নিরাপদ মাতৃত্ব ও ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ

>

৫ জুন ২০১৬, প্রথম আলো ও ইউএনএফপিএর আয়োজনে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব ও ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

.

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: আমরা বিভিন্ন সময় মা, শিশু, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মিডওয়াইফ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করেছি। আজকের আলোচ্য বিষয় ফিস্টুলা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রসবকালীন দক্ষ সেবাদানকারীর অভাবে অনেক নারী ফিস্টুলার মতো জটিলতায় ভোগেন।
সঠিকভাবে চিকিৎসা না নেওয়ার জন্য সারা জীবন তাঁকে এ জটিলতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। অথচ সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ই আজকের আলোচনা। এখন উপস্থিত আলোচকগণ এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
মো. হাবিবে মিল্লাত: নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৩ সালে ১ লাখ জীবিত জন্মে ৫৭৪ জন মা মারা যেতেন। ২০১৩ সালে এটা ১৭০ জনের কাছাকাছি এসেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে এক লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু যেন ৭০ জনের নিচে থাকে, এমন একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।

মো. হাবিবে মিল্লাত

যেভাবেই হোক, মাতৃমৃত্যুর হার আমাদের কমিয়ে আনতেই হবে। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয়সংখ্যক দক্ষ সেবাদানকারী না থাকায় কোনো নারীর গর্ভের আগে ও পরের জটিলতাগুলো ডাক্তার দেখে থাকেন। কিন্তু উন্নত দেশে এই সেবাগুলো মিডওয়াইফরা দেেখন।
দেশে প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ নারীর অদক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে বাড়িতে প্রসব হয়। কিন্তু এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এখানে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে তিনজন সেবাদানকারী থাকেন।
ফিস্টুলা একটি সমস্যা। কিন্তু দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে গর্ভ-পূর্ব ও পরবর্তী সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলে ফিস্টুলা থাকবে না। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে ফিস্টুলা নির্মূল করতে পারি।
ফিস্টুলার জন্য বাল্যবিবাহ অনেকাংশে দায়ী। বাল্যবিবাহ নিরসনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ আছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফিস্টুলাসহ স্বাস্থ্য খাতের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব।
আয়েশা সিদ্দিকা: নিরাপদ মাতৃত্ব ও ফিস্টুলা—এই দুটো বিষয় পরস্পর িনবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হলে ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বহুলাংশে কমে আসবে। ফিস্টুলা একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসার আওতায় এলে ফিস্টুলা ভালো হয়।
আমাদের হালনাগাদ তথ্যের অভাব রয়েছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে ম্যাটারন্যাল মরবিডিটি ও মর্টালিটি জরিপ থেকে তথ্য পেয়ে যাব। তথ্য ও সচেতনতার অভাবে অনেক নারী জানেন না যে ফিস্টুলা একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ এবং কোথায় এর চিকিৎসা হয়। ফলে অনেকে ১৫ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিস্টুলায় ভুগতে থাকেন।

আয়েশা সিদ্দিকা


সঠিক সময়ে দম্পতিদের চাহিদা অনুযায়ী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতির অপ্রাপ্যতার জন্য অনেক নারী অপরিকল্পিত গর্ভ ধারণ করেন। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁদের ফিস্টুলা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কিশোরী বয়স থেকে প্রজনন-স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। গর্ভ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সঠিক সেবা একজন নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে পারে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত না হলে একজন নারী ফিস্টুলাসহ িবভিন্ন ধরনের প্রসবজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে ইউএনএফপিএ সরকারকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়নি। এখনো স্বাস্থ্যকর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা যায়নি। জনগণকেও সচেতন করা যায়নি। ফলে অনেক আক্রান্ত নারী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। অথচ চিকিৎসার পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায় নারীদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
২০১৫ সালে ফিস্টুলা রোগ প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনের জন্য জাতীয় ফিস্টুলা কর্মকৌশলের আলোকে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের মধ্যে ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
ফিস্টুলা নির্মূল করতে হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। তাহলে ফিস্টুলা আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে। নতুন ফিস্টুলার মতো জটিলতাও কমে আসবে।
শামিমা বেগম: ১৯৯৮ সালে অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়। ২০০২ সালে সন্তান হয়। আমার শাশুড়ির ইচ্ছে ছিল তাঁর ছেলেকে যৌতুক নিয়ে বিয়ে দেবেন। আমার শ্বশুর ও স্বামী আমাকে খুব পছন্দ করেন। তাঁদের ইচ্ছেতে বিয়ে হয়।

শামিমা বেগম

বিয়ের পর থেকেই আমার ওপর অনেক নির্যাতন চলে। আমাকে মারধর করা হয়। খাবার, তেল-সাবান, কাপড়চোপড় কিছু দেওয়া হয় না। আমাকে বলা হয়, স্বামী ও শ্বশুর যেহেতু আমাকে পছন্দ করে এনেছেন, তাঁরাই সব করবেন। আমার স্বামী ও শ্বশুর বিদেশে থাকেন।
আমার প্রসবব্যথা শুরু হয়। কিন্তু শাশুড়ি এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। আমি কাউকে বলি না। অনেক যন্ত্রণার পর একজন ধাই আমাকে সাহায্য করতে আসেন। দুই দিন যাবৎ কষ্ট পাচ্ছি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিন দিনের সময় আমার আর কোনো জ্ঞান নেই।
এ সময় খাওয়াদাওয়া বন্ধ। পরে বাপের বাড়ি থেকে লোকজন এসে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল আমাকে রাখে না। ফিরে আসার পথে মৃত সন্তান হয়। ১৩ দিন পর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন আমি ফিস্টুলার জটিলতায় আক্রান্ত।
তারপর অনেক বছর কষ্ট করেছি। চিকিৎসা করার পর ভালো হয়েছি। এখন আমাদের এলাকায় যাঁরা এ সমস্যায় আক্রান্ত, তাঁদের বোঝাই। আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। তাঁদের ফিস্টুলা ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
নিলুফার ফরহাদ: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ-প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কিন্তু তিন হাজারই শেষ কথা নয়, আমাদের আরও মিডওয়াইফের প্রয়োজন।

নিলুফার ফরহাদ


সময়ের সঙ্গে হয়তো মিডওয়াইফের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। আমাদের মিডওয়াইফরা আন্তর্জাতিক মানের যোগ্যতা অর্জন করছেন। তাঁরা মা ও শিশুকে পরিপূর্ণ সেবা দেবেন।
একজন গর্ভবতী মাকে গর্ভের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে পরিচর্যা দেওয়া প্রয়োজন, তা মিডওয়াইফের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব। আমরা গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করছি। তাঁরা যেন যেকোনো সমস্যায় মিডওয়াইফের কাছে আসেন।
ফিস্টুলার মূল কারণ বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসব। সঠিকভাবে চিকিৎসা করালে ফিস্টুলা ভালো হয়। এ জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে, যেন কেউ বিষয়টি লুকিয়ে না রাখেন। ফিস্টুলা হওয়ার দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন সেবার আওতায় আসেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা। তাহলে ফিস্টুলাসহ অনেক জটিলতার হাত থেকে আমাদের মায়েরা মুক্ত থাকতে পারেন।
শরীফ মোস্তফা হেলাল: ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ফিস্টুলার চিকিৎসা হয়। আমরা ২০০৭ সাল থেকে কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করেছি। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে ইউএনএফপিএ।

শরীফ মোস্তফা হেলাল

আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরেকটি কাজ হলো ফিস্টুলা আক্রান্ত রোগীদের খুঁজে বের করা। তাঁদের চিকিৎসার আওতায় আনা। চিকিৎসার পরও আমরা তাঁদের দেখাশোনা করি। তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করি। এ ক্ষেত্রে আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিই, যাতে তাঁরা কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন, কারও ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়।
নারীদের বিভিন্ন সমস্যার মূল কারণ শিক্ষার অভাব। শিক্ষার অভাবে একজন নারীর বাল্যবিবাহ হচ্ছে। শিক্ষার অভাবে তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ঠিকমতো ব্যবহার করছেন না। ফলে অল্প বয়সে গর্ভবতী হচ্ছেন।
গর্ভাবস্থায় তাঁর যে ধরনের সেবা নেওয়ার কথা, সেটা তিনি নিচ্ছেন না। এ জন্য প্রসবের সময় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। প্রসব জটিলতার জন্য অনেক মেয়ের ফিস্টুলা হচ্ছে। একজন শিক্ষিত নারী জীবনের প্রতিটি পর্বে সাঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ফিস্টুলা কমাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে হবে। অধিকাংশ প্রসবের জটিলতা তৈরি হয় বাড়িতে প্রসবের কারণে। আর এ জন্য নারীরা ফিস্টুলার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হন। এ ক্ষেত্রে সরকার, এনজিও, পেশাদার গ্রুপ, বিশেষজ্ঞ সবার একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। তাহলে ফিস্টুলার ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে।
শামসুন নাহার: অন্যান্য অঞ্চল থেকে সিলেটে নারীদের সমস্যা বেশি। পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রীর ব্যবহার কম। আবার এঁরা জানেন না যে এ রোগের চিকিৎসা হয়। এখন যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা ফিরে গিয়ে অন্য রোগীদের বলছেন, এটা শুনে অনেকে চিকিৎসা নিতে আসছেন। 
একজন আরেকজনকে নিয়ে আসছেন। ৭০ বছর বয়সের এক রোগী আমার কাছে এসেছেন। তিনি প্রায় ৫০ বছর ফিস্টুলায় ভুগেছেন। আমি সিলেট মেডিকেলে আসার পর ফিস্টুলা চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত রোগীরা বেশি আসতে থাকেন।
এ হাসপাতালে ফিস্টুলার চিকিৎসার জন্য আটটি শয্যা ছিল। বিভিন্নভাবে এটা বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০টি করা হলো। এই অপারেশনের জন্য অনেক ধৈর্যের দরকার। ধৈর্যহারা হলে এখানে কোনোভাবেই সফলতা আসবে না। 

শামসুন নাহার

একটি অপারেশন করতে তিন ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা থাকে। কিন্তু ধৈর্যহারা হই না। কারণ, আমি একজন নারীর কষ্ট বুঝি।
আমাকে এ ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়েছেন সায়বা ম্যাডাম। ২০০৪ সালে সায়বা আপা ফিস্টুলা কর্নার করেন। আমি মাত্র সাত দিনের একটি প্রশিক্ষণ নিলাম। একজন ফিস্টুলা আক্রান্ত রোগীকে ভালো করার যে আনন্দ আর তাঁরা যে ভালোবাসা দেন, কোনো কিছুর সঙ্গে এর তুলনা করা যাবে না।
ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীদের এখানে কোনো অর্থই খরচ হচ্ছে না। সব খরচ সরকার বহন করছে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে পারছেন। আমি আসার পর ৫৮ জনের ফিস্টুলা অপারেশন করেছি।
অধিকাংশ ফিস্টুলা আক্রান্ত নারী ভালো হয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক রোগমুক্ত জীবনে ফিরে গেছেন। যাঁদের কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে, তাঁরা আবার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আগামী সেপ্টেম্বরের পর আমি হয়তো থাকব না। আমার দুজন সহযোগী আছেন, তাঁরা এই কাজ চালিয়ে নেবেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে কাজটি খুবই ধৈর্য নিয়ে করতে হয়। নিজের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এমন মানসিকতা নিয়ে যিনি কাজ করবেন, তিনি সফল হতে পারবেন।
সায়বা আক্তার: ফিস্টুলা চিকিৎসায় ডাক্তার ও জটিলতায় আক্রান্ত দুজনেরই ধৈর্যের একটা বিষয় থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দু-তিনবার অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। এটি কম কষ্টের ও ধৈর্যের বিষয় নয়।

সায়বা আক্তার

ফিস্টুলা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে হয়। অনেকবার আফ্রিকায় গিয়েছি। এখন আন্তর্জাতিক ফিস্টুলা সোসাইটির আমি একজন সদস্য। দেশে এখন অনেক ফিস্টুলায় আক্রান্ত নারী আছেন। শুধু সিলেট অঞ্চল নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিস্টুলায় আক্রান্ত এই সংখ্যা কম নয়। এঁরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। এখন আমাদের কাজ হলো এঁদের খুঁজে বের করে আনা। যেহেতু চিকিৎসার মাধ্যমে এঁদের রোগমুক্ত করা সম্ভব, তাই চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ফিস্টুলা নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্যরা জানছে যে তাদের দেশে ফিস্টুলা আছে। নেপালে আমাদের চেয়ে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি। এর অর্থ অবশ্যই তাদের দেশে ফিস্টুলা আছে।
এখন নেপাল বুঝতে পারছে যে তাদের দেশে ফিস্টুলায় আক্রান্ত নারী আছেন। ভারত, পাকিস্তান বলেছে, তাদের দেশে ফিস্টুলা নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেখানে ফিস্টুলা আছে।
আমি আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের দেশের ফিস্টুলার বিষয়ে বলে থাকি। ফিস্টুলা নির্মূল করতে হলে আমাদের এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে কাজটি টেকসই হয়।
কারও অভাবে বা কোনো কারণে যেন কাজটি থেমে না যায়। একটি ফিস্টুলা নিরাময়কেন্দ্র খুলে লাভ নেই। কেন্দ্রটি যাতে কার্যকর থাকে, সেটি জরুরি।
জনপ্রতিনিধিদের এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তাঁদের পরিসর অনেক বড়। তাঁরা অনেক বেশি মানুষকে সচেতন করতে পারেন। সবাই মিলে কাজ করলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
আবু জামিল ফয়সাল: আমরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান—ইউএসএআইডির সহযোগিতায় আটটি ফিস্টুলা নিরাময়কেন্দ্রকে সহযোগিতা করি। সারা দেশে ১৮টি কেন্দ্র কাজ করে। এসব কেন্দ্রে বছরে ৬২৫ থেকে ৭০০ ফিস্টুলা জটিলতার চিকিৎসা হয়। 
২০০৩ সালের এক তথ্যমতে জানা যায়, সে সময়ে দেশে ৭১ হাজার নারীর ফিস্টুলা ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর দুই হাজার ফিস্টুলা জটিলতা যোগ হয়।

আবু জামিল ফয়সাল

২০০৯ সালে জাতীয় ফিস্টুলা নিরাময়কেন্দ্রের এক তথ্য থেকে জানা যায় যে শুধু বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসব থেকেই ফিস্টুলা হয় না। চিকিৎসকের অসতর্ক প্রসবের জন্যও ফিস্টুলা হচ্ছে। এটা মোট ফিস্টুলার ২৮ শতাংশ।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এখন দুভাবে কাজ করতে হবে। এক. বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত প্রসব যাতে না হয়, তার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দুই. বিভিন্ন কারণে নারীদের তলপেটে যে অপারেশন হয়, সেটা যাতে ভালোভাবে হয়, সে ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় ফিস্টুলা নিরাময়কেন্দ্রের আরেক তথ্য থেকে জানা যায়, ১৪ থেকে ২০ বছরের নারীদের ফিস্টুলা বেশি হয়। কারণ, এ সময়ে সন্তানধারণের মতো শারীরিক গঠন নারীদের হয় না।
সারা দেশে ফিস্টুলার চিকিৎসা বিনা পয়সায় হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সফল হয়।
ইউএনএফপিএ এ পর্যন্ত ৩০০ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাঁরা ১০ জনও এ পেশায় আছেন কি না, জানি না। তাঁদের কথা হলো, তাঁরা রোগী পান না। বিভিন্ন সামাজিক বাধার জন্য রোগীরা আসছেন না। এটা দূর করা জরুরি।
প্রায় ৫ হাজার ৫০০ পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক আছেন। এঁদের অল্প কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে মিডওয়াইফ করা যায়। তাহলে নিরাপদ মাতৃত্বের ক্ষেত্রে আমরা আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে পারব।
ওজিএসবি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করলে ফিস্টুলা নিরসন হবে।
ফারহানা দেওয়ান: ওজিএসবির (অবস্ট্রিটিক্যাল ও গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশ) একটি নির্বাহী কমিটি আছে। সারা দেশে আমাদের ১ হাজার ৪০০ সদস্য আছেন। দেশে আমাদের ১৩টি শাখা আছে। প্রতিটি শাখার আবার কয়েকটি কেন্দ্র আছে। কিছু উপকমিটি ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে আমরা কাজ করি।

ফারহানা দেওয়ান


ফিস্টুলার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একই সঙ্গে করতে হবে। ওজিএসবি সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে। সরকারের প্রায় অধিকাংশ স্বাস্থ্য কর্মসূচির সঙ্গে ওজিএসবি থাকে। সরকারের প্রজননস্বাস্থ্য কর্মসূচির সঙ্গে ১৯৯৩ সাল থেকে কাজ করছি। সরকারের কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট কর্মসূচির সঙ্গে আমরা ছিলাম।
ফিস্টুলা নিরাময়ের জন্য দরকার একটি বিশেষায়িত অপারেশন। দীর্ঘ সময় ধরে এটা শিখতে হয়। জাতীয় ফিস্টুলা সেন্টারের আমিও একজন বিশেষ প্রশিক্ষক ছিলাম। এখনো ফিস্টুলার অপারেশন করে যাচ্ছি।
ওজিএসবি ঢাকার বাইরে কিছু ক্যাম্প করে রোগীদের সেবা দেয়। সরকার ছাড়াও আমাদের সঙ্গে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, এনজেন্ডার হেলথ কাজ করে।
স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রায় প্রতিটির সঙ্গে আমাদের অংশগ্রহণ আছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফিস্টুলামুক্ত হবে।
রিয়াদ মাহমুদ: আমাদের প্রধান কাজ শিশুর উন্নয়ন। কিন্তু আমরা দেখেছি, শিশুর উন্নয়ন করতে হলে মা, নবজাতক, কিশোর-কিশোরী সবার সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। নব্বইয়ের দশক থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশে যখন জরুরি প্রসূতিসেবা শুরু হয়, তখন ওজিএসবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর—আমরা একসঙ্গে কাজ করি।

রিয়াদ মাহমুদ

একটা পরিবারে যখন একজন ফিস্টুলা আক্রান্ত মা থাকেন, তখন ওই পরিবারে চরম অশান্তি নেমে আসে। আমাদের সম্মিলিতভাবে ফিস্টুলা প্রতিরোধ করতে হবে। একজন মা সুস্থ থাকলে পরিবারে শান্তি ফিরে আসবে। ওই পরিবারের সন্তানেরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফিস্টুলার ১০টি কারণ উল্লেখ করেছে। এগুলো মনে রাখলে ফিস্টুলা নিরসনের জন্য যথেষ্ট হবে। আজকের আলোচনায় এগুলো আলোচনা হয়েছে।
এখন ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীর একটি পরিসংখ্যান করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে একটা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের এগোতে হবে। পরিকল্পনা হতে হবে কার্যকর। যেমন আমাদের ১৮টি ফিস্টুলা নিরাময়কেন্দ্র আছে। আর কটি দরকার, কেন্দ্রগুলো কর্মোপযোগী করার জন্য কী কী প্রয়োজন?
ফিস্টুলার অপারেশনের জন্য একটা আলাদা ধরনের মানসিকতা ও দক্ষতার প্রয়োজন। সবাইকে দিয়ে এটা হবে না। সমাজে একধরনের নিবেদিত মানুষ আছেন, যাঁরা ভেতর থেকে অন্যের সমস্যা অনুভব করেন, কেবল তাঁরা কাজটি করতে পারবেন।
মোহাম্মদ শরীফ: ফিস্টুলা নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। এর নিরাময়ে প্রয়োজন একটি জটিল ও কষ্টকর অপারেশন। তিনটি কারণে ফিস্টুলা হয়। যেমন বিলম্বিত প্রসব, বাধাগ্রস্ত প্রসব ও অপারেশনজনিত।
আমার একটি পর্যবেক্ষণ হলো গাইনি, অ্যানেসথেশিয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটা খুব বেশি কাজে আসছে না। ছয় মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন একজন কর্মক্ষেত্রে আসছেন, তাঁরা সফল হতে পারছেন না।

মোহাম্মদ শরীফ


ফিস্টুলার আরও একটি অন্যতম কারণ হলো বাড়িতে অদক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে প্রসব। এটা কমিয়ে আনতেই হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত মিডওয়াইফ প্রয়োজন। আমাদের ৫ হাজার ৫০০ সেবাকর্মী আছেন। তাঁদের মাত্র এক বছরের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো মিডওয়াইফ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। তাতে নিরাপদ প্রসবের নিশ্চয়তা অনেক বেড়ে যাবে।
আমরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশে ৩ হাজার ৬০০ সেবাকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টার প্রসব-সুবিধা চালু করেছি। আমাদের তদারক-ব্যবস্থা বাড়াতেই হবে। যেখানে ঠিকমতো তদারক হয়, সেখানে সেবার মান ভালো। যেখানে তদারক নেই, সেখানে সেবার মান খারাপ।
স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৫০ হাজার মাঠকর্মী আছেন। তাঁদের ঠিকভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারলে তাঁরাই ফিস্টুলার রোগী খুঁজে বের করতে পারবেন। সমাজের সব ক্ষেত্রে, জনপ্রতিনিধিদের যোগাযোগ থাকে। তাঁদের কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় শুধু প্রসূতি মায়ের জন্য চালকসহ একটি করে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া খুবই জরুরি। তাহলে মা ও শিশুমৃত্যু অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল: ফিস্টুলা নির্মূল করতে হলে প্রসূতির মানসম্মত সেবার কোনো বিকল্প নেই। ৪২ শতাংশ মা দক্ষ সেবাদানকারীর সাহায্য পাচ্ছেন। ৩৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়।
আমরা গত তিন বছরে ১ হাজার ২০০ জন মিডওয়াইফ তৈরি করেছি। এ বছরের মধ্যে আরও ১ হাজার ২০০ জন মিডওয়াইফের প্রশিক্ষণ শেষ হবে। আন্তর্জাতিক কারিকুলাম অনুসারে এই মিডওয়াইফদের প্রশিক্ষণ হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি পরবর্তী পাঁচ বছরে আরও তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বসে নেই, কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসূতি মায়ের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ফিস্টুলাসহ অনেক সমস্যা থেকে মায়েরা মুক্ত থাকবেন।

হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল

গত ১০ বছরে ওজিএসবির সহযোগিতায় ১০ হাজার ৫০০ জন সিএসবিএ (কমিউনিটি স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট) তৈরি করেছি। তাঁদের কাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় তদারকের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের আরও অনেক কর্মসূচি আছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে পারব, একই সঙ্গে ফিস্টুলা কমে আসবে।
আমাদের কর্মসূচির মধ্যে ফিস্টুলাকে গুরুত্ব দিয়েছি। পরবর্তী সেক্টর প্রোগ্রামে জেলা পর্যায়ে ফিস্টুলার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কাজ করছি। ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গায় কিশোর-কিশোরীদের দল করে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকসহ অনেক বিষয় তাদের বোঝাচ্ছি।
আমাদের কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, সবার সহযোগিতা থাকলে ভবিষ্যতে ফিস্টুলামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব।
মো. হাবিবে মিল্লাত: আমরা আশা করব, গণমাধ্যম যেন স্বাস্থ্য খাতের সফলতার বিষয়গুলোও তুলে ধরে। ডাক্তাররা সেবাদানের মতো মহৎ কাজ করেন। কিন্তু সব মানুষের কাছে তাঁদের পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করলে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।
আমিও মনে করি, জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। তাঁরা হাজার হাজার মানুষের সামনে যেকোনো বিষয় তুলে ধরলে সেটা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। সিলেটে এখন বাল্যবিবাহ কম। উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় বাল্যবিবাহের হার বেশি।
ডাক্তারের ভুলত্রুটি নিয়ে অভিযোগের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আছে। এই কাউন্সিল গত কয়েক বছর ভালো কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল ভাঙচুর হয়। কিন্তু মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে কেউ অভিযোগ করেন না। এখানে অভিযোগ করলে অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
সরকার একা সবকিছু করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে এনজিওসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমার এলাকার একটি স্কুলে কিশোরীদের নিয়ে একটি কর্মশালা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি এনজিও এটি করছে। একটি কক্ষে ২৫০ জন মেয়ে, সেখানে প্রচণ্ড গরম। কোনো মাইক নেই। পেছনে যারা বসে আছে প্রশ্ন করে জানলাম, তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।
এভাবে একটি প্রশিক্ষণ হতে পারে না। এর দায়িত্ব মাননীয় মন্ত্রীর নয়। যিনি কাজটি করছেন, তাঁর এখানে বড় রকমের দায়বদ্ধতা আছে। যে স্কুলে হচ্ছে, তাদের দায়িত্ব রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের দায়িত্ব রয়েছে।
সবার কাজ সবাই ঠিকমতো পালন না করলে আমরাই পেছনে পড়ে থাকব। ফিস্টুলা নির্মূলসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার অগ্রগতি অর্জন হবে না।
আব্দুল কাইয়ুম: নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হলে ফিস্টুলাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এ জন্য প্রসূতি মায়ের যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রসবের সময় মায়েরা যাতে দক্ষ সেবাদানকারীর সাহায্য পান, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার।
যেভাবেই হোক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানো জরুরি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আলোচনায় সুপারিশ
* আমাদের এমন একটি কর্মপরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন যাতে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে দেশকে ফিস্টুলামুক্ত করতে পারি
* সবার কাছে তথ্য পেঁৗছানো প্রয়োজন। কোথায় ফিস্টুলার চিকিৎসা হয় এটা না জানায় অনেকে ১০ থেকে ১৫ বছর ফিস্টুলায় ভুগে থাকেন
* সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিরাপদ মতৃত্ব নিশ্চিত করা, তাহলে ফিস্টুলাসহ অনেক সমস্যা থেকে মায়েরা মুক্ত থাকতে পারবেন
* বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণ ছাড়াও অপারেশনের সময় চিকিৎসকের অসতর্কতার জন্যও ফিস্টুলা হচ্ছে। এটা মোট ফিস্টুলার ২৮ শতাংশ
* ফিস্টুলা কমাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে হবে। অধিকাংশ প্রসবের জটিলতা তৈরি হয় বাড়িতে প্রসবের কারণে

যাঁরা অংশ নিলেন
মো. হাবিবে মিল্লাত : মাননীয় সাংসদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
হাবিব আবদুল্লাহ সোহেল : পরিচালক, পাবলিক হেলথ কেয়ার (পিএইচসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মোহাম্মদ শরীফ : পরিচালক (মা ও শিশু), লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
সায়বা আক্তার : কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ, আইএসওএফএস
শামসুন নাহার : অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, সিলেট মেডিকেল কলেজ
নিলুফার ফরহাদ : পরিচালক, ডিরেক্টরেট অব নার্সিং সার্ভিসেস
ফারহানা দেওয়ান : সাধারণ সম্পাদক, ওজিএসবি
আবু জামিল ফয়সাল : কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ, এনজেন্ডার হেলথ
রিয়াদ মাহমুদ : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ
আয়েশা সিদ্দিকা : প্রজেক্ট টেকনিক্যাল অফিসার, ইউএনএফপিএ
শরীফ মোস্তফা হেলাল : নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ উইমেন হেলথ কাউন্সিল
শামিমা বেগম : ফিস্টুলা সারভাইভার ও কমিউনিটি ফিস্টুলা অ্যাডভোকেট
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো