নেইমারকে জাতীয় দলে ফিরতে কী করতে হবে, বললেন আনচেলত্তি
২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কে?
অবশ্যই নেইমার। কিন্তু ফিটনেসের সমস্যায় ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড এখন জাতীয় দলের বাইরে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ব্রাজিলের সমর্থকেরা নেইমারের জাতীয় দলে ফেরার আশায় দিন গুনছেন। সে জন্য সান্তোস তারকাকে কী করতে হবে, তা বলেছেন ব্রাজিলের কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ইতালিয়ান এই কোচ মনে করেন, আগামী বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হতে পারেন নেইমার। সে জন্য তাঁকে সবার আগে জাতীয় দলে ফিরতে হবে। আর জাতীয় দলে ফিরতে হলে নেইমারকে প্রমাণ করতে হবে তাঁর ‘শারীরিক অবস্থা ভালো।’
নেইমার ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে। সে ম্যাচে হাঁটুতে এসিএলের মারাত্মক চোটে পড়েন। সবার প্রত্যাশা ছিল গত জুনেই ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জাতীয় দলে ফিরবেন। কিন্তু তখন পাওয়া চোটে সেরে না ওঠায় সেবার আর তাঁর ফেরা হয়নি। এবার সেপ্টেম্বরের বিশ্বকাপ বাছাইয়েও নেইমারের ফেরার প্রতীক্ষায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু এবারও আনচেলত্তি ব্রাজিলের স্কোয়াড ঘোষণা করার আগে সান্তোসের অনুশীলনে চোট পান নেইমার। সে কারণে তাঁর জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষা আরও বেড়েছে।
সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিলের শেষ দুটি ম্যাচের জন্য আনচেলত্তির ঘোষণা করা স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার কারণ নিয়ে মুখ খুলে একটু বিতর্কও উসকে দিয়েছিলেন নেইমার। বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এই তারকা বাদ পড়ার পর সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন,‘আমাকে বাদ দেওয়ার কারণ ছিল সম্পূর্ণ কৌশলগত (টেকনিক্যাল)। শারীরিক অবস্থার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটা কোচের সিদ্ধান্ত, আর আমি তা সম্মান করি।’
কিন্তু আনচেলত্তি বলেছিলেন, প্রতিভা নয়, নেইমারের ফিটনেসই ঠিক করবে জাতীয় দলে তাঁর জায়গা আছে কি না।
এবার ইএসপিএন ব্রাজিলের সাংবাদিক পেদ্রো আলদেইদার সঙ্গে আলাপচারিতায় নেইমারকে নিয়ে আরও খোলামেলা কথা বলেছেন আনচেলত্তি, ‘নেইমার কেমন খেলে, আমরা অবশ্যই তা দেখব না। কারণ, সবাই তার প্রতিভা সম্পর্কে জানে। আধুনিক ফুটবলে তার প্রতিভাকে ব্যবহার করতে, তাকে ভালো শারীরিক অবস্থায় থাকতে হবে। সে যদি শারীরিকভাবে সেরা অবস্থায় থাকে, তাহলে জাতীয় দলে আসায় আমি সমস্যা দেখি না।’
আনচেলত্তি আরও বলেছেন, ‘নেইমারকে সবাই ভালো শারীরিক অবস্থায় জাতীয় দলে দেখতে চায়। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে বলেছি, “সেখানে (বিশ্বকাপে) থেকে দলকে সাহায্য করতে ও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চটা দিতে সেরা প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তোমার হাতে সময় আছে।”’
নেইমার এর আগে জাতীয় দলে আক্রমণভাগে ওয়াইড ও সেন্ট্রাল ভূমিকায় খেলেছেন। কিন্তু আনচেলত্তির যুক্তি, ওয়াইড ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতে যেমন শারীরিক সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়, সেটা এখন নেইমারের নেই, ‘প্যারাগুয়ের (জুনে) বিপক্ষে ম্যাচের আগে সে হোটেলে এসেছিল। তখন তার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়। সবকিছুই এখন পরিষ্কার এবং পরিকল্পনাও পাল্টায়নি। (আমি তাকে) অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কিংবা স্ট্রাইকারের ভূমিকায় খেলাব, মধ্যমণি হয়ে খেলতে হবে। সে বাইরে (ওয়াইড) খেলতে পারবে না; কারণ, আধুনিক ফুটবলে শারীরিক সামর্থ্যবান ফরোয়ার্ডের প্রয়োজন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সমস্যা ছাড়াই সে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে পারে।’
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে পঞ্চম হয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শেষ করেছে ব্রাজিল। গত জুনে এক বছরের চুক্তিতে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়া আনচেলত্তির হাত ধরে সে মাসেই ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় ব্রাজিল। আনচেলত্তি জানিয়েছেন, সুযোগ থাকলে ২০২৬ বিশ্বকাপের পরেও তিনি জাতীয় দলের কোচ হিসেবে থাকতে চান, ‘ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করানোটা বিশেষ ব্যাপার। আমি এক বছরের চুক্তি করেছি। আমার মতে, তখন এক বছরের চুক্তি করাটা সঠিক ছিল। সিবিএফ (বিশ্বকাপের পর) চালিয়ে যেতে চাইলে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
ব্রাজিলের কোচ হিসেবে আনচেলত্তির সময়টা যে ভালোই কাটছে, সেটাও বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘যেটা বলেছি, আমি এখানে (ব্রাজিলে) খুব সুখেই আছি। পরিবারও সুখে আছে। এটা (বিশ্বকাপের পরেও ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব পালন) নিয়ে ভাবার ও কথা বলার সুযোগ আছে। চালিয়ে যেতে আমার কোনো সমস্যা নেই। (২০৩০ পর্যন্ত থাকা) ব্যাপারটা ভালোই হবে।’