পুরস্কার: ৬৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসব

অন্য রকম প্রেমের ছবির জয়

চলচ্চিত্রবোদ্ধা, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুঞ্জন সত্যি করে ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালারই জিতল ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার। কানের সেরা ছবির খেতাব পাম’দর (ইংরেজিতে ‘গোল্ডেন পাম’) জিতেছে তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি পরিচালক আবদেললতিফ কেশিশের এই আলোচিত ছবি।খুব বিশদ যৌন দৃশ্যের জন্য উৎসবে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার। দুই অসমবয়সী নারীর প্রেম এর উপজীব্য।বিশ্বের অন্যতম নামকরা এই চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন হলিউডের খ্যাতিমান পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ।উৎসবের শেষ দিন গত রোববার স্টিভেন স্পিলবার্গ বলেন, বিচারকেরা সর্বসম্মতিক্রমেই ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালারকে সেরা ছবি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।উৎসবের প্রতিযোগিতা পর্বে অংশ নেয় ২০টি ছবি। স্টিভেন স্পিলবার্গ সেরা পুরস্কারের জন্য পরিচালক আবদেললতিফ কেশিশের পাশাপাশি নির্বাচিত করেছেন ছবির দুই তারকা আদেলে এক্সারশোপুলোস ও লিয়া সেদুকেও। এটা এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। আদেলে ও লিয়া পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠলে দর্শকসারি থেকে ব্যাপক ‘শাবাশ’ ধ্বনি ওঠে।তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে জন্মগ্রহণ করেন আবদেললতিফ কেশিশ। পুরস্কারকে তিনি উৎসর্গ করেন ফ্রান্সের তরুণ ও আরব বসন্তের বিপ্লবীদের জন্য। কেশিশ ২০০৩ ও ২০০৭ সালে ফ্রান্সের অস্কারখ্যাত ‘সিজার’ পুরস্কার জিতেছিলেন।শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার ঘোষণা করে স্টিভেন স্পিলবার্গ বলেন, ‘আমার কাছে এটি একটি চমৎকার প্রেমকাহিনি।...ছবিটির তরুণ অভিনেত্রীদের অসাধারণ কাজে আমরা একেবারেই বিমোহিত। ছবিটি দেখে আমরা বিব্রত বোধ করিনি। আর এটি একটি অসাধারণ প্রেমের গল্প বলেই আমরা তা দেখতে এসে বিব্রত বোধ করিনি, বরং এটি দেখতে আমন্ত্রিত হওয়ায় গর্বিত বোধ করেছি।’জুলি মারোর ফরাসি উপন্যাস লো ব্লু এ ইউন কোলোখ শোদ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার চলচ্চিত্রটি। কান উৎসবের ১২ দিন ধরেই দর্শক-সমালোচকদের মধ্যে আলোচনা চলে এটি নিয়ে। তবে চলচ্চিত্র সমালোচকদের মধ্যে এর ভালো-মন্দ নিয়ে দুই ধরনের মত দেখা গেছে।

পাশাপাশি পর্যবেক্ষকেরা উল্লেখ করতে ভোলেননি, ঘটনাচক্র যা-ই হোক, সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য বছরে পুরস্কৃত হলো ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার। স্বাগতিক ফ্রান্স সম্প্রতি বিশ্বের ১৪তম দেশ হিসেবে একই লিঙ্গের মানুষের বিয়ের আইন পাস করেছে। সে আইনের বিরুদ্ধে প্যারিসে একটি বড় বিক্ষোভের দিনই ৯০০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরের ঘন নীল উপকূলে এ পুরস্কারের ঘোষণা এল।

তবে কি ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার একটি সচেতন রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে? ছবির ১৯ বছর বয়সী অভিনেত্রী এক্সারশোপুলোস বলেন, ‘প্রথমত এবং মূলত ভালোবাসাই এ ছবির মূল বিষয়। তবে এটি যদি সহনশীলতার গুণগানে পরিণত হয়, তাহলে আরও ভালো।’

দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে দুই ভাই জোয়েল ও ইথান কোয়েনের ইনসাইড লেউইন ডেভিস ছবিটি। ১৯৬০-এর দশকের নিউইয়র্কে এক দুর্ভাগা লোকসংগীতশিল্পীর সংগ্রামের কাহিনি এটি। এর নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন নবাগত অস্কার আইজ্যাক। অন্য মূল অভিনেতারা হচ্ছেন ক্যারি মালিগান ও জাস্টিন টিম্বারলেক। কোয়েনজুটির চলচ্চিত্র বারটন ফিংক ১৯৯১ সালে কান উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জিতেছিল।

মেক্সিকোর নির্মাতা আমাত এসকালেন্তে উৎসবে এসেছিলেন তাঁর দেশের রক্তক্ষয়ী মাদককেন্দ্রিক সহিংসতার ছবি হেলি নিয়ে। তিনি জিতেছেন সেরা পরিচালকের শিরোপা। ফরাসি অভিনেত্রী বেরেনিস বেজো হয়েছেন এবারের সেরা অভিনেত্রী। ইরানি পরিচালক আসগর ফারহাদির পারিবারিক ড্রামা দ্য পাস্ট-এ প্যারিসবাসী এক বিপর্যস্ত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে এ সম্মান জিতেছেন বেজো। আর সেরা অভিনেতার মুকুট জিতেছেন হলিউডের সত্তর দশকের ‘সোনালি যুগের’ অন্যতম নামী তারকা ব্রুস ডার্ন। মন্দা যুগের কাহিনি নিয়ে আলেক্সান্ডার পেইনের ছবি নেব্রাস্কায় এক মাদকাসক্ত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৭৬ বছর বয়সী ডার্ন।

সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার হাতে বেরেনিস বেজো

এ টাচ অব সিন চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছেন চীনের জিয়া ঝাংকে। এতে আজকের চীনে চলমান ব্যাপক দুর্নীতি ও শোষণের দিক তুলে ধরেছেন ঝাংকে।জুরি প্রাইজ জিতেছে আবেগঘন জাপানি কাহিনিচিত্র লাইক ফাদার লাইক সান। জন্মের সময়ই অদলবদল হয়ে যাওয়া বালকদের নিয়ে ছবিটি বানিয়েছেন হিরোকাজু কোরিদা।জুরিবোর্ডে স্টিভেন স্পিলবার্গের সঙ্গে আরও ছিলেন নিকোল কিডম্যান, ক্রিস্টোফ ওয়ালটজ, বিদ্যা বালান ও অ্যাং লি। এএফপি ও বিবিসি।