স্যার গ্যারি সোবার্স এবং এক অদ্ভুত সাক্ষাৎকার

গ্যারি সোবার্সের দেখা পাওয়া এবং তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিকের জন্য বিরল অভিজ্ঞতাই বলা যায়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর কাভার করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর। সোবার্সের জন্মদিনে ১৬ বছর আগে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারটি পড়লে পাঠকও কিছুটা ধারণা পাবেন, কেন তিনি অন্য সবার চেয়ে আলাদা।

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি—রোববার রাতে স্যার গারফিল্ড সোবার্স আন্তর্জাতিক স্কুল টুর্নামেন্টের ডিনার পার্টিতে যাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল, সোমবার সকালে কি সেই লোকটার সঙ্গেই কথা বলছি!

রোববার রাতের গ্যারি সোবার্স হাস্যময়, সদালাপী। একটু বেশি পান-টান করে কথা বলার অবস্থায় নেই বলে প্রায় ক্ষমাপ্রার্থনার মতো করে দুঃখ প্রকাশও করলেন। পরদিন সকালে বারবাডোজের হোটেল সাভানায় গেলে ভালোভাবে কথা বলা যাবে—এই প্রস্তাবটাও তাঁরই। সে অনুযায়ীই সকাল সাড়ে সাতটায় সেখানে হাজির। অথচ এ যেন অন্য সোবার্স!

তাঁর সাক্ষাৎকারের আশায় ভিনদেশি সাংবাদিককে স্কুল দলগুলোর কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েক বসে টুর্নামেন্টের নিয়মকানুনের ব্যাখ্যা শুনতে দেখেছেন, তারপরও তিনি বেঁকে বসলেন। বারবাডোজের পর্যটন বিভাগের শুভেচ্ছাদূত সাক্ষাৎকার দিতে রাজি, ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার নন। নাছোড়বান্দার মতো লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎকারটা হয়েছিল বটে, তবে বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা উপহার দিয়ে। একটু পরপরই রেগে উঠলেন সোবার্স, রুক্ষ গলায় ধমকও দিলেন একাধিকবার।

অভিজ্ঞতাটা শোনার পর বারবাডোজের পরিচিত সাংবাদিক জানালেন, সোবার্স টাকাপয়সা ছাড়া সাক্ষাৎকার দেন না। হতেও পারে। নইলে সাক্ষাৎকার শেষে তাঁর আত্মজীবনী টোয়েন্টি ইয়ার্স অ্যাট দ্য টপ-এ অটোগ্রাফ দিতে দিতে কেন বলবেন, ‘আমার সব কথা এই বইয়ে লেখা আছে। পত্রপত্রিকায় তা ছাপা হয়ে গেলে মানুষ কেন বই কিনবে?’

২০০৯ সালে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় সোবার্সের সঙ্গে সেই কথপোকথনটা হুবহু তুলে দেওয়ার কারণ, নইলে ব্যাপারটা বোঝানো যেত না।

গ্যারি সোবার্স: আমি ক্রিকেট নিয়ে কোনো ইন্টারভিউ দিতে চাই না। কী না কী প্রশ্ন করবেন…মুশকিলে পড়ে যাব...

উৎপল শুভ্র:

না, না, আমি আপনাকে মুশকিলে ফেলার মতো কোনো প্রশ্ন করব না। আপনার সামনে আমি যত না সাংবাদিক, তার চেয়ে বেশি ফ্যান!

গ্যারি সোবার্স (মুখে রাজ্যের বিরক্তি): বলুন, কী বলতে চান!

খেলোয়াড়ি জীবনে স্যার গ্যারি সোবার্স
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ
উৎপল শুভ্র:

স্কুল টুর্নামেন্ট নিয়ে আপনাকে খুব ব্যস্ত দেখছি। এটা তো আর সব সময় থাকে না। দিনকাল কীভাবে কাটে আপনার?

গ্যারি সোবার্স: আমি বারবাডোজ পর্যটন বোর্ডের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর মে মাসের শেষে ইংল্যান্ডে গিয়ে চার-পাঁচ সপ্তাহ থেকে এই টুর্নামেন্টটার প্রচারের কাজ করি। এর বাইরে যেকোনো খেলাধুলাসংক্রান্ত কার্যক্রমে পর্যটন বোর্ডের ওরা আমার পরামর্শ চায়।

আরও পড়ুন
উৎপল শুভ্র:

বিশ্ব ক্রিকেটে কী হচ্ছে না-হচ্ছে সেই খেয়াল তো নিশ্চয়ই রাখেন। খেলা-টেলা দেখেন নিয়মিত?

গ্যারি সোবার্স: না, খুব একটা না। আমি নিজে অনেক ক্রিকেট খেলেছি, সারা জীবন কি তা নিয়েই পড়ে থাকব নাকি! তা ছাড়া টানা ছয় ঘণ্টা বসে থেকে ক্রিকেট দেখাটা আমার ধাতেই নেই। হয়তো কখনো সকালে মাঠে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক থাকলাম, লাঞ্চের সময় বেরিয়ে এসে পছন্দের অন্য কাজ করি। বেশির ভাগ সময় যাই কোনো না কোনো দলকে শুভেচ্ছা জানাতে। অনেক দলের সঙ্গে পুরোনো দিনের খেলোয়াড়েরা আসে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই।

উৎপল শুভ্র:

গত পরশু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যেভাবে মিশলেন, তা দেখে তো আমি রীতিমতো অভিভূত! আপনার তুলনায় কিছুই নয়, এমন অনেক ক্রিকেটারকেও এতটা আন্তরিক দেখিনি। আপনি কি এমনই?

গ্যারি সোবার্স: আমাকে স্টার বলুন, সুপারস্টার বলুন, মানুষ-ই তা বানিয়েছে। আমি নিজে তো আর তা বানাইনি। সারা জীবন যেভাবে চলেছি, সেটা বদলানোর কথা কখনো আমার মাথায়ই আসেনি। আমি আর দশজন মানুষের মতোই। কী অর্জন করেছি না-করেছি, তাতে কি খুব বেশি কিছু আসে যায়? আমি সারা জীবন একই রকম আছি। যখন বেড়ে উঠছি, তখন যেমন সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতাম, বন্ধুর মতো মিশতাম, এখনো আমি তা-ই করি।

আরও পড়ুন
জীবনে যা কিছু পেয়েছি, বাল্যে-কৈশোরে তা কল্পনাও করিনি। কখনো এটাও কল্পনা করিনি যে লোকজন আমাকে দেখতে এমন হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এর সবকিছুর জন্য আমি নিজেকে ধন্য মানি। কিন্তু মানুষ আমি যা ছিলাম, তা-ই আছি।
গ্যারি সোবার্স
উৎপল শুভ্র:

স্যার এভার্টন উইকস বলছিলেন, গ্যারি সোবার্স যত বড় ক্রিকেটার, মানুষ হিসেবে তার চেয়েও বড়। এটা তো অনেক বড় কমপ্লিমেন্ট!

গ্যারি সোবার্স: ওহ, এভার্টন (এই প্রথম একটু হাসি)! এমন বলার কারণ একটাই। মানুষ দেখে, আমার সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায়। আমি কথায়-কাজে আন্তরিক ও সৎ। আমার মধ্যে কোনো ভড়ং নেই। বানিয়ে বলছি কি না, আপনি খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারেন। জীবনে যা কিছু পেয়েছি, বাল্যে-কৈশোরে তা কল্পনাও করিনি। কখনো এটাও কল্পনা করিনি যে লোকজন আমাকে দেখতে এমন হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এর সবকিছুর জন্য আমি নিজেকে ধন্য মানি। কিন্তু মানুষ আমি যা ছিলাম, তা-ই আছি।

কেনসিংটন ওভালের সামনে সোবার্সের ভাস্কর্য
সিপিএল
উৎপল শুভ্র:

আপনাকে বলা যায় ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র কমপ্লিট ক্রিকেটার। আপনি নিজে কোন কীর্তিটি নিয়ে গর্ব বোধ করেন?

