বাংলাদেশের হেসেখেলে জয়ের আড়ালে কিছু ‘না বলা’ কথা
গল্পটা আগের ম্যাচের মতোই। সিলেটের গ্যালারিভর্তি দর্শক। টসে জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাসের ফিল্ডিং বেছে নেওয়া। বাংলাদেশের বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস। হেসেখেলে বাংলাদেশের তা তাড়া করে ফেলা।
যা একটু বদল, তা শুধু ম্যাচের দৈর্ঘ্যে—সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই দল মিলে খেলেছিল ৩৩.৩ ওভার। কাল খেলা শেষ ৩০.৪ ওভারেই। একটু পরিবর্তন আছে ফলাফলেও—গত শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটে। কাল দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের ব্যবধান আরেকটু বড়—৯ উইকেটে। যে জয়ে শেষ ম্যাচটাকে আনুষ্ঠানিকতা বানিয়ে সিরিজ জিতে গেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর নেদারল্যান্ডস—টি–টোয়েন্টিতে যা টানা তৃতীয় সিরিজ জয়।
ফলাফলের দিকে তাকালে সন্তুষ্টির জায়গা থাকারই কথা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এমন জয় তো প্রত্যাশিতই ছিল। এশিয়া কাপের সপ্তাহখানেক আগের এই ম্যাচে ‘ভালোর’ জায়গা খুঁজলে বরং এই সিরিজে চোখ থাকা উচিত ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে। আলোচনা হওয়া উচিত ক্রিকেটাররা তাঁদের ভূমিকা কতটা পালন করতে পারছেন, তা নিয়ে। তাতে কালও ‘পাস মার্ক’ই পেয়েছেন তাঁরা।
দ্বিতীয় ম্যাচে যেমন বাংলাদেশের জন্য বাড়তি তৃপ্তির কারণ হতে পারে রিশাদ হোসেন ও শরীফুল ইসলামের জায়গায় একাদশে ঢোকা দুই ক্রিকেটার তানজিম হাসান ও নাসুম আহমেদের পারফরম্যান্স। ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নাসুম, ৩ ওভারে ১৬ রানে ১ উইকেট তানজিমের। বড় টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেটারদের পরখ করে নেওয়াই তো এই সিরিজের মিশন হওয়ার কথা বাংলাদেশের।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দুই ম্যাচেই টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিয়ে কেন ব্যাটসম্যানদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলো, এই প্রশ্ন জাগতেই পারে। এর একটা ব্যাখ্যা অবশ্য ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরের জানিয়ে দেওয়া মনোভাব থেকেই পাওয়া যায়। প্রতিপক্ষ যে–ই হোক, আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাংলাদেশ তাই ভেবেছে জয়ের কথাই। কিন্তু কথাটা বাংলাদেশ দল সত্যিই সত্যিই বিশ্বাস করে কি না, কে জানে—হুট করে সিরিজটা আয়োজনের মূলে তো এশিয়া কাপের আগের প্রস্তুতিই!
প্রথম ম্যাচের মতো কালও ব্যাট করতে নেমে ডাচরা শুরুর অল্প কিছুক্ষণ ভালো একটা সংগ্রহ দাঁড় করানোর আভাসই দিচ্ছিলেন। কিন্তু দুই ওভার স্থায়ী সেই ‘ভালো’তে ১৪ রান করার পরই শুরু হয় ধস। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই ২ উইকেট নিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দেন নাসুম। ম্যাক্স ও’ডাউড ও তেজা নিদামানারুকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। স্কট এডওয়ার্ডস তা হতে দেননি। তবে ওই পর্যন্তই, ১১ বল খেলে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক।
মোস্তাফিজ তাঁকে বিদায় করে দেওয়ার আগেই আরও এক উইকেট পেয়ে গেছে বাংলাদেশ—বিক্রমজিৎ সিংকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। দশম ওভারে আবার দুই উইকেট হারালে ইনিংসের মাঝপথে নেদারল্যান্ডস ৬ উইকেটে ৬২।
সেখান থেকে বাকি ব্যাটসম্যানদের করার ছিল সামান্যই। আরিয়ান দত্তের ২৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানের ইনিংসে নেদারল্যান্ডস এক শ পেরোয়। ১৭.৩ ওভারে তারা অলআউট হয় ১০৩ রানে। এমন অল্প রান তাড়ায় নেমে কালও স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল, কত দ্রুত ম্যাচটা শেষ করা যায়। ওই পথে ব্যাটসম্যানরা কেমন করেন, দেখার ছিল তা–ও। তানজিদ হাসানের সঙ্গে পারভেজ হোসেনের উদ্বোধনী জুটিই টি–টোয়েন্টি সংস্করণে এখন থিতু। তাঁদের জুটি এদিন ৪০ রানের।
২১ বলে ২৩ রান করে বিদায়ের আগে পারভেজ নিজের নাম সবার ওপরে তুলে দিয়ে যান বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে এক পঞ্চিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি (২২) ছক্কার রেকর্ডে। তাঁর সঙ্গী তানজিদ হাসান পরে রেকর্ডটা ছাড়িয়ে গেছেন, করেছেন হাফ সেঞ্চুরিও। ৪০ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত তানজিদকে সঙ্গী করে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক লিটন (১৮ বলে ১৮)।
জয়ের আনন্দ সবকিছুই হয়তো ভুলিয়ে দেয়—তবে দুই ম্যাচের কোনোটিতেই নামার সুযোগ না পেয়ে ড্রেসিংরুমে বসে থাকা ব্যাটসম্যানদের একটু আক্ষেপ কি থাকল এই ম্যাচ শেষে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেদারল্যান্ডস: ১৭.৩ ওভারে ১০৩ (আরিয়ান দত্ত ৩০, বিক্রমজিৎ ২৪, শারিজ ১২; নাসুম ৩/২১, মোস্তাফিজ ২/১৮, তাসকিন ২/২২, তানজিম ১/১৬, মেহেদী ১/২৪)।
বাংলাদেশ: ১৩.১ ওভারে ১০৪/১ (তানজিদ ৫৪*, পারভেজ ২৩, লিটন ১৮*; ক্লাইন ১/২০)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩–ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২–০–তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।