই হলো রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে—বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা। টপ অর্ডাররা ব্যর্থ হবেন, অল্প অল্প আশা দেখাবেন মিডল অর্ডারের কেউ, শেষ পর্যন্ত কেউ অসাধারণ কিছু করে না ফেললে থামতে হবে অল্পতেই। ক্ষণে ক্ষণে কেটে যাওয়া সুরের বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটাই যেন স্বাভাবিক ছন্দ।
পরের গল্পতেও নতুনত্ব থাকে না তেমন। সংবাদ সম্মেলনে এসে কেউ বলবেন—আর ক’টা দিন সময় দিন, উন্নতির চেষ্টা চলছে, কিংবা ‘প্রসেস’টা ঠিকঠাক হয়নি। আজ সিলেট টেস্টের প্রথম দিন শেষে সেই চেনা কথাগুলো বললেন গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব নেওয়া সালাহউদ্দীনও।
আমার কোচ ভালো হলেও চলবে না, আমার খেলোয়াড় ভালো হলেও চলবে না, আমার সঙ্গে আরও অনেক কিছু ভালো হতে হবে। এখন যদি বলেন কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা আমার নিজেরও প্রশ্ন।’মোহাম্মদ সালাউদ্দীন, সিনিয়র সহকারী কোচ, বাংলাদেশ
কিন্তু এর শেষ কবে? এমন প্রশ্নে তিনি দেখালেন বড় প্রেক্ষাপট, ‘ধরুন, আপনার দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী। আপনি কি একটা অংশ দিয়ে কখনো শক্তিশালী হতে পারবেন? আপনার ভালো প্রশাসন লাগবে, ভালো রাস্তাঘাট লাগবে, ভালো লোকজন লাগবে। সবকিছুই লাগবে। যদি বলেন খেলোয়াড়েরা চেষ্টা করছে না, এটা ভুল বলা হবে। কারণ, আমি খুব কাছ থেকে দেখছি। তারা চেষ্টা করছে। কিন্তু এর সঙ্গে তো আনুষঙ্গিক অনেক ব্যাপারস্যাপার থাকবে।’
ব্যর্থতার দায় তাই শুধু খেলোয়াড়দের ওপর না চাপিয়ে উন্নতির জন্য সবাই মিলে কাজ করার কথাই বলেছেন সালাহউদ্দীন। তাঁর ভাষায়, ‘দোষাদোষী, রেষারেষি নয়। এর মধ্যেই আমরা কীভাবে ভালো করতে পারি সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত। একটা দেশের ক্রিকেট কীভাবে আগাবে, এখানে সবারই সাহায্য করতে হবে। আমার কোচ ভালো হলেও চলবে না, আমার খেলোয়াড় ভালো হলেও চলবে না, আমার সঙ্গে আরও অনেক কিছু ভালো হতে হবে। এখন যদি বলেন কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা আমার নিজেরও প্রশ্ন।’
একটা দেশের ক্রিকেট কী রকম করছে, সেটা নির্ভর করে আপনার জাতীয় দল কেমন খেলছে তার ওপর। তার জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করতে হবে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার বছর পর টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ দল। এই চার বছরে দলে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। পুরোনো অনেক ক্রিকেটার নেই, অনেক নতুন মুখ। বদল এসেছে নেতৃত্বেও। কিন্তু একটা বৃত্ত থেকে যেন বেরই হওয়া যাচ্ছে না—ঘরের মাঠের টেস্টে লেজেগোবরে ব্যাটিং। ঘরের মাঠে শেষ ৮টি টেস্ট ইনিংসে মাত্র দুইবারই দুই শ পেরিয়েছে বাংলাদেশের রান। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আজ তারা অলআউট হলো ১৯১ রানে।
ঠিক কত দিন বা কত ইনিংস পর ঠিক হবে বাংলাদেশের ব্যাটিং, সেটি তো আর বলেকয়ে হবে না। সালাহউদ্দীনও সেরকম প্রসঙ্গ একটু এড়িয়েই গেলেন। তবে বলেছেন, ‘সবকিছু দ্রুত করতে হবে। আমরা খুব বেশি অপেক্ষা করতে পারব না। ফল ভালো না করলে সব সময় আমাকে তা স্বীকার করে নিতে হবে। একটা দেশের ক্রিকেট কী রকম করছে, সেটা নির্ভর করে আপনার জাতীয় দল কেমন খেলছে তার ওপর। তার জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করতে হবে।’
সালাহউদ্দীন পরে আবারও বলেছেন ক্রিকেটারদের প্রতি তাঁর আস্থার কথা, বলেছেন তাঁদের চেষ্টার কথা। এবং এটিও দ্বিতীয়বার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কাজটা ক্রিকেটারদের একার নয়, সবার। কিন্তু সেটি জানাতে গিয়ে সম্পূরক যে কথাটি বললেন, নতুন প্রশ্নের উদ্রেক করেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেছে তা, ‘পারিপার্শ্বিক অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো সব সময় বলতে পারি না, বলা উচিতও না। আপনাদের একটু সময় দিতে হবে।’
তাহলে কি বাইরের কিছুও ক্রিকেটারদের খেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? কী সেটা! সালাহউদ্দীন আসলে কী বলতে চাইলেন না?