বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মেজো ছেলে তাফসির মো. আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাফসির আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মনে করেন তাঁর পারিবারিক ঝামেলার নেপথ্য কারণে তাঁকে দুদকে ডাকা হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত তাফসির মো. আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
গত ২০ আগস্ট দুদক তাফসির আউয়ালকে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে নোটিশ দেয়। নোটিশে উল্লেখ ছিল, মাল্টিমোড লিমিটেডের মালিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাফসির মো. আউয়ালের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলে কোটি কোটি টাকা লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির একটি অভিযোগ কমিশনে অনুসন্ধানকারী রয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া ও শোনা প্রয়োজন।
দুদক থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকেরা জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তাফসির আউয়াল বলেন, ‘আমি দেশে ছিলাম না, লন্ডনে ছিলাম। দুদকের নোটিশ পেয়ে চলে এসেছি। ওনারা আমাকে অনেক বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, আমি উত্তরও দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না এই মুহূর্তে। দুদক নিশ্চয়ই এগুলো যাচাই-বাছাই করবেন।’
তাহলে কী অভিযোগ হয়রানিমূলক? এমন প্রশ্নের জবাবে তাফসির আউয়াল বলেন, ‘এটা হয়রানি কি না, সেটা আমি বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, দুদক দুদকের কাজ করে যাচ্ছে। এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, আপত্তিও নেই। তাঁরা আমাকে একবার ডেকেছেন, আবারও ডাকলে আসব। আরও কিছু জানতে চাইলে তারও উত্তর দেব।’
লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না, জানতে চাইলে তাফসির আউয়াল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না বা বলতে চাই না। তবে আমার মনে হয়, দুদকের কাছে কে অভিযোগটা দিয়েছে, বা কী কারণে অভিযোগটা এসেছে— এটা নিয়ে হয়তোবা আমার একটু অসুবিধা আছে। আমার একটা পারিবারিক ঝামেলা চলছে, এটি নিয়ে আদালতেও আছি। মনে হয় এটি (অভিযোগ) ব্যক্তিগত কারণে করেছে, সেটা হয়তো দুদক জানে না।’
তবে পারিবারিক ঝামেলাটা কী, তা তাফসির আউয়াল সাংবাদিকদের কাছে খোলাসা করেননি। তাফসির আউয়াল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে তাফসির পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মাল্টিমুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এদিকে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাফসির আউয়ালকে দুদকের তলবের পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগে (বিআইএফআইউ) চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাঁর সন্তানদের নামে বিদেশি কোম্পানি এনএফএম এনার্জি নামে যুক্তরাজ্যের বার্কলেস ব্যাংক লন্ডন শাখা, যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মর্গান চেজ ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখা ও পিএনসি ব্যাংকের পিটাসবার্গ শাখার কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের তথ্যাদি, থাইল্যান্ডের সুকুমভিত রোডে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কার নামে নিবন্ধিত, কত টাকায় কেনা, কীভাবে অর্থ পরিশোধ হয়েছে এবং বারমুডায় নিবন্ধিত ‘এনএফএম এনার্জি লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠান (যার অংশীদার হিসেবে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল) সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।