
ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুন। শুধুই কি একটি নাম? এই নামের পেছনে রয়েছে একজন সংগ্রামী, হার না–মানা, ধীরস্থিরভাবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে চলার সাহসী এক প্রত্যয়।
জীবনের সব প্রতিকূল পরিবেশ কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, রাবেয়া খাতুন তার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রতিটি উপন্যাস-কাহিনিবিন্যাস-প্রতিটি চরিত্র আমাদের সমাজেরই দর্পণ। তিনি নারী-পুরুষের বৈষম্য, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অদম্য লড়াকু মহীয়সী এক নারী। চাকরি, ঘরসংসার, চার শিশুসন্তানের সবকিছু দেখভাল করা, সাহিত্যচর্চা এবং সব সামাজিক দায়িত্ব পালনে জীবনযুদ্ধের বীর যোদ্ধা রাবেয়া খাতুন। তাঁর এই পথচলাতে একাই তিনি সারথি।
রাবেয়া খাতুন সবার প্রিয় ‘রাবেয়া খালা’। কথা বলতেন নিচু স্বরে। মানুষকে ভালোবাসা আর আপন করে নেওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা ছিল তাঁর। বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে খালার সঙ্গে আমার পরিচয়। স্নেহের বন্ধনে আমাকে বারবার কাছে টেনে নিয়েছেন। খালার লেখা বেশ কিছু ভালো নাটক প্রযোজনা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। রিহার্সেল–রেকর্ডিংয়ে চলে আসতেন। কিছুটা সময় কাটাতেন। শুধু তা–ই নয়, কলাকুশলী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আপ্যায়ন করা—সবার সঙ্গে আন্তরিক একটা সম্পর্ক ছিল তাঁর। সব মিলিয়ে অনবদ্য-অসাধারণ ব্যক্তিত্ব রাবেয়া খাতুন।
একবার নারীদের অনুষ্ঠান ‘ঘরে-বাইরে’ বইপত্র নিয়ে আলোচনায় সুসাহিত্যিক-সাংবাদিক রাবেয়া খাতুন এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সন্জীদা খাতুন অংশ নিয়েছিলেন। দুই দিকের দুই দিকপালের আলোচনায় অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল।
রাবেয়া খালা লেখার পাশাপাশি অনেক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মনে কষ্টের রক্তক্ষরণ আমরা কেউ দেখিনি। কাউকে কোনো দিন বলেননি। নীরবে জ্বলে আলো ছড়িয়েছেন চারপাশে। ফরিদুর রেজা সাগর-ফরহাদুর রেজা প্রবাল-কেকা ফেরদৌসী ও কাকলি—চার সন্তানকে একাই সুসন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুনের জীবন এক মহাকাব্য। কোনো এক লেখক তা বাস্তবায়ন করবেন—এই প্রত্যাশা রইল। অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা খালার জন্য। যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন—আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করি।
লেখক: অ্যাডভাইজার, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি