আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে ইডি অফিসে বিরোধীদের অভিযাত্রায় বাধা

১৮টি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবন থেকে মিছিল নিয়ে ইডি অফিসে যেতে চাইলে মিছিলের গতি রোধ করে দিল্লি পুলিশ
ছবি: পিটিআই

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি নিয়ে ভারতের বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কার্যালয় অভিমুখে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, দিল্লি পুলিশের বাধায় সেই কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে। তবে বিরোধীরা বলেছে, মিছিল করে ইডি অফিসে যেতে পুলিশ বাধা দিলেও সংসদ সদস্যরা ছোট প্রতিনিধিদল নিয়ে যাবেন। তাঁদের দাবিপত্র জমা দেবেন। ইডি ব্যবস্থা নিতে রাজি না হলে বোঝা যাবে সংস্থাটি স্রেফ সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সম্পদ বৃদ্ধির মারাত্মক অভিযোগ আনা হয়। ঘটনা তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবিতেও সরব বিরোধীরা। তবে সরকার এই দাবি মানতে নারাজ। আলোচনাতেও রাজি নয়। এতে সংসদের অধিবেশনেও অচলাবস্থা চলছে। আজ বুধবার ১৮টি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সে দাবি জানাতে ইডি অফিসে মিছিল করে যাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে বিজয় চক পৌঁছালে মিছিলের গতি রোধ করে দিল্লি পুলিশ। পুলিশ জানায়, পুরো এলাকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পণ্ড হলেও আইন অমান্য না করে দেড় ডজন বিরোধী দলের এসব সংসদ সদস্য আবার সংসদ ভবনে ফেরত যান। তবে ফেরার আগে তাঁরা জানান, ইডির ওপর চাপ সৃষ্টি জারি থাকবে। সরকারি আনুকূল্যে আদানিদের সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে জেপিসি গঠনের দাবিও অব্যাহত থাকবে।

একদিকে আদানি তদন্তে বিরোধীদের সমস্বর দাবি, অন্যদিকে বিদেশে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপির পাল্টা চাপে বুধবারও সংসদ অচল থাকে। এই অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টায় বিরোধী সংসদ সদস্যরা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল শুরু করেন। মোদি–আদানি সম্পর্ক, জেপিসির তদন্তসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিরোধী সংসদ সদস্যরা বিজয় চক পর্যন্ত যেতে পারেন। ততক্ষণে সেখানে একের পর এক ‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলে দিল্লি পুলিশ।

ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয় ইডি অফিসের সামনেও। লাউডস্পিকারে পুলিশ বলতে থাকে, ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সংসদ সদস্যরা সংসদে ফিরে যান। আইন অমান্য না করে বিভিন্ন দলের নেতা গণমাধ্যমকে তাঁদের বক্তব্য জানিয়ে সংসদে ফিরে যান। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘২০০ সংসদ সদস্যকে ঠেকাতে দুই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সরকার আমাদের কণ্ঠরোধ করে মুখে বলছে গণতন্ত্রের কথা। সমালোচনা করলেই দেশদ্রোহীর তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

ইডি অফিসে জমা দেওয়ার জন্য বিরোধী সংসদ সদস্যরা যে চিঠি লিখেছেন তাতে বলা হয়েছে, ইডি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে অথচ যে সম্পর্ক দেশের অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক, তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতেও তারা আগ্রহী নয়। চিঠিতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, বিদেশে শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ ঢেলে অনৈতিকভাবে শেয়ার মূল্য বাড়ানো হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার ভুল চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সরকারি আনুকূল্য নিয়ে আদানি গোষ্ঠী কীভাবে মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতিয়েছে, কীভাবে তাদের ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎ প্রকল্পের০ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়ম বদলানো হয়েছে, গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পকে এসইজেড (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সময় নষ্ট না করে ইডি এসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করুক। বিরোধী নেতারা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইডির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তদন্তের দাবি জানানোর পরও ইডি তা না মানলে দেশবাসী বুঝে যাবে কেন ও কী কারণে তারা তা করছে না। তখন তা প্রচার করা হবে।

আরও পড়ুন

বুধবার সকালে বিরোধী নেতাদের বৈঠকে মিছিল করার সিদ্ধান্ত হয়। শারদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সংসদ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা মিছিলে ছিলেন না। কংগ্রেসের উদ্যোগে শামিল হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসও। যদিও আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে তারাও গলা মিলিয়েছে।

জবাব দেবেন রাহুল: খাড়গে

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তোলা যাবতীয় অভিযোগের জবাব রাহুল গান্ধী নিজেই দেবেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বুধবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির অভিযোগ, রাহুলের মোদি–বিরোধিতা ক্রমেই দেশ–বিরোধিতায় পরিণত হয়েছে। বিজেপি চাচ্ছে রাহুল ক্ষমা চান। কিন্তু তিনি ক্ষমা চাইবেন না। বিদেশে তিনি দেশের গণতন্ত্রের হাল নিয়ে কথা বলেছেন, যা সত্যি তা বলেছেন। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। রাহুল বুধবার বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরেছেন।

আরও পড়ুন