মারিউপোলে রাশিয়ার কাছে ৯৫৯ ইউক্রেনীয় সেনার আত্মসমর্পণ

ইউক্রেনীয় সেনাদের বহনকারী প্রায় এক ডজন বাসকে মারিউপোল শহরের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যেতে দেখা যায়। ১৬ মে সন্ধ্যায়ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার নিচের বাংকার ও টানেল থেকে ৮০ জন আহতসহ মোট ৯৫৯ ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ বুধবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, গত সোমবার থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন। খবর রয়টার্স ও এএফপির।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের আজভ রেজিমেন্টের সদস্যসহ ৬৯৪ সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৯ জন আহত সেনা রয়েছেন।

কয়েক সপ্তাহের মরিয়া প্রতিরোধের পর গতকাল মঙ্গলবার মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার ২৫০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা জানায় রাশিয়া। গত সোমবার এই সেনারা আত্মসমর্পণ করেন। অবশ্য বুধবার আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

রয়টার্স জানায়, এ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অবরোধের ইতি ঘটল। এর মধ্য দিয়ে হোঁচট খাওয়া এই সামরিক অভিযানে বিরল বিজয় দাবির সুযোগ পেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর দাবি, তাদের হামলায় ২৭০ জন জাতীয়তাবাদী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গত সোমবার দিনের শেষ দিকে রুশ সাঁজোয়া যানের পাহারায় একটি বাসের বহর আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যায়। পাঁচটি বাস রুশ–নিয়ন্ত্রিত শহর নভোয়াজভস্কে পৌঁছায়। আহত যোদ্ধাদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের আজভস্তাল গ্যারিসনের সেনাদের বহনকারী আরও সাতটি বাস দোনেৎস্কের কাছে রুশ–নিয়ন্ত্রিত ওলেনিভকা শহরে একটি কারাগারে পৌঁছায় বলে রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

দুই পক্ষই বলেছে, একটি চুক্তির অধীনে সব ইউক্রেনীয় ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যাবে। তবে চুক্তির অনেক কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কত সেনা সেখানে অবস্থান করছেন, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি। বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়েছে কি না, সেটাও বলা হয়নি।

আরও পড়ুন

ক্রেমলিন বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বন্দীর সঙ্গে আচরণ করার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ বন্দীদের বিনিময়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনা হবে।

ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক বলেছেন, আহত সেনাদের অবস্থা স্থিতিশীল হলে বন্দী বিনিময়ের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবে কিয়েভ।

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি এ নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র বার্তাকে এত বেশি উপায়ে প্রকাশের উপায় ইংরেজিতে আছে কি না, আমি জানি না। মারিউপোলের আজভ নাৎসিরা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে।’

আরও পড়ুন

রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে ২০১৪ সালে উগ্র ডানপন্থী স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়াদের নিয়ে আজভ রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিজেদের ফ্যাসিবাদী বা নাৎসি বলতে নারাজ তাঁরা। ইউক্রেন জানিয়েছে, সংস্কার আনার মাধ্যমে আজভ রেজিমেন্টকে ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। মার্চের শুরুতে রুশ বাহিনীর অগ্রগামী সেনারা দক্ষিণাঞ্চলীয় মারিউপোল শহরটি ঘিরে ফেলেন। এর পর থেকে আজভ রেজিমেন্ট, ন্যাশনাল গার্ড, পুলিশ, আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ কয়েক শ ইউক্রেনীয় সেনার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় আটকা পড়েন।

আরও পড়ুন

রাশিয়া বলেছে, যোদ্ধাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আচরণ করা হবে। তবে একজন জ্যেষ্ঠ রুশ রাজনীতিবিদ বলেছেন, নাৎসি অপরাধীদের বিনিময় করা উচিত নয়। এদিকে কিয়েভে এক রুশ সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার গতকাল বুধবার শুরু হওয়ার কথা। ভাদিম শিশিমারিন নামের ওই সেনার বিরুদ্ধে একজন নিরস্ত্র বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিককে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ এনেছে। এক বিবৃতিতে মস্কো বলেছে, মারিউপোলে আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের রুশ বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করাকে ইউক্রেনের পক্ষে উদ্ধার হিসেবে তুলে ধরছেন জেলেনস্কি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা স্পুতনিক রেডিওকে বলেছেন, কিয়েভের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মানবাধিকার কর্মসূচির অধীনে এসব সেনাকে উদ্ধার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইস্পাত কারখানা থেকে তাদের বের করার পরিকল্পনা ছিল রাশিয়ার। এ কথা তারা স্বীকার করছে না।

এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে গতকাল ইউক্রেনে তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলের সোলেডার এলাকায় ওই হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের ভাড়াটে সেনাদের ওপরেও হামলা করেছে রুশ বাহিনী। এ হামলায় ইউক্রেনের সু-২৪ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে।

রুশ হামলায় ইউক্রেনের যুদ্ধাস্ত্র ও বিমানবিধ্বংসী এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ইউক্রেনের ৭৬টি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, ৪২১ সেনা, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এম ৭৭৭ হাউটজার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে।