১৯৭৯ সালে মাত্র ১২ বছর ১১ মাস বয়সে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ৪৬ বছর পরও আবার চ্যাম্পিয়ন—এই দুই অর্জনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
নিয়াজ মোরশেদ: প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। পাঁচ বছর পর এবার সপ্তমবার জিতলেও আনন্দ কম নেই। তবে এই শিরোপাটা আমার জন্য বোনাস।
বোনাস কোন দিক দিয়ে?
নিয়াজ: আমি এখন আর নিয়মিত খেলি না। তবে দাবা চর্চার মধ্যে আছি। আমার লক্ষ্য ছিল আগামী বছর উজবেকিস্তানে দাবা অলিম্পিয়াডে জাতীয় দলে জায়গা পেতে প্রথম পাঁচজনে থাকা। চ্যাম্পিয়ন হব, এমন আশা বা লক্ষ্য কোনোটাই ছিল না।
বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশি বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দুটি রেকর্ডই আপনার। এই গর্বের সঙ্গে কি তরুণ প্রতিভাদের উঠে আসতে না দেখে কোনো আক্ষেপও হয়?
নিয়াজ: অবশ্যই আক্ষেপ আছে। এই বয়সে আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ঠিক হয়নি। সর্বকনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বেশি বয়সে আর কোনো দেশের জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আছে বলে মনে হয় না। এবার তরুণদের কারও চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত ছিল।
গত আসরে ১৪ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মনন রেজা এবার চতুর্থ। তরুণেরা কেন সাফল্য ধরে রাখতে পারছেন না?
নিয়াজ: ওঠানামা থাকতেই পারে, এটা স্বাভাবিক। পরের টুর্নামেন্টে মনন ভালো করবে না, কে জানে! মনন-ফাহাদদের সাম্প্রতিক সময়ে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে, এটাও মনে রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমানের এবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি। কিন্তু শেষ রাউন্ডে অখ্যাত খেলোয়াড়ের কাছে হেরে টানা চতুর্থবার রানারআপ হয়েছেন। তরুণেরা কি প্রত্যাশার চাপ সামলাতে পারছেন না?
নিয়াজ: ফাহাদ শেষ রাউন্ডে ভেঙে পড়েছে, চাপ সামলাতে পারছে না। এটা দেশে-বিদেশে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। কম পরিচিত প্রতিপক্ষকে ঠিকভাবে পড়তে না পারার ভুল করেছে সে পরশু, মানসিক অস্থিরতায় ভুগেছে, যেটা খুব বিপজ্জনক। এখান থেকে ফাহাদকে বেরুতে হবে।
অন্যদের কেমন দেখলেন?
নিয়াজ: ফিদে মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা বেশ ভালো খেলে তৃতীয় হয়েছে। বয়স কম, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। পড়োশোনা, বাবাকে হারানো—নানা কারণে তাহসিনের খেলার মান কমেছে। সুব্রত বিশ্বাস নিরাশ করেছে। ভেবেছিলাম, সেরা পাঁচে থেকে সে জাতীয় দলে আসবে। বড় ম্যাচে ভালো না করায় পারেনি।
একসময় জাতীয় দাবায় পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টার খেলেছেন। এবার শুধু আপনিই খেললেন। তরুণদের সামনে আপনি ছাড়া তো আদর্শও সেভাবে নেই...
নিয়াজ: আমরা গ্র্যান্ডমাস্টাররা শেষের দিকে, আমাদের গণনাতেই ধরা উচিত নয়। সে দিক থেকে তরুণদের আরও ভালো মানে পৌঁছানো উচিত ছিল। তারাই দেশকে সামনে নেবে। কিন্তু একসময় আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারত না যেসব দেশ, তারা এখন আমাদের চেয়ে ভালো। আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি।
তরুণদের জন্য আপনার উপস্থিতি এখনো অনুপ্রেরণার। দাবা নিয়ে আপনার নিজের পরিকল্পনা কী?
নিয়াজ: এখন ব্যস্ততা তেমন নেই। তাই অন্তত আগামী বছর সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াড পর্যন্ত খেলে যেতে চাই। অলিম্পিয়াডে খুব ভালো খেলার ইচ্ছা আমার। ডিসেম্বরে ঢাকায় লিগে খেলব, বিদেশে ওয়ার্ল্ড র্যাপিডে খেলব। তবে নভেম্বরে ঢাকায় জিএম টুর্নামেন্টে খেলব না।
১৭ বছর ধরে দেশে গ্র্যান্ডমাস্টার আসছে না। অনেক সমস্যার মধ্যেও কাছাকাছি সময়ে কোনো সম্ভাবনা দেখছেন?
নিয়াজ: ফাহাদ-মননরা ভালোভাবে চেষ্টা করলে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। ফাহাদের একটি গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম আছে, করোনার সময় সে আরও নর্ম করে ফেললে ভালো হতো। এখন বিশ্বজুড়েই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া আগের চেয়ে কঠিন। কারণ, সব দেশের দাবাড়ুদেরই রেটিং কমছে। ভারতের মতো দেশ গত এক বছরে মাত্র তিনজন গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছে (মোট ৮৯ জন)। ফাহাদ-মননদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে।