যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল কেন জাতীয় সংগীত গায় না

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দলছবি: রয়টার্স

জাতীয় সংগীত নিয়ে আবারও বিতর্কের জন্ম দিল যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল। কাল নারী বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীত গাননি যুক্তরাষ্ট্র দলের ৬ নারী ফুটবলার।

সামাজিক বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় গলা মেলাননি তাঁরা। এ ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চারপাশ থেকে সমালোচনা ধেয়ে আসছে খেলোয়াড়দের দিকে। তবে একজন দাঁড়িয়েছেন খেলোয়াড়দের পাশে—চেক বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র এবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে। তবে গ্রুপ পর্বেই দলটি আলোচনায় জাতীয় সংগীতের কারণে। নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে গত শনিবার ভিয়েতনামের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও দলটির ৬ ফুটবলার জাতীয় সংগীতে গলা মেলাননি। ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে ম্যাচে অ্যান্ডি সুলিভান, সোফিয়া স্মিথ, নাওমি গিরমা, এমিলি ফক্স, ট্রিনিটি রডম্যান ও ক্রিস্টাল ডান দেশের জাতীয় সংগীত বাজার সময় বুকে হাত রাখেননি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ওই ছয়জনই চুপ ছিলেন।

ভিয়েতনামের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও যুক্তরাষ্ট্র নারী ফুটবল দলের কয়েকজন খেলোয়াড় জাতীয় সঙ্গীত গাননি
ছবি: রয়টার্স

সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা, যেমন বর্ণবাদ, নারীদের প্রতি বৈষম্য, পুলিশি নির্যাতন—এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মাঠে জাতীয় সংগীত বাজার সময় চুপ করে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দলের জন্য নতুন কিছু নয়। নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্ডার নাওমি গিরমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তবে জাতীয় সংগীত বাজার সময় নীরব থাকার কারণটা তিনি পরিষ্কার করে বলেননি, ‘মাঠে নামা মানে তো ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়েই নামা। কিন্তু সেটাই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না।’ এ সপ্তাহের শুরুতে গিরমা বলেছিলেন, ‘সব খেলোয়াড়েরই পছন্দ-অপছন্দ আছে।’

আরও পড়ুন

তবে খেলোয়াড়দের এই নীরব প্রতিবাদকে ‘লজ্জা’র এবং ‘অসম্মানজনক’ বলছেন অনেকেই। সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান সংবাদকর্মী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মেগান কেলি। কাল যুক্তরাষ্ট্র দল মাঠে নামার আগে কেলি বলেছিলেন, খেলোয়াড়দের আচরণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ‘দ্য মেগান কেলি শো’ অনুষ্ঠানে তিনি খোঁচা মেরেছেন এভাবে, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, তাদের (খেলোয়াড়) চোখে অন্তত আমেরিকান নারী হিসেবে নারীবাদ ও নারীর ক্ষমতায়ন হলো দেশকে ঘৃণা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ের কোনো আসরে জাতীয় সংগীত না গেয়ে নিজেকে ও দেশকে খাটো করতে হবে। জাতীয় সংগীত বাজার সময় অনেকে বুকেও হাত রাখেনি, যার অর্থ হলো দূরত্বটা অনেক বেশি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর নিকি হ্যালেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নারী দল “আমেরিকান ড্রিম”–এর মধ্যে আছে। বিশ্বের সবচেয়ে স্বাধীন ও সুবিচারসম্পন্ন দেশে তারা জন্মেছে। নিজেদের কাজের (খেলা) মাধ্যমে তারা এর পুরস্কারও পেয়েছে। এই আর্শীবাদটুকু তাদের মনে রাখা উচিত এবং পরেরবার ছেলে ও মেয়েরা যেন জাতীয় সংগীত গায়।’

আরও পড়ুন

১৮ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় নাভ্রাতিলোভা অবশ্য সুলিভান-গিরমাদের পাশে দাঁড়িয়ে জবাব দিয়েছেন নিকি হ্যালেকে। বলেছেন, ‘নিজেদের নিংড়ে বেশির ভাগ সময় জিতেই তারা এটা (দেশের সম্মান) রক্ষা করছে; গান গেয়ে নয়। যেখানে কোনো সমস্যা নেই, সেখানে সমস্যা না খুঁজে সমাধান নিয়ে কথা বলা উচিত।’

২০১৬ সালে জাতীয় সংগীত না গেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র নারী দলের কিংবদন্তি মেগান র‌্যাপিনো। পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাগবি খেলোয়াড় কলিন কায়েপারনিক হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানানোর পর তাঁকে সমর্থন জানিয়ে ওই কাজ করেছিলেন র‌্যাপিনো।

পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছিল, জাতীয় সংগীত বাজার সময় হাঁটু গেড়ে বসা যাবে না। কিন্তু ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে জাতীয় সংগীত বাজার সময় যুক্তরাষ্ট্র নারী দলের একজন ফুটবলার বাদে সবাই হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও পুরুষ ফুটবলারদের সমান বেতন পাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে বিরোধ ছিল জাতীয় দলের নারী ফুটবলারদের। এ নিয়ে মামলাও হয়েছিল, যা পরে নিষ্পত্তিও হয়।