গ্যারি সোবার্স: কোনো অর্জন নিয়েই আমার গর্ব নেই। শুধু ক্রিকেট কেন, অন্য অনেক কিছুকেই আমি অর্জন হিসেবে দেখতে চাই। ইংল্যান্ডে গিয়ে বার্বাডোজের পর্যটনের জন্য কাজ করা যেমন, এই কাজটা আমি খুব উপভোগ করি। আরও কয়েক বছর তা করে যেতে চাই। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারছি—এর সবকিছু মিলেই আমার ক্যারিয়ার। বার্বাডোজের ছোট্ট একটা বাড়িতে জন্ম নেওয়া বালকের কল্পনাতেও তো এসব ছিল না। ঈশ্বরের কাছে এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি যেটা বলতে পারি, জীবনের প্রায় সবকিছু্ই আমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি।

আরও পড়ুন
আমার সবচেয়ে স্মরণীয় অর্জন বলে মনে করি, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টকে। যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল, আমি আমার কাজিনের (ডেভিড হলফোর্ড) সঙ্গে জুটি বেঁধে আর কোনো উইকেট পড়তে দিইনি। শেষ দিন ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচটা বাঁচিয়েও ছিলাম আমরা
গ্যারি সোবার্স
উৎপল শুভ্র:

তারপরও এত সব ক্রিকেটীয় কীর্তির মধ্যে এমন একটাও কি নেই, যেটিকে আপনি সবার ওপরে রাখেন?

গ্যারি সোবার্স: এত বেশি যে একটি বেছে নেওয়া খুব কঠিন। আমি যা কিছু করেছি, তাতে সবচেয়ে তৃপ্তির ব্যাপার যদি বলেন তা হলো সবই করেছি আমার দলের জন্য। আমি সব সময় একটা জিনিস মেনে ক্রিকেট খেলেছি, আমি নিজে গুরুত্বপূর্ণ নই, গুরুত্বপূর্ণ হলো দল। আমি দলের লক্ষ্য পূরণের একটা হাতিয়ার মাত্র। আমি যা কিছু অর্জন করেছি, ক্রিকেট মাঠে যখন যা করতে চেয়েছি, সব সময়ই আগে দল এসেছে, তারপর আমি। আমার সবচেয়ে স্মরণীয় অর্জন বলে মনে করি, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টকে। যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল, আমি আমার কাজিনের (ডেভিড হলফোর্ড) সঙ্গে জুটি বেঁধে আর কোনো উইকেট পড়তে দিইনি। শেষ দিন ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচটা বাঁচিয়েও ছিলাম আমরা (প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানে পিছিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার অপরাজিত ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ২৭৪ রান তুলেছিলেন সোবার্স ও হলফোর্ড)। জাতীয় বীর বলে বিবেচিত হওয়া, নাইটহুড পাওয়া এসবও দারুণ অর্জন। এসব পাব বলে কোনো দিন ভেবেছিলাম নাকি! হয়তো লোকে ভেবেছে, আমি আমার দেশকে সারা বিশ্বে পরিচিত করেছি। খেলার এটাই দারুণ একটা দিক, ক্রীড়াবিদেরা তার দেশকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারে।

উৎপল শুভ্র:

আপনার অসংখ্য ক্রিকেটীয় কীর্তির মধ্যেও কিছু আলাদা হয়ে আছে। যেমন থ্রি সিক্সটি ফাইভ, এক ওভারে ছয় ছক্কা...

গ্যারি সোবার্স: না, না, আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।

এক ফ্রেমে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স ও ক্লাইভ লয়েড
এএফপি
আরও পড়ুন
উৎপল শুভ্র:

অবশিষ্ট বিশ্বের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫৪, যেটিকে ডন ব্র্যাডম্যান অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেরা ইনিংসের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন...

গ্যারি সোবার্স: হ্যাঁ, আমার কাছে এসবের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো, আমার দলের যখন এমন কিছুর দরকার ছিল, সৌভাগ্যক্রমে আমি তা করতে পেরেছি। তবে ছয় ছক্কা নিয়ে লোকজনের এত মাতামাতি আমাকে অবাকই করে। আরে, ওভারে ছয় ছক্কা কোনো ক্রিকেট হলো নাকি! আমি তরুণ খেলোয়াড়দের সব সময়ই বলি, ছয় ছক্কা সঠিক ক্রিকেট নয়। ওই ম্যাচে তখন আউট হলে দলের কিছু আসত যেত না বলেই আমি চালিয়েছিলাম, লেগে গেছে। এসব হঠাৎই হয়ে যায়।

উৎপল শুভ্র:

৩৬৫ তো একটু আলাদা হয়ে থাকার কথা। ২৮তম টেস্ট ইনিংসে প্রথম সেঞ্চুরি আর সেটিই বিশ্ব রেকর্ড!

গ্যারি সোবার্স: রেকর্ড আমার কাছে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। আমি অনেক রেকর্ড করেছি, কিন্তু রেকর্ড করব ভেবে খেলিনি। এসবকে কখনো বড় কিছু বলেও ভাবিনি। আমি বিশ্বাস করি, রেকর্ড কখনোই এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে কোনো খেলোয়াড় রেকর্ড ভাঙবে বলে দলকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। রেকর্ড করেও যদি দলের উদ্দেশ্য সাধন হয়, তাহলে ঠিক আছে। আমি অধিনায়কদের খেয়াল রাখতে বলব, কোনো খেলোয়াড় রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করতে গিয়ে যেন দলকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। দল সবার আগে। আমার ভাগ্য ভালো, আমার রেকর্ডের ম্যাচে দল জিতেছে। দলের যেটা চাওয়া, সেটি পূরণের পথে আমার রেকর্ড বাধা হয়নি বলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি।

সোয়ানসিতে ১৯৬৮ সালে সোবার্স এক ওভারেই মেরেছিলেন ৬ ছক্কা
ফাইল ছবি
উৎপল শুভ্র:

ক্রিকেট ইতিহাসে এত খেলোয়াড়ের মধ্যে স্যার গ্যারি সোবার্স ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যান যেন আলাদা একটা শ্রেণি। শুধু ব্যাটিং বিবেচনায় হয়তো স্যার ডন এগিয়ে, আবার ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং মিলিয়ে আপনি। সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তাহলে কে?

গ্যারি সোবার্স: আমি কোনো তুলনাতেই যাব না। স্যার ডনকে আমি খেলতে দেখিনি, তাই আমার পক্ষে তুলনা করা কঠিন। তবে ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড তো আছে এবং সেটিই তাঁর হয়ে কথা বলে। সেটি বলে, তিনি অবশ্যই অবিশ্বাস্য একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন, আউট অব দিস ওয়ার্ল্ড!

আরও পড়ুন
উৎপল শুভ্র:

ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে নিশ্চয়ই আপনার অনেকবার দেখা হয়েছে, কথাবার্তাও।

গ্যারি সোবার্স (উত্তেজিত হয়ে): না, না, আপনি একটু বেশি জিজ্ঞেস করে ফেলছেন। আমি আমার জীবন নিয়ে কথা বলব না, বলার পরও আপনি একটা থেকে আরেকটা বিষয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি ভেবেছিলাম, আপনি আমার সঙ্গে বার্বাডোজ নিয়ে কথা বলবেন। এখন তো দেখছি, সারা বিশ্ব নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন!

উৎপল শুভ্র:

স্যার, আমি কি আপনাকে বিতর্কিত কিছু জিজ্ঞেস করেছি? রেগে যাচ্ছেন কেন, কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিতে চাইলে দেবেন না।

গ্যারি সোবার্স (রাগত ভঙ্গিতে): স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমি যখন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলতে যাই, তাঁর সঙ্গে আমার ভালো ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। অমন একজন গ্রেট লোকের দেশে গিয়ে তাঁর রাজ্য দলে খেলা এবং তাঁর সঙ্গে অমন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠা আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। এটা সারা জীবন আমার সঙ্গী হয়ে থাকবে।

উৎপল শুভ্র:

মেলবোর্নে অবশিষ্ট বিশ্বের হয়ে আপনার ২৫৪ রানের সময় ব্র্যাডম্যান নাকি...

গ্যারি সোবার্স: দেখুন, আপনি কিন্তু আবারও আমাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন...

আরও পড়ুন
শেবাগের ব্যাটিং দেখতে আমি খুব পছন্দ করি। ওকে দেখলে আমার ওরেল-উইকস-ওয়ালকটদের কথা মনে পড়ে যায়। খেলাটা যেভাবে খেলা উচিত, ও ঠিক সেভাবেই খেলে। টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ানডে ক্রিকেট, যে ধরনের ক্রিকেটই হোক না কেন, ও একইভাবে খেলে। খেলাটা এভাবেই খেলা উচিত বলে আমি ওকে খুব পছন্দ করি।
গ্যারি সোবার্স
ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগের ব্যাটিং খুব পছন্দ করতেন সোবার্স
ফাইল ছবি
উৎপল শুভ্র:

আচ্ছা, আচ্ছা এটা বাদ। বর্তমান ক্রিকেটে এমন কেউ কি আছে, যার খেলাটা আপনি উপভোগ করেন?

গ্যারি সোবার্স: আগেই তো বললাম আমি খুব বেশি ক্রিকেট দেখি না। ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকারের কথা মনে আসছে। এরপর আরও অনেক ভালো খেলোয়াড় এসেছে, যেমন ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন। ও হ্যাঁ, শেবাগ! শেবাগের ব্যাটিং দেখতে আমি খুব পছন্দ করি। ওকে দেখলে আমার ওরেল-উইকস-ওয়ালকটদের কথা মনে পড়ে যায়। খেলাটা যেভাবে খেলা উচিত, ও ঠিক সেভাবেই খেলে। টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ানডে ক্রিকেট, যে ধরনের ক্রিকেটই হোক না কেন, ও একইভাবে খেলে। খেলাটা এভাবেই খেলা উচিত বলে আমি ওকে খুব পছন্দ করি। বল জিনিসটাই হলো মারার—টেস্ট হোক বা ওয়ানডে—ওটাকে মারো। অনেকেই টেস্ট ক্রিকেটটাকে আলাদা খেলা ভেবে শট খেলতে ভুলে যায়, উইকেটে থাকতে হবে মন্ত্র জপ করে বাজে বলও আস্তে করে ঠেলে দেয়। শেবাগ এমন নয়, এ কারণেই আমি ওর গুণমুগ্ধ। ও দুর্দান্ত এক খেলোয়াড়।

উৎপল শুভ্র:

কোনো বোলারই আপনার কাছে পাত্তা পায়নি জানি। তারপরও যাদের খেলেছেন, তাদের মধ্যে সেরা মানেন কাকে?

গ্যারি সোবার্স: লুক, লুক, লুক, আপনি কিন্তু বেশি করে ফেলছেন। বারবার আমার জীবনে ঢুকে পড়তে চাইছেন...

উৎপল শুভ্র:

জীবন নিয়ে কী বললাম, আমি তো ক্রিকেটেই থাকছি!

গ্যারি সোবার্স (মহা উত্তেজিত): আমি মনে করি যথেষ্ট হয়েছে। এরপর আপনি জানতে চাইবেন কে সেরা ফিল্ডার?

উৎপল শুভ্র:

না, না তা কেন...

গ্যারি সোবার্স (চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে): আমার খেলা সেরা ফাস্ট বোলার ফ্রেডি ট্রুম্যান আর সেরা স্পিনার ভারতের সুভাষ গুপ্তে নামে একজন। হয়েছে আপনার?

উৎপল শুভ্র:

স্যার গ্যারি...

গ্যারি সোবার্স (প্রায় চিৎকার করে): দ্যাটস্ এনাফ। দ্যাটস্ এনাফ।

আরও পড়ুন