আর্জেন্টাইন গোলকিপারকে কাঁদাবে জাতীয় সংগীতের সুর

আর্জেন্টিনার গোলপোস্টে বড় ভরসা এমিলিয়ানো মার্তিনেজছবি: টুইটার

গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দারুণ ভুগিয়েছিলেন গোলকিপাররা। সেটি অনুমিতই ছিল। সের্হিও রোমেরোর পর একজন ভালো গোলকিপারের অভাবটা প্রকট হয়ে উঠেছিল। ফ্রাঙ্কো আরমানি, এস্তেবান আনদ্রাদা, উইলি কাবায়েরো, আগুস্তিন মার্চেসিন—কারও পারফরম্যান্সই সন্তোষজনক ছিল না।

গত বছরের কোপা আমেরিকার শিরোপার সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনা খুঁজে পেয়েছে এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা গোলবার নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত।

কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ‘মাইন্ড গেম’ খেলে আলোচিত হয়েছিলেন মার্তিনেজ। সেই সঙ্গে আটকেছিলেন তিনটি শট। শুধু সেমিফাইনাল কেন, গোটা কোপাতেই অ্যাস্টন ভিলার এই গোলকিপার ছিলেন দুর্দান্ত।

আরও পড়ুন

কাতারে বিশ্বকাপে দেশের হয়ে খেলতে নামতে মুখিয়ে মার্তিনেজ। তিনি মনে করেন, বিশ্বকাপে খেলাটা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ঘটনা, এমনকি কোপা আমেরিকা জেতার চেয়েও এটা বড় ঘটনা, ‘আমার মাথাতে এখন কেবল বিশ্বকাপই। আমি শুধু বিশ্বকাপ নিয়েই ভাবছি। বিশ্বকাপ খেলাটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা ঘটনা।’

প্রিমিয়ার লিগে কিছুটা চোট ছিল তাঁর। সেটি কাটিয়ে উঠেই বিশ্বকাপ খেলবেন মার্তিনেজ। আজ রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রীতি ম্যাচটি খেলবে আর্জেন্টিনা।

আরও পড়ুন

মার্তিনেজকেও দেখা যাবে এ ম্যাচে। তবে তাঁর শয়নে–স্বপনে এখন কেবলই বিশ্বকাপ। তিনি অপেক্ষায় আছেন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচটির জন্য। ২২ নভেম্বর সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ।

বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে ঠোঁট মেলানোটা হবে দারুণ আবেগময় ঘটনা, ‘সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচটি বিশ্বকাপে আমার জীবনের প্রথম ম্যাচ। সে ম্যাচে যখন আর্জেন্টাইন জাতীয় সংগীত বেজে উঠবে, সেটি হবে খুব আবেগময় ব্যাপার। আমার ঠিক সেই মুহূর্তে বাবার মুখ মনে পড়বে। আর আমার চোখে থাকবে আনন্দাশ্রু। আমার ও আমার পরিবারের জন্য ওই মুহূর্ত হবে ভীষণ আবেগের, ভীষণ গর্বের।’

আরও পড়ুন

গত বছর মার্তিনেজের বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। মার্তিনেজ তাঁর উত্থানের বছরে খুব বড় মানসিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন, ‘গত বছর বাবাকে হারাতে বসেছিলাম। তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত বছরটা আমার জন্য খুবই কঠিন একটা বছর ছিল। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে আমি উঠে এসেছি। বিশ্বকাপ আমার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। তবে আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই।’

১৯৭৮ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার জন্য এরপরের সব বিশ্বকাপই দুঃস্বপ্নের। বিশেষ করে ২০১৪—সেবার মেসির নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে হেরে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তার আগে ১৯৯০ বিশ্বকাপেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ হারিয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।

আরও পড়ুন

ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছিল এক বিতর্কিত পেনাল্টি গোলে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় হয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১০ সালে। ২০০২ সালে তো আর্জেন্টিনা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। চার বছর আগে ফ্রান্সের কাছে হেরে মেসিদের বিশ্বকাপ-যাত্রা থেমেছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে।

এই বিশ্বকাপগুলো মার্তিনেজের কাছে ছিল দুঃসহ যন্ত্রণার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সময় তাঁর জন্মই হয়নি। সেই স্মৃতিও হাতড়েছেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার, ‘১৯৮৬ সালে আমার জন্মই হয়নি। জ্ঞান হওয়ার পর যতগুলো বিশ্বকাপ দেখেছি, প্রতিবারই কাঁদতে হয়েছে। বিশ্বকাপ আসলে কখনোই আনন্দের স্মৃতি নয় আমার কাছে।’

আরও পড়ুন

এবার বিশ্বকাপ জেতার জন্য নিজ দলকে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করেন মার্তিনেজ, ‘আমাদের দলে বিশ্বের সেরা ফুটবলার আছে। তাই আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ আছে। আমরা সর্বশেষ ৩৫ ম্যাচ হারিনি। সেটি আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। অতীতে আমরা দুটি বিশ্বকাপ জিতেছি। এবার তৃতীয়টি জিততে চাই।’