Thank you for trying Sticky AMP!!

একক আইডিতে নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষণের চিন্তা

সম্পূর্ণ আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে এনআইডি তৈরির কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, সম্পূর্ণ আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজ করার পক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এটি হলে একটি একক আইডিতেই ভোটার তথ্য, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্টসহ একজন নাগরিকের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ২২ ধরনের তথ্য সংরক্ষিত হবে। তখন এসব কাজের জন্য আলাদা করে নিবন্ধন বা বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

এভাবে একক আইডিতে একজন নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এর আগে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠন করা একটি কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রতিবেদন দিয়েছেন। এখন তা করা হবে কি না, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এটি করা গেলে কাজ যেমন সহজ হতো, তেমনি আলাদা নিবন্ধনের জটিলতাও দূর হতো।

ইসির সঙ্গে সংযুক্ত থেকেই এই কাজ হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আলাদা কোনো শাখা বা দপ্তর হতে পারে। তবে অবশ্যই এই কাজে ইসির সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে এবং তাদের জবাবদিহি করতে হবে
এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

বর্তমানে এনআইডি তৈরির কাজ হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি ১৮ বছর বয়সী নাগরিকদের ভোটার করা এবং এনআইডি দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এখন ১০ থেকে অনূর্ধ্ব–১৮ বছর বয়সীদেরও এনআইডি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে পাসপোর্ট ও নাগরিকত্বের বিষয় দেখভাল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে হয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ। এ ছাড়া পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডির কাজটি করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন এ বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ জন্য অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতামত, আইনকানুন পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দেশে কীভাবে কাজটি করা হয়, তা পর্যবেক্ষণ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনে একেবারে আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে এ কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

একই সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়, এনআইডির কাজ কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্য কোনো দপ্তরের কাজ নয়। ইসির কাজ মূলত দেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ভোটার তালিকা করা। এটি করতে গিয়ে আইনানুযায়ী এনআইডির কাজটিও করছে তারা। কিন্তু নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য নিবন্ধনের কাজ আলাদা একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে হওয়া উচিত। বর্তমানে নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য নিবন্ধনের কাজ পৃথক মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন হওয়ায় নাগরিকদের অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটি কর্তৃপক্ষের অধীন একক আইডি নম্বরে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য নিবন্ধন করলে সবার জন্য ভালো হবে।

বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন আলাদা একটি কার্যালয়ের মাধ্যমে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’ কাজ চলছে। এটি আরও শক্তিশালী করা যায় বলে মনে করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আলাদা কর্তৃপক্ষের নাম কী হবে, সেটি সুনির্দিষ্ট না করলেও কমিটির মতে, এটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হতে পারে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আলাদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই এ কাজ হয় বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

অবশ্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এই প্রস্তাবের বিরোধী। তিনি বলেন, যেসব দেশে এভাবে কাজ হয়, সেখানে ইসিকে তথ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সমস্যা হয়। তাঁর পরামর্শ, ইসির সঙ্গে সংযুক্ত থেকেই এই কাজ হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আলাদা কোনো শাখা বা দপ্তর হতে পারে। সেই দপ্তর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেও থাকতে পারে। তবে অবশ্যই এই কাজে ইসির সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে এবং তাদের জবাবদিহি করতে হবে।