আগামীকাল (আজ) তাহলে ফেবারিট কোন দল?
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা শুনে হাসলেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা। সেই হাসিটা ধরে রেখেই বললেন, ‘যদি জানতাম, তাহলে তো ভালোই হতো। নিজেদের ফেবারিট ভাবতে পারলে তো আমার ভালোই লাগত। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রতিপক্ষ দলটার নাম রিয়াল মাদ্রিদ।’
সমস্যা আসলে ওই নামটাই—রিয়াল মাদ্রিদ। নইলে গার্দিওলার এই দলটা এই মুহূর্তে সম্ভবত ইউরোপের যেকোনো দলের বিপক্ষেই পরিষ্কার ফেবারিট। কিন্তু প্রতিপক্ষ রিয়াল এবং টুর্নামেন্টটা চ্যাম্পিয়নস লিগ বলেই সেই প্রবল প্রতাপশালী সিটির কোচকেও সংবাদ সম্মেলনে বারবার বলতে হয়েছে, ‘আমি জানি না (কেন চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল এত ভালো)। যদি জানতাম, তাহলে তো ওদের হারানোর উপায়ও বের করে ফেলতাম।’
‘ফাইনাল’ জিততে হলে অবশ্য আজ যেকোনোভাবে সেই উপায়টা বের করতেই হবে গার্দিওলাকে।
কাগজে-কলমে ম্যাচটা আসলে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের ফিরতি লেগ, যেখানে সিটির মাঠে অতিথি রিয়াল। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম লেগটা ১-১ সমতায় হওয়ার পরই দুই দল থেকেই পরের এই ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’ তকমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এ রকম ফাইনাল জিততে শুধু ভালো খেললেই হয় না, একটু-আধটু ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। গার্দিওলার আবার বার্সেলোনা ছেড়ে আসার পর থেকেই চ্যাম্পিয়ন লিগ-ভাগ্যের সঙ্গে একটু আড়ি চলছে। কে জানে, সেই অভিমানেই কি না, সিটি কোচ এটাও বললেন, ‘আমি আগামীকাল (আজ) ভাগ্যের সহায়তা চাই না। যে দল যোগ্য তারাই জিতুক, কোনো সমস্যা নেই। তবে আশা করছি সেই দলটা আমরাই হব।’
চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা রিয়ালের বিপক্ষে এই আত্মবিশ্বাসের একটা কারণ হতে পারে ঘরের মাঠে সিটির পারফরম্যান্স। সেটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ইতিহাদে ২০১৮ সেপ্টেম্বরের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের আর কোনো ম্যাচ হারেনি সিটি। লিওঁর বিপক্ষে ওই হারের পর এখন পর্যন্ত ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের ২৫টি ম্যাচ খেলেছে গার্দিওলার দল, জিতেছে ২৩টি। দুটি ড্র শাখতার দোনেৎস্ক ও স্পোর্টিং লিসবনের বিপক্ষে, যে দুই ম্যাচ আসলে ছিল ‘ডেড রাবার’, তার আগেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছিল সিটি।
এই পরিসংখ্যান কতটা ভালো, সেটা বোঝা যাবে প্রাসঙ্গিক আরও কিছু তথ্য দিলে। ঠিক এই সময়কালে রিয়াল মাদ্রিদ ঘরের মাঠে হেরেছে ৬টি ম্যাচ, ড্র করেছে ৪টি। লিভারপুল হেরেছে ৫টি, ড্র করেছে ৪টি। বায়ার্ন মিউনিখ হেরেছে ২টি, ড্র করেছে ২টি। বার্সেলোনা হেরেছে ৪টি, জুভেন্টাস ৬টি, পিএসজি ৫টি, চেলসি ৫টি। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে সিটি এতটাই অপ্রতিরোধ্য।
আরও একবার ইতিহাদে নিজেদের এই দাপটটা দেখাতে চান গার্দিওলা, ‘আমি শুনেছি সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করছি, সমর্থকদের একটা ভালো ম্যাচ উপহার দিতে পারব। এটা এখন আমাদের হাতে, আমাদের ওপর নির্ভর করছে সব। নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে, বাড়তি কিছু করার দরকার নেই।’
খেলোয়াড়েরা বাড়তি চাপ নিয়ে কিছু একটা গড়বড় করে ফেলুক, তা মোটেও চান না গার্দিওলা। রিয়াল মাদ্রিদ অবশ্য এ রকম কিছুর আশাতেই থাকবে। এমনিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে তারা যতই দাপুটে হোক, নকআউট পর্বে ঘরের মাঠে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর ফিরতি লেগে রিয়ালের পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয়। বার্নাব্যুতে নকআউট পর্বের প্রথম লেগে না জিতেও ফিরতি লেগ জিতে রিয়াল পরের রাউন্ডে গেছে নয়বারের মধ্যে মাত্র দুইবার—২০০০ ও ২০১৩ সালে।
কাকতালীয়ভাবে সেই দুইবারই প্রতিপক্ষ দলটার নামের প্রথম অংশে ‘ম্যানচেস্টার’ ছিল।
নামের পরের অংশটা অবশ্য ‘সিটি’ নয়, ‘ইউনাইটেড’।