গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশে বেড়েছে এয়ারকন্ডিশনার বা এসির ব্যবহার। উন্নত জীবনযাত্রার চাহিদা আর সাধ্যের মধ্যে দাম দুটোই এর পেছনে বড় কারণ। এসি কেনার আগে কয়েকটি ব্যাপার জানা জরুরি। প্রথমেই আপনার ঘরের জন্য মানানসই এসি বেছে নিতে হলে বিভিন্ন রকম এসির নানা ধরনের কার্যক্ষমতার দিকটি মাথায় রাখতে হবে। এরপর খেয়াল রাখতে হবে দাম ও রক্ষণাবেক্ষণের খুঁটিনাটি বিষয়। সেসব নিয়েই এ লেখা।
কেনার আগে ও পরে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জানা দরকার এসির প্রকারভেদ সম্পর্কে। এসি সাধারণত দুই রকম হয়Ñমোনোব্লক আর স্প্লিট সিস্টেমস। মোনোব্লক এসিতে ইউনিটটি হয় এক ব্লকের। উইন্ডো এসি ও পোর্টেবল এসি মোনোব্লকের অন্তর্ভুক্ত। আর স্প্লিট সিস্টেমস এসির ইউনিট হয় দুই ব্লকবিশিষ্ট। এর ইনডোর ইউনিটটি শীতল বাতাসের উৎস আর আউটডোর ইউনিটের কাজ হলো বাতাস ঠান্ডা ও রিসাইকেল করা। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় চার ধরনের এসি সম্পর্কে জানা যাক।
পোর্টেবল এয়ারকন্ডিশনার লাগানোর জন্য আলাদা কোনো মাউন্টিং বা কাঠামোর প্রয়োজন হয় না। এর সঙ্গে এক ধরনের ফ্লেক্সিবল এক্সহস্ট পাইপ থাকে, যা জানালা বা দেয়ালে ছিদ্র করে ঘরের বাইরের দিকে নিতে হয়; কারণ চালু অবস্থায় এই এসিগুলো থেকে গরম ধোঁয়া নির্গত হয়।
পোর্টেবল এসির সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। এর কম্প্রেসারটি আলাদা ইউনিটে থাকে না, বরং এসির ভেতরেই থাকে। এ কারণে এসি চালালে বিকট শব্দ হয়। এ ছাড়া কম্প্রেসরের সাইজ ছোট বলে কার্যক্ষমতারও সীমাবদ্ধতা আছে।
আর সুবিধা হলো, এগুলো ইনস্টল করতে কোনো অতিরিক্ত জিনিসের প্রয়োজন হয় না এবং দামেও খুব সাশ্রয়ী। তা ছাড়া বেশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় এবং পোর্টেবল অর্থাৎ সহজে বহনের সুবিধা থাকায় এই এসিগুলো অনেকেরই পছন্দের।
অনেকেই উইন্ডো এসি বলেন ‘দেয়ালভেদী এয়ারকন্ডিশনার’। স্প্লিট এয়ারকন্ডিশনার আসার আগে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের অ্যাপার্টমেন্ট, বাসাবাড়ি এবং অফিসেও এ ধরনের এসি ব্যবহৃত হতো। ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এখনো উইন্ডো এসি বহুল প্রচলিত।
সাধারণ উইন্ডো এসি থেকে শুধু শীতল বাতাসই পাওয়া যায়। কিন্তু দামি উইন্ডো এসিতে হিট পাম্প মোড ও রিমোট কন্ট্রোলও পাওয়া যায়। পোর্টেবল এসির মতো এটিও চলার সময় শব্দ করে। এছাড়া অন্যান্য এসির তুলনায় এটিতে বেশি বিদ্যুৎশক্তি খরচ হয় এবং জানালায় বা দেয়ালে ইনস্টল করার সময় আলাদা মাউন্টিং বা প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্প্লিট এয়ারকন্ডিশনারগুলোর মধ্যে ওয়াল মাউন্টেড এসি সবচেয়ে জনপ্রিয়। স্টাইল, কার্যক্ষমতা এবং কার্যকারিতায়ও এই এসির বিভিন্ন ধরন বাজারে পাওয়া যায়। তবে এর ইনস্টলেশনের ধরন হলো ইঞ্জিনিয়ার ফিট, অর্থাৎ চটজলদি নিজের মতো লাগিয়ে নেওয়ার সুবিধা এতে নেই। সাধারণত ঘরের উঁচু স্থানে ওয়াল মাউন্টেড এসি লাগানো হয় এবং হিট পাম্প, টাইমার, রিমোট কন্ট্রোল, এয়ার পিউরিফিকেশনের মতো বেশকিছু অপারেটিং মোড ও ফিচার রয়েছে এতে।
বাড়ির বড় স্পেস বা কমার্শিয়াল স্পেসের জন্য সিলিং ক্যাসেট বা সিলিং সাসপেন্ডেড এসি উপযুক্ত। সিলিংয়ে লাগানো বা ঝুলে থাকা এ ধরনের এসি সাধারণত বিল্ডিংয়ের ভেতর দিয়ে আসা এয়ার পাইপে সংযুক্ত থাকে। নান্দনিক সৌন্দর্য ও কার্যক্ষমতা দুটোই পাবেন এতে। কারণ, এগুলো দেখতে আধুনিক আর জানালা বা মেঝে ভেদ করে ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না। এটি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন, তাই একটি সিলিং সাসপেন্ডেড এসি ৩-৪টি ওয়াল মাউন্টেড ইউনিটের সমান কাজ করতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল একটু বেশি গুনতে হবে। বিজ্ঞাপন বার্তা