Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই সিটির অনিয়মে দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে: টিআইবি

টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। অকার্যকর ওষুধ কেনা, সঠিক কর্মপরিকল্পনা না থাকা, কীটনাশক কেনায় সরকারি নীতি অনুসরণ না করায় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি মনে করে।

আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। গত ২০ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। গুণগত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, জৈবিক ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ এবং যান্ত্রিক পদ্ধতি—এই চারটি পদ্ধতি প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন শুধু রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও বাকি পদ্ধতিগুলো সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনায় ও বাজেটে রাখা হয় না।

দুই সিটি করপোরেশন শুধু সাধারণ কিউলেক্স মশাকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে এডিস মশার উৎস নির্মূল, কিন্তু এই বছর ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের আগে এডিস মশার উৎস নির্মূলে কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি।

দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম অধিকাংশ সময়ে অ্যাডাল্টিসাইড নির্ভর (পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন)। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যাডাল্টিসাইড ৩০ শতাংশ এবং লার্ভিসাইড (মশার শুককীট নিধন) ৮০ শতাংশ কার্যকর। অ্যাডাল্টিসাইডের চেয়ে লার্ভিসাইড এবং উৎস নির্মূল অনেক বেশি কার্যকর ও স্বল্প খরচের হলেও দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম সব সময় অ্যাডাল্টিসাইড কেন্দ্রিক। টিআইবি বলছে, এই কার্যক্রমে ক্রয়ের সুযোগ বেশি এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। আরেকটি কারণ হচ্ছে এডাল্টিসাইডে মানুষের নজরে বেশি পড়ে।

কীটনাশকের নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গবেষণাকে আমলে না নিয়ে একই কীটনাশক বারবার ক্রয়। দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে এক সিটি করপোরেশনের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং বাতিল করা কীটনাশক ক্রয় করেছে অন্য সিটি করপোরেশন।

টিআইবি জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সরকারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে প্রতি লিটার কীটনাশক ৩৭৮ টাকায় সরাসরি কেনার কার্যাদেশ দেওয়ায় প্রতি লিটার কীটনাশক ক্রয়ে ১৬১ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সংস্থাটি লিমিট এগ্রো প্রোডাক্ট নামে যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই কীটনাশক ক্রয় করে সেই একই প্রতিষ্ঠান উত্তর সিটির উন্মুক্ত দরপত্রে প্রতি লিটারের দর ২১৭ টাকা প্রস্তাব করে। এই হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কীটনাশক বাবদ মোট ক্রয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

টিআইবি গবেষণায় দেখেছে, সক্ষমতার ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুধুমাত্র ঢাকার সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৪১টির তথ্য সংকলন করে। রোগ-নির্ণয় কেন্দ্রগুলো থেকে পরীক্ষায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, তাদের তথ্য সংকলন করা হয়নি। অথচ, ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাধিক এবং রোগনির্ণয় কেন্দ্র প্রায় এক হাজার। গুটিকয়েক হাসপাতালের এই খণ্ডিত পরিসংখ্যান দিয়ে অন্যান্য দেশের ডেঙ্গু আক্রান্তের হারের সঙ্গে তুলনা করে ডেঙ্গুর মাত্রা কম দেখানো হচ্ছে।

টিআইবি বলছে, জাতীয় পর্যায়ে রোগ সংক্রামক কীট নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল নেই। তবে রোগ সংক্রামক কীটের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাড়াতে জাতীয় কৌশলের খসড়া তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৭ সালে, যা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিটি করপোরেশনের কীট ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নেই।

টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, মশক নিধন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি থাকার কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ জনগণের ওপর দায় চাপিয়ে জরিমানা শুরু করা হয়। রয়েছে। তা ছাড়া দুই সিটিতে গড়ে ওয়ার্ড প্রতি ৫ জন মশক নিধন কর্মী রয়েছে যা খুবই অপ্রতুল। এলাকার আয়তন বিবেচনায় নিয়ে মশক নিধন কর্মী বণ্টন করা হয় না। তা ছাড়া কর্মীদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে লোক দেখানো অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ এবং সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।