Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় প্রথম ৫০০ মৃত্যু ৬৯ দিনে, পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ১৬ দিনে

>
  • করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১০১২ জন
  • যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারাই মৃত্যু বাড়ার প্রধান কারণ
  • সারা বিশ্বে প্রতিদিন মৃত্যু প্রায় ৩০০০

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় করোনায় মৃত্যুহার এখনো কম বাংলাদেশে। তবে দেশে করোনা শনাক্তের পাশাপাশি মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় দেশে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নিয়মিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে। আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত অনলাইন বুলেটিন থেকে জানানো হয়েছে, দেশে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১২ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৭ জন। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরের ৬৯তম দিনে ৫০০ ছাড়ায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। আর এরপর মাত্র ১৬ দিনেই মারা গেছেন ৫১১ জন।

গত মার্চে সব মিলিয়ে করোনায় মারা যান মাত্র ৫ জন। এপ্রিলে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩ জনে। এরপর মে মাসে মারা যান ৪৮২ জন। জুনে এটি লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এ মাসের মাত্র এক ভাগ সময়েই মারা গেছেন ৩৬২ জন। আরও দুই ভাগ সময় এখনো বাকি।

মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর মাস মার্চের প্রথম ১০ দিনে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। এপ্রিলের প্রথম ১০ দিনে মারা যান ২২ জন, আর মে মাসের প্রথম ১০ দিনে ৩ গুণ বেড়ে মারা যান ৬০ জন। জুনেও ৬ গুণ বেড়ে ৩৬২ জন মারা গেছেন করোনায়।

করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত তথ্য প্রদানকারী অনলাইন পোর্টাল ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, বিশ্বে এক দিনে সাড়ে ৮ হাজার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে এটি কমে এখন তিন হাজারে নেমে গেছে। অধিকাংশ দেশেই মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে। তবে বাংলাদেশে এখন বাড়ছে। করোনা শনাক্তের সংখ্যায় বিশ্বে ১৯তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। আর মোট মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২ নম্বরে। কিন্তু নতুন শনাক্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষ কয়েকটি দেশের মধ্যেই আছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে কোভিড-১৯–বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শনাক্ত রোগী বাড়ছে, ‍মৃত্যুও বাড়ছে। যত রোগী বাড়বে, তত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। এখনই হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না, অক্সিজেন দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বয়স্ক ও অন্যান্য রোগে ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা আক্রান্ত হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।

রোগী বেড়ে যাওয়া, চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, রোগীর জন্য হাসপাতালে শয্যার অপ্রতুলতা, অক্সিজেন ঘাটতি এবং বয়স্ক ও অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় মৃত্যু বাড়ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে শুরুর দিকে ৬০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকলেও দিন দিন এটি বদলে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা। এ বয়সীদের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার কম হলেও মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।

৫ জুন মৃত্যুর বয়সভিত্তিক একটি হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ করোনা রোগী মারা গেছেন। ১০ বছরের কম বয়সীরাও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। তবে এটি ১ শতাংশের কম।

চীনের উহানে প্রথম ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি যৌথ প্রতিবেদন বলছে, চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ভারতেও মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ ৬০ বছরের বেশি বয়সী। ইতালি, জার্মানিতেও বয়স্ক ব্যক্তিরাই মারা গেছেন ৮০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মৃত ব্যক্তির বয়স ও লৈঙ্গিক পরিচয় দিলেও মৃত্যুর কারণ, উপসর্গ বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। জেলাওয়ারি করোনা শনাক্তের সংখ্যা বলা হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয় শুধু বিভাগওয়ারি। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় মৃত্যুর হার বেশি।

মৃত্যু বেড়ে যাওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ বাড়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও ব্যক্তির অসতর্কতায়। কিন্তু মৃত্যু বাড়ে রোগীর চিকিৎসার ঘাটতিতে। যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারাই মৃত্যু বাড়ার প্রধান কারণ।

মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিস্তারিত তথ্য বলা হয় না। রোগীর উপসর্গ, অন্যান্য রোগ, অবস্থান না জেনে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা যায় না।