চট্টগ্রামে মা–মেয়ে হত্যা

দুই আসামির ফাঁসি

মা রিজিয়া খাতুন, মেয়ে সায়মা নাজনীন
মা রিজিয়া খাতুন, মেয়ে সায়মা নাজনীন

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে গত বছর বাসায় ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরী ও তার মাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় এজলাসে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবু রায়হান ও শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৪ মার্চ সকালে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় সায়মা নাজনীন (১৮) ও তার মা রিজিয়া খাতুনকে (৫০) খুন করা হয়। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্তের শিকার হতো সায়মা। এর প্রতিবাদ করায় ক্ষুব্ধ ছিল দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রায়হান। আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মার শেষ পরীক্ষা (ব্যবহারিক) ছিল সেদিন।

রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রাম আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি আবু রায়হান (বাঁয়ে) ও শহীদুল ইসলামকে l ছবি: প্রথম আলো


হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সায়মার বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে রায়হানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন। রায়হানের বাবা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের হাবিলদার আবুল বাশার। খুলশীর একটি রেস্টহাউসের গাড়িচালক শহীদুল। রায়হানের বন্ধু শহীদুল।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত প্রাঙ্গণে কেঁদে ফেলেন নিহত সায়মার বাবা রেজাউল করিম। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আসামিদের সাজা কার্যকর করা হোক। যাতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে।
বাদীর আইনজীবী আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিশোধ নিতে আসামি রায়হান তাঁর বন্ধু শহীদকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করেন। পরে পরিকল্পনামতো বাসায় ঢুকে সায়মা ও তার মাকে খুন করেন তাঁরা। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাঁরা এসব কথা বলেছেন।
তবে আসামি শহীদুল ইসলামের বড় ভাই মো. জহির আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, রায়ের তাঁরা সন্তুষ্ট নন। তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, মা-মেয়ে হত্যা মামলায় ৩০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত খুনের দায়ে দুই আসামিকে ফাঁসির আদেশ এবং পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন।
গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই দুই আসামি বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী আবু সায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, এজলাসে কাঠগড়ায় থাকা দুই আসামি একে অপরকে খুনের জন্য দোষারোপ করতে থাকেন এবং তর্কে জড়ান। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের শান্ত করেন। তাঁদের এজলাস থেকে বের করে কারাগারে নিতে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন শহীদুল ইসলাম।