মামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়
রমা দুওয়াজি—ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচিত হওয়া জোহরান মামদানির স্ত্রী। জোহরান নির্বাচনে জিতে যতটা পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন, ঠিক ততটাই মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছেন রমা নিজেও।
সব ঠিক থাকলে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি শপথ নেবেন জোহরান মামদানি। তিনি হবেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম, ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নেওয়া এবং ১৮৯২ সালের পর সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। একই সঙ্গে রমা হবেন নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি।
রমার বয়স ২৮ বছর। পেশায় শিল্পী। অ্যানিমেশন ও ইলাস্ট্রেশনের কাজ করেন তিনি। সিরীয় অভিবাসী পরিবারে তাঁর জন্ম। রমার ওয়েবসাইটে বলা আছে, তাঁর কাজ বেশির ভাগ ডিজিটাল মাধ্যমে দেখা যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য নিউইয়র্কারসহ বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলোয় তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়ে আসছে।
গত এপ্রিলে ওয়াইইউএসজিতে এক সাক্ষাৎকারে রমা বলেছিলেন, তাঁর শৈল্পিক কাজগুলো মূলত গভীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। ‘আজকাল আমি আমার অভিজ্ঞতা ও পছন্দের বিষয় নিয়ে শিল্পসৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেছি,’ বলেন রমা।
১৯৯৭ সালের ৩০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে জন্ম রমার। নিউইয়র্ক টাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরীয় মা–বাবার সঙ্গে রমা মাত্র ৯ বছর বয়সে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পাড়ি জমান।
পরে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে ফেরেন রমা। ভর্তি হন ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে অবস্থিত ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করেছেন রমা। লেবানন ও ফ্রান্সে শিল্পীদের জন্য নির্ধারিত আবাসেও ছিলেন তিনি।
২০২১ সালে রমা নিউইয়র্কে থিতু হন। ভর্তি হন নিউইয়র্ক স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টসে। সেখান থেকে ২০২৪ সালে তিনি ফাইন আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
একই বছরের অক্টোবরে জোহরান–রমার বাগ্দান হয়। আর পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। নিউইয়র্কে সেই অনুষ্ঠান হয়। গত জুলাইয়ে জোহরান মামদানির জন্মস্থান উগান্ডার কাম্পালায় অভিজাত এলাকা বুজিগা হিলে তাঁদের বিবাহ–পরবর্তী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়।
কথিত আছে, ২০২১ সালে একটি ডেটিং অ্যাপে এই যুগলের পরিচয়। পরে এক সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি নিজেও এ গুঞ্জনের কথা স্বীকার করে নেন।
জোহরান মামদানি যখন থেকে মেয়র পদে নির্বাচনী প্রচারে নামেন, রমা পাশে থেকে তাঁর স্বামীকে জোরালো সমর্থন দিয়ে গেছেন। অনলাইনে বিরোধী পক্ষের ট্রলের শিকার হতে হয়েছে রমাকে।
গত মে মাসে জোহরান মামদানি ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনলাইনে চলা ট্রল ও রাজনৈতিক আক্রমণের বিষয়ে কথা বলেন। তরুণ এই রাজনীতিক লেখেন, এখন ডানপন্থী ট্রলকারীরা তাঁর (রমা) বিরুদ্ধে লেগেছে।
স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে জোহরান মামদানি আরও লেখেন, ‘রমা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী। নিজের মতো করে পরিচিতি পাওয়ার যোগ্যতা তাঁর আছে। আপনি আমার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমার পরিবারের নয়।’
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। এবারের নির্বাচনে বাঘা রাজনীতিক আর সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী। ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়া সেই কুমোকে হারিয়ে বাজিমাত করেন সদ্য ৩৪ বছরে পা দেওয়া জোহরান মামদানি।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে বিজয় ভাষণ দেন জোহরান। বক্তব্যে তিনি সমর্থকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ট্রাম্পকে খোঁচা দেন। এ সময় স্ত্রী আর মা–বাবাকেও মঞ্চে ডেকে নেন তিনি। তখন আবহ সংগীত হিসেবে বাজছিল বলিউডের শ্রোতাপ্রিয় ‘ধুম মাচালে’ গানটি।
জোহরানের মা ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। আর বাবা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। তাঁরা দুজনই জন্মগতভাবে ভারতীয়।