ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবে যাওয়ার আগপর্যন্ত দেশটির ফুটবল লিগ নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ ছিল সামান্য। কিন্তু রোনালদো ২১ কোটি ডলারে আল–নাসরে নাম লেখানোর পর রাতারাতি বদলে যায় পুরো চিত্র। রোনালদোর কারণে ফুটবল বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে আল–নাসর ও সৌদি লিগ। বলা বাহুল্য, অন্য ক্লাবগুলোর চেয়ে আল–নাসরকে ঘিরে আগ্রহ ছিল বেশি।

আল–নাসর নিয়ে এমন মাতামাতি হয়তো সহ্য হয়নি সৌদি লিগের সবচেয়ে সফল ক্লাব আল–হিলালের। অল্প সময়ের মধ্যে ক্লাবটির পক্ষ থেকে লিওনেল মেসিকে ৩০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেওয়ার খবর সামনে আসে। সে সময় এই খবরের সত্যতা আল–হিলাল স্বীকার না করলেও এরপর থেকে মেসির সঙ্গে জড়িয়েই ছিল তাদের নাম। পরে জানা যায়, মেসির জন্য রেকর্ড ৪০ কোটি ডলার খরচ করতে প্রস্তুত ক্লাবটি।

আরও পড়ুন

মেসির সৌদি–গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন আল–হিলাল কোচ

এরপর সাম্প্রতিক সময়ে মেসির সৌদি আরব ভ্রমণের পর আল–হিলাল আরও প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনায় আসে। কদিন আগে বার্তা সংস্থা এএফপি মেসির সৌদি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির খবরও প্রকাশ করে। তারা ক্লাবের নাম উল্লেখ না করলেও অনেকে আর্জেন্টাইন মহাতারকার সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে আল–হিলালকেই ধরে নিয়েছিল। পরে অবশ্য মেসির ঘনিষ্ঠজনতাঁর বাবা হোর্হে মেসি এই খবর ‘মিথ্যা’ বলে বিবৃতি দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মেসিকে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা আল–হিলাল আসলে কারা? কী তাদের ইতিহাস ও অর্জন?

কিছুদিন আগে সৌদি আরবে গিয়ে ছবিটি তুলেছিলেন মেসি। পরে পিএসজি তাঁকে নিষিদ্ধ করে
ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সময়ে রোনালদোকে কেনায় আল–নাসরকে নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও সৌদি লিগের সবচেয়ে সফল ক্লাব কিন্তু আল–হিলালই। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করা এই ক্লাবটি শুধু সৌদি আরবেরই নয়, এশিয়ারও সফল ক্লাবগুলোর অন্যতম।

আরও পড়ুন

মেসি বিদায় নিলে পিএসজির যত ক্ষতি

সৌদি লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি তারা এই লিগে সবচেয়ে বেশি ১৮টি শিরোপা জিতেছে। এমনকি তারা রানার্সআপও হয়েছে ১৪ বার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮টি করে শিরোপা জিতেছে আল–নাসর ও আল ইত্তিহাদ। পাশাপাশি এশিয়ার সবচেয়ে বেশি ট্রফি জেতা ক্লাবও আল–হিলাল, জিতেছে ৬৫টি শিরোপা।

ঘরোয়া পর্যায়ে আল–হিলাল লিগ শিরোপার পাশাপাশি রেকর্ড ১৩ বার জিতেছে কিংস কাপ। বিলুপ্ত হওয়া ক্রাউন প্রিন্স কাপেও তারা সর্বোচ্চ ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া সৌদি সুপার কাপে রেকর্ড ৩ বার এবং ফেডারেশন কাপে রেকর্ড ৭টি শিরোপা জিতেছে আল–হিলাল।

সৌদি আরবে গত জানুয়ারিতে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন মেসি। ছবিটি তখন তোলা
ছবি: এএফপি

আর মহাদেশীয় পর্যায়ে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগেও রেকর্ড ৪টি শিরোপা আছে আল–হিলালের। এমনকি তাদের ৫ বার রানার্সআপ হওয়াও একটি রেকর্ড। আর গতবার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে রানার্সআপ হয়েছে আল–হিলাল। ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে কাঁপিয়ে ৫-৩ গোলে হেরেছে ক্লাবটি।

আরও পড়ুন

মেসির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে পিএসজি, খেলবেন আগামীকাল

এমন অর্জন থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পথ হারিয়েছে আল–হিলাল। সৌদি লিগে বর্তমানে পয়েন্ট তালিকার ৪ নম্বরে নেমে গেছে রিয়াদভিত্তিক ক্লাবটি। আল ইতিহাদ ও আল–নাসরের কারণে কিছুটা আড়ালেই যেন পড়ে গেছে তারা।

আরও পড়ুন

মেসির জন্য বছরে ৪৬১৯ কোটি টাকার প্রস্তাব সৌদির ক্লাব আল–হিলালের

শেষ পর্যন্ত মেসিকে নিতে পারলে আগামী মৌসুমেই বদল যেতে পারে দৃশ্যপট। শিরোপা লড়াইয়ে ফেরার সঙ্গে তারকাদ্যুতির কারণে বৈশ্বিক আগ্রহের কেন্দ্রেও চলে আসবে তারা। সেই সঙ্গে রোনালদোর আল–নাসরের সঙ্গে মেসির আল–হিলালের ম্যাচ ঘিরে ‘রিয়াদ ডার্বি’র লড়াইও বৈশ্বিক ফুটবল অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়াবে।