খালেদাকে নিয়ে বক্তব্যে বিরোধী দলের'ছিঃ ছিঃ'

‘খালেদা জিয়ার মা লক্ষ্মী রানী মারমা দার্জিলিংয়ের চা-বাগানের মালিক উইলসনের চাকরানি ছিলেন। চা বাগানের মালিকের ছিল মদ ও নারীর প্রতি আসক্তি। লক্ষ্মী রানী গর্ভবতী হলে উইলসনের দারোয়ান মুরালী মোহন মারমার সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। উইলসনের তত্ত্বাবধানে ১৯৪৫ সালের ১৩ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্ম হয়। খালেদা জিয়া ইহুদি ঔরসজাত। তাঁর গয়ের রং ও খাদ্যাভ্যাস তার প্রকৃত ইহুদি পিতার সঙ্গে মিল আছে। ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমান ফুর্তি করতে এসে ফেঁসে গিয়ে খালেদা জিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা জানজুয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় মত্ত ছিলেন। লোকে বলে জানজুয়ার অবিকল চেহারা পেয়েছে কোকো।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সাংসদ অপু উকিল পাকিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকেরইন্দো-পাকিস্তান ওয়ার অব ১৯৬৫ বই থেকে উদ্ধৃত করে বক্তব্য দেন। অপু উকিল বক্তব্য দেওয়ার সময় সিদ্দিক সালিকের লাল মলাটের বইটি উঁচিয়ে সংসদে প্রদর্শন করেন।

অপু উকিলের এই বক্তব্যের সময় বিএনপি ও জামায়াতের সাংসদরা তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সমস্বরে ছিঃ ছিঃ ধ্বনি দেন। বিএনপির সাংসদেরা অপু উকিলের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান। অপু উকিল বক্তব্য অব্যাহত রাখলে রাত আটটা ৫৭ মিনিটে বিএনপি-জামায়াতের সাংসদেরা জমিরউদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। অপু উকিলের বক্তব্যের সময় সরকারি দলের সাংসদরা টেবিল চাপড়ে উত্সাহ দেন। এ সময় সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।

এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে তা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলে। কিন্তু রাত আটটার পর বিরোধীদলীয় সাংসদ নিলোফার চৌধুরী মনি সরকারদলীয় সাংসদ অপু উকিলের বক্তব্যে হঠাত্ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ।

নিলোফার চৌধুরী প্রথমে বাজেটের ওপর আলোচনার সুযোগ পেয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও শেখ হাসিনার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। ডেপুটি স্পিকার উভয় সাংসদকে বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেননি। এরপর অপু উকিল একইভাবে খালেদা জিয়ার পরিবার সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

অপু উকিল বাজেট আলোচনায় আরও বলেন, খালেদা জিয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ঘরে জন্ম নিয়েও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙছে। ‘রক্তপিপাসু’ খালেদা জিয়া লাশ আর মানুষের রক্ত ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর গেছেন, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে, দেশে জানি আবার কী হয়। খালেদা জিয়ার পুত্র “লম্পট” তারেক দেশে এলে নাকি জনতার ঢল নামবে। তারেক এলে ধর্ষণের শিকার পূর্ণিমারা বিচার চাইতে যাবে। আমরা যাব ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার চাইতে।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিয়েছে।

সরকার গেছে পাগল হইয়া

নিলোফার চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী নাকি দিনের ১২টায় ঘুম থেকে ওঠেন। আরও কিছু শব্দ বলেছেন তিনি, যা তাঁর জন্যও শরম, বিরোধীদলীয় নেত্রীর জন্যও লজ্জার। বিরোধীদলীয় নেত্রী তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। কোরআন তেলাওয়াত করেন। খতমে তারাবি পড়েন। আমরা লোক-দেখানো নামাজ পড়ি না। স্কাইপের বিচারকের ভাষায় বলতে হয়, সরকার গেছে পাগল হইয়া।’

সিটি করপোরেশনের ফলাফল উল্লেখ করে নিলোফার চৌধুরী বলেন, ‘এটা সরকারের চার বছরের আমলনামা। নির্যাতনের ফল। তাদের শাসনামল—এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই।’ তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, ভালোয় ভালোয় বিদায় হন। আমরা আপনাদের মেনে নেব। দেশে বিরোধী দলের দরকার আছে।’

. লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শেয়ারবাজারে ধস নামে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগ বাড়েনি। সিপিডি বলেছে, বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পর্যালোচনা করলেও জানা যাবে বিনিয়োগ বাড়েনি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় কমেছে। তাহলে বিনিয়োগ বাড়ে কীভাবে—প্রশ্ন রাখেন এই সাংসদ। গত বছরের বাজেটে ২৮ হাজার কোটি টাকা এবার কীভাবে যুক্ত হবে বা কোথা থেকে সেই টাকা আসবে, তা-ও জানতে চান শহীদ উদ্দিন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের প্রশংসা করেন শহীদ উদ্দিন। বলেন, তিনি ১২টি বাজেট দিয়েছিলেন। ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট তাঁঁর যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভ্যাট না এলে এত বড় বাজেট দিতে হতো না। সাইফুর রহমানের বাজেটের সময় শেয়ারবাজারে ধস নামেনি। কিন্তু, আওয়ামী লীগ আমলে ’৯৬ সালে এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর আমলে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস হয়েছে। ৩৫ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বসে পড়েছেন। ৮৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে লোপাট হয়ে গেছে।

আমরা ইসলামিক অ্যারাবিক বিশ্ববিদ্যালয় করব

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাজেটের ওপর আলোচনায় বলেন, ‘যারা বলেছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না। যুক্তফ্রন্টে ভোট দিলে বউ থাকবে না, তাদের মুখ লুকানো উচিত। তারা দেখুক আমরা কি করেছি।’

মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নাহিদ বলেন, ‘যারা আল্লাহর আইন কায়েম করতে চেয়েছিল, তারা মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য কী করেছে? আমরা এক হাজার মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করেছি। ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা করেছি। ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু করেছি। স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন সমান করা হয়েছে। আমরা ইসলামিক অ্যারাবিক বিশ্ববিদ্যালয় করব, আইন হয়ে গেছে।’

সরকারি দলীয় অপর সদস্য ফজলে নূর তাপস বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে ইসলামের নামে জঘন্য কাজ করে, কোরআন পোড়ায়, তারা নাস্তিক নয়, মুরতাদ নয়, তারা কাফের।

কালোটাকা সাদা করতে হলে ৫০ শতাংশ জরিমানা করা উচিত

জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, কালোটাকা আর অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। কালোটাকা সাদা করতে হলে ৫০ শতাংশ জরিমানা করা উচিত। আর ব্যবসায়ীদের কাছে নানা কারণে অপ্রদর্শিত আয় থাকে। সেই টাকা সাদা করতে ৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ তৈরির প্রস্তাব করেন তিনি। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে তৃণমূল মানুষের ক্ষমতায়নে কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মূলত ধনিক ও ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে।

বাজেটের ওপর আরও আলোচনা করেন মত্স্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, গোলাম সবুর, শামসুর রহমান শরীফ, জাতীয় পার্টির জাফর ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ।