আর কত মৃত্যু হলে টনক নড়বে
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি দিয়ে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে ‘সড়ক দুর্ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
খবরের শিরোনামগুলো এ রকম—বাবা-দাদির পর হাবিবের মৃত্যুও সড়কে; চোখের সামনে দুই বান্ধবীর মৃত্যু দেখে নির্বাক আরেকজন; শাহজাদপুরে বাসের ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু, মেয়ে আহত; বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে লাশ হলেন পাঁচ ভাই; সড়কে বছরে মৃত্যু ৬২৮৪।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি দিয়ে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে ‘সড়ক দুর্ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ করেছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর প্রগতি সরণির মধ্য বাড্ডা পদচারী সেতুর নিচে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলে, সড়কে প্রতিনিয়ত কেউ আহত হচ্ছে, বিকলাঙ্গ হচ্ছে, কেউ মারা যাচ্ছে। আর প্রশাসনের নির্লিপ্ততা বাড়ছে। প্রশাসনের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণেই সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। সরকার জনগণের জীবনের তোয়াক্কা করছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। অন্য দিকে চালকদের কর্মঘণ্টা ঠিক করা ও বেতন নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাঁর প্রশ্ন, আর কত মৃত্যু হলে সরকারের টনক নড়বে?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত সাড়ে তিন বছরে একাধিকবার আন্দোলনে নামেন। এরপরও সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি বদলায়নি। নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জনই ছিলেন শিক্ষার্থী।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকালের কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেসা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রগতি সরণিতে জড়ো হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ও আলোকচিত্রের পাশাপাশি তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সড়কে আর কত মৃত্যুর মিছিল’, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাও’ ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। শিক্ষার্থীরা সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ বলেও উল্লেখ করেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার তড়িঘড়ি করে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার আংশিক দাবি মানার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো বাসেই অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হয় না। তাঁরা সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ছুটির দিনে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষার্থী থাকে না। বিনা শর্তে সব গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করার দাবি জানান তাঁরা।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। টানা ৯ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। প্রথম দফা আন্দোলনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত ১৮ নভেম্বর থেকে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। আর ২৯ ডিসেম্বর রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম।
এরপর প্রায় ২০ দিন আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মানববন্ধন, প্রতীকী লাশের মিছিল, সড়কে স্বজনহারাদের সমাবেশ, প্রচারপত্র বিতরণ, সমাবেশের মতো নানা বিভিন্ন কর্মসূচি গত দুই মাস ধরে পালন করে আসছেন।
গতকালের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, বইমেলা হবে, বাণিজ্য মেলা হয়েছে। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন নিয়মিত মহড়া করছে। মার্কেট, শপিংমলে লোকজন যাচ্ছে। করোনা কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই!
আরও পড়ুন
-
ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের তোপ সামলানোই হবে ইরানের নতুন নেতৃত্বের বড় পরীক্ষা
-
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
-
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের খোঁজ পাওয়া যায়নি পাঁচ দিনেও
-
ইরানে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন এক আরোহী
-
মেসি–দি মারিয়াকে নিয়েই কোপা আমেরিকার প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা