Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রচারে পিছিয়ে ধানের শীষ

>

দুটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন, বাকিগুলোতে নিষ্ক্রিয় প্রায়। তবে আওয়ামী লীগ জোর প্রচার চালাচ্ছে জেলাজুড়ে।

গাজীপুরের পাঁচটি আসনে দুর্বল প্রার্থী, দলীয় কোন্দল, সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশের মামলা-গ্রেপ্তারে নির্বাচনী মাঠের প্রচারে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। এর মধ্যে দুটি আসনের প্রার্থীরা প্রচারে সক্রিয় থাকলেও বাকি তিনটি আসনে মাঠে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত বিএনপির প্রার্থীরা। তবে মাঠ দখলে রেখে পুরো জেলায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে নৌকার সমর্থকেরা।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি আসনে প্রার্থী মনোনয়নকে ঘিরে সৃষ্ট কোন্দল মেটাতে পারেনি বিএনপি। এ দুই আসনের প্রার্থীরা মাঠেও নেই এখন। এ দুই প্রার্থীকে নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেক অভিযোগ। আর বাকি তিনজনের মধ্যে একজন কারাগারে। এ ছাড়া গাজীপুরে বিএনপির দুই আলোচিত নেতা সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও সাবেক মেয়র এম এ মান্নান নিষ্ক্রিয় আছেন এবারের নির্বাচনে। অন্যদিকে গাজীপুর-৩ আসনে দলীয় কোন্দল থাকলেও বাকি চারটিতে ঐক্যবদ্ধ আছে সরকারি দল।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি দলের বাধা, মামলা তো আছেই। প্রার্থী মনোনয়নেও ভুল আছে দলের।

গাজীপুর-১: দুর্বল প্রার্থিতায় নিষ্প্রাণ প্রচার

গাজীপুর-১ আসনে গত দুবারের সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারও নৌকার প্রার্থী। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের এ সভাপতি। তাঁর বিপরীতে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তানভীর সিদ্দিকী। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও এবার মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় কোন্দল মেটাতে তাঁকে প্রার্থী করে বিএনপি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই নেতা প্রচারে তেমন সক্রিয় নন। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর মাত্র দুই দিন মাঠে নেমেছেন। তিনি থাকেন ঢাকায়, তাই নেতা-কর্মীরাও সক্রিয় হচ্ছেন না মাঠে। গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদুল ইসলাম বাবুলসহ একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরাও সক্রিয় নন মাঠে। তানভীর সিদ্দিকীর ছেলে ও তাঁর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীর প্রচারে দুই দিন হামলা হয়েছে। তাই প্রচারে নামতে পারছেন না তাঁরা।

গাজীপুর-২: সরকারি দলের সঙ্গে আপসের অভিযোগ

গাজীপুর-২ আসনে তিনবারের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল এবারও নৌকার প্রার্থী। তাঁর বাবা সাবেক সাংসদ আহসানউল্লাহ মাস্টার খুন হলে উপনির্বাচনে তিনি প্রথম সাংসদ হন। আর সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এ আসনে জয় পেয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নান। সর্বশেষ ২০০৮-এর নির্বাচনে এখানে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন হাসান উদ্দিন সরকার। এবার নতুন প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। হাসান সরকার ও মান্নান সমর্থকেরা সক্রিয় নেই মাঠে। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় প্রার্থী নিজেই মাঠে নামছেন না। ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে একটি জনসভা করেছেন। এর বাইরে এক দিন প্রচারে নামলেও আর তাঁকে দেখা যায়নি। যদিও তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে আত্মগোপনে আছেন তিনি।

সালাহ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘গাজীপুরে বিএনপি দুটি পক্ষ হয়েছে, একটি পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। কয়েক দিন প্রচার চালিয়েছি। এখন পুলিশি হয়রানির কারণে দূরে আছি।’

গাজীপুর-৩: আওয়ামী লীগে কোন্দল

গাজীপুর-৩ আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে আওয়ামী লীগের। পাঁচবারের সাংসদ রহমত আলী অসুস্থ থাকায় দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। যদিও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রহমত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিল হাসান। দীর্ঘদিন ধরেই জামিল ও ইকবালের মধ্যে কোন্দল চলছে। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার ছয় দিন পর জামিল একবার শ্রীপুরে এলেও গতকাল পর্যন্ত আর ফেরেননি। একাধিকবার চেষ্টা করেও জামিল হাসানকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

তবে ইকবাল হোসেন বলেছেন, শ্রীপুর আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর জন্য মাঠে কাজ করছেন। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। স্থানীয় বিএনপিও তাঁর সঙ্গে আছে।

গাজীপুর-৪: হামলা ঠেকাতে সাংসদের উদ্যোগ

মুক্তিযুদ্ধকালে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের এলাকা হিসেবে পরিচিত গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের বর্তমান সাংসদ তাঁর মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি। নিজের ও পরিবারের স্বচ্ছ ইমেজ কাজে লাগিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিরোধী পক্ষ বিএনপির প্রার্থী রিয়াজুল হান্নানের ওপর হামলার অভিযোগ পেয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহর ছেলে রিয়াজুল হান্নান প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

সিমিন হোসেন রিমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কখনো পক্ষপাত করিনি। এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও সমান সুযোগ পাচ্ছেন। কোথাও কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

গাজীপুর-৫: প্রার্থী জেলে, প্রচারে স্ত্রী

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এ নিয়ে আখতারুজ্জামান সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও আখতারুজ্জামান প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন চুমকিকে। শুরু থেকেই এখানে সক্রিয় ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক। কিন্তু আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর তিন দিনের মাথায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর থেকে তাঁর স্ত্রী শম্পা হক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার শম্পা হকের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষ।