রোনালদোর ‘মিথ্যা’ ধরা পড়ল বিশেষজ্ঞের চোখে
স্প্যানিশ টিভি শো ‘এল চিরিনগুইতো’য় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দাবি, ‘আমি সর্বকালের সেরা কমপ্লিট খেলোয়াড়। ক্রিস্টিয়ানো পরিপূর্ণ নন বলাটা হবে মিথ্যার নামান্তর। আপনি পেলে, মেসি, ম্যারাডোনাকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন।’
ড্যারেন স্ট্যানটনকে না–ও চিনতে পারেন। ইংল্যান্ডের এই ভদ্রলোক ‘হিউম্যান লাই ডিটেক্টর’ ও শরীরী ভাষার বিশেষজ্ঞ। পর্তুগিজ কিংবদন্তির সাক্ষাৎকারটি তিনি দেখেছেন। দেখার পর স্ট্যানটনের দাবি, রোনালদো নিজেকে সর্বকালের সেরা হিসেবে দাবি করার সময় তাঁর শরীরী ভাষায় সেটির প্রকাশ ছিল না। অর্থাৎ রোনালদো নিজ মুখে কথাটা বললেও তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করেন না বলে দাবি করেন স্ট্যানটন। সহজ কথায়, রোনালদো মুখে যা বলেছেন, তাঁর শরীরী ভাষা সেটি মিথ্যা দাবি করেছে। স্পোর্টস বেটিং কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম ওলবিজিতে এ দাবি করেন স্ট্যানটন।
সর্বকালের সেরা নিয়ে বিতর্কটা আজকের নয়। এক দশকের বেশি সময় ধরে সেরার প্রশ্নে উত্তরটা অনেকের কাছেই লিওনেল মেসি ও রোনালদোয় এসে ঠেকেছে। মেসি ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে রোনালদোর চেয়ে এগিয়ে রাখেন। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৯২৩ গোল করা রোনালদো এর আগেও নিজেকে সেরা হিসেবে দাবি করেছেন। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে দাবিটি আবারও তুলেছেন আল নাসর তারকা।
সবচেয়ে ‘কমপ্লিট’ খেলোয়াড়ের প্রশ্নে রোনালদো নিজেকে মেসি, পেলে ও ম্যারাডোনার চেয়ে এগিয়ে রেখে জুতার ফিতা বেঁধেছেন। ওই মুহূর্ত নিয়ে স্ট্যানটন বলেছেন, ‘সে যা বলেছে, তার সঙ্গে শরীরী ভাষা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার মনে হয় না যে সে বিশ্বাস করে সে-ই সর্বকালের সেরা। আমার মতে, সে সামনে যা বলছে, ভেতরে তা নয়।’
স্ট্যানটনের ব্যাখ্যা, ‘(রোনালদোর) চোখের পলক ফেলা বেড়েছে, যেটা উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কাঁধ ঝাঁকানো কিংবা মেকি হাসি। নিজের আবেগ লুকোনোয় সে খুব একটা দক্ষ নয়। মুখে সে যা–ই বলার চেষ্টা করুক না কেন, আবেগটা বেরিয়ে আসেই। ব্যক্তিত্বের কিছু বিষয়ে অনিরাপদ বোধ করার জন্য এমন হতে পারে।’
সাক্ষাৎকারে নিজেকে নিয়ে রোনালদো আরও বলেছেন, ‘আমি এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে কখনো কখনো নিজের অর্জন ভুলে যাই। কারণ, প্রতিবছর আরও ভালো করার প্রেরণা পাই এতে। আমার মতে, অন্যদের সঙ্গে এখানেই আমার পার্থক্য। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ১০ বছর আগেই ফুটবল ছেড়ে যেত। আমি আলাদা। এ নিয়ে তর্কের সুযোগ নেই।’ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তাঁর আরও একটি যুক্তি, ‘ইতিহাসের সেরা গোল স্কোরার কে? এটা সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। মাথা, বাঁ পা, পেনাল্টি ও ফ্রি–কিকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে কে? সেদিন দেখছিলাম, আমি বাঁ পায়ের ফুটবলার না হয়েও ইতিহাসে বাঁ পায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে শীর্ষ দশে আছি। মাথা, ডান পা এবং পেনাল্টিতেও, সবকিছুতে।’
রোনালদোর সাক্ষাৎকার নিয়ে স্ট্যানটন তাঁর ব্যাখ্যায় আরও বলেছেন, ‘রোনালদো সত্যিই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। সে তখন বেশ রাগান্বিত ছিল। আমার মনে হয়, যতটা সম্মান পাওয়ার যোগ্য সে, ততটা পায় না বলে মনে করে। আমরা মেকি হাসি দেখেছি, যেটা সেকেন্ডেরও কম সময় স্থায়ী হয়েছে। যেটা আসলে রাগের বহিঃপ্রকাশ। সুখের হাসির উল্টোটা। চোখের ভ্রু দুটো একসঙ্গে উঠেছে এবং তির্যকভাবেও তাকিয়েছে। আমার মনে হয় না কিংবদন্তিদের মধ্যে যে জায়গাটা সে প্রাপ্য বলে মনে করে, সেখানে অধিষ্ঠিত হওয়া থেকে কেউ তাকে আটকে রাখতে পারবে বলে সে মনে করে না। কিন্তু বিপরীত বাস্তবতাটা হলো, তাকে দেখে এমন মানুষ মনে হয়, যার বিশেষ কিছু জায়গায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে।’