
সময় পেলে মেঘা তার দাদুর সঙ্গে গল্প করে। শোনে লাল পরি, নীল পরির গল্প। যেন স্বপ্নপুরীর রাজ্যে তার ঘোরাঘুরি। দাদুর দেওয়া গোলাপি রঙের জামা পরে আজ ছোট্ট মেঘা সত্যি সত্যি লাল পরি, নীল পরির গান শুনল।
‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, সাথি মোদের ফুলপরি, ফুলপরি লাল পরি লাল পরি নীল পরি, সবার সঙ্গে ভাব করি’ গান বাজতে থাকলে মেঘাও গাইতে শুরু করে। বাবা আমিনুল আলম আর মা মারিয়ার হাত ধরে মেঘা আজ আসে শাহবাগের শিশুপার্কে। সবুজ পাতার ফাঁক গলে আসা সোনালি রোদের আলোয় মেঘা চড়ে ট্রেনে। ওঠে বিমানে। দোলনায় দোলে।
মেঘা বলছিল, ‘আমার দাদুর বলা গল্পের সব এখানে দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। আমার দাদু অনেক ভালো। তাকে ধন্যবাদ।’
মেঘার দাদুর নাম আলম। তাঁদের বাসা মিরপুরে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মেঘা। মিরপুরের একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সে। মেঘার বয়স আট বছর হলেও এর আগে সে কখনো শাহবাগের শিশুপার্কে ঘুরতে আসেনি। তবে শ্যামলীর শিশুমেলায় গিয়েছে বেশ কয়েকবার। পড়ালেখা শেষ করে বাবার মোবাইল নাড়াচড়া তার নেশা। কারণ, বাবার মোবাইলে সে অনেক কিছু দেখে। দাদুর কাছে গল্প শোনার পর বাবার মোবাইলেই সে দেখেছে শিশুপার্কের সব ভিডিও।
মেঘার মা মারিয়াও ঢাকায় বড় হয়েছেন। বাবা আমিনুলেরও একই গল্প। যখন মেঘার মা মারিয়া ছোট্ট ছিলেন, তখন বহুবার এসেছেন শিশুপার্কে। ঘুরে দেখেছেন সবকিছু। কিন্তু বিয়ের পর আর কোনো দিন আসা হয়নি। মায়ের মতো মেঘার বাবার অবস্থাও তাই। পনেরো বছর আগে একবার এসেছিলেন। এরপর আর আসা হয়নি। দাদুর কাছ থেকে শিশুপার্কের গল্প শুনে কয়েক মাস আগে মেঘা বায়না ধরে সে আসবে পার্কে। পার্কে আজ আসবে তাই উত্তেজনায় ছিল মেঘা। ঈদের নামাজ পড়ে বাবা বাসায় ফেরার পর মেঘা বাবা-মাকে সোজা নিয়ে চলে আসে পার্কে।
শিশুপার্কে আছে বিরাট এক বটগাছ। শানবাঁধা বটের তলায় শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ গল্প করতে থাকে। বটের শিকড় ধরে ঝুলতে থাকে শিশু-কিশোরেরা। গাছের ফাঁক দিয়ে চলছে ট্রেন লাইন। পাতার ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় সোনালি রং ধারণ করে পার্ক। শিশুরা উঠছে ছোট্ট বিমানে। ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে সেই বিমান। ঘোড়ার পিঠে, হরিণের পিঠে চড়ে শিশুরা শুনছে গান। তার কাছেই দোলনায় দুলছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। দুপুরের পর বেলা যতই গড়াতে থাকে, ততই বিনোদনপ্রেমী মানুষের ভিড় বাড়ে শিশুপার্কে। কানায় কানায় ভরে যায় মানুষ। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলে একেকটা টিকিট। সবকিছুই যেন উপভোগ করেছে মেঘা। যদিও প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে সে বিমানে চড়ার টিকিট পায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় সে বারবার বাবা-মাকে বলছিল, ‘কখন উঠব বিমানে।’
মেঘা ঘুরতে পছন্দ করে। দাদুর সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে। মেঘা বলছিল, ‘দাদু অনেক গল্প জানে। পরির গল্প আমার পছন্দ। তাই দাদু রোজ নতুন নতুন পরিদের গল্প শোনায়। আমারও পরি হতে ইচ্ছে করে। ডানা মেলে দূর আকাশে উড়ে যেতে।’ পরেরবার যখন সে শিশুপার্কে আসবে, তখন তার দাদু আলমকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে।