Thank you for trying Sticky AMP!!

বরিশালে বিদেশফেরত ৮ হাজার, কোয়ারেন্টিনে মাত্র ৯০

দেশে ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) রোগী। আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১০। করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকেই জনসাধারণের চলাচল ও হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখতে শুরু হয়েছে তৎপরতা। তবে বরিশাল বিভাগে কতজন বিদেশ থেকে ফিরেছেন আর তাঁদের কতজন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গতকাল পর্যন্ত ছয় জেলায় কোয়ারেন্টিনে আছেন বিদেশফেরত ৯০ ব্যক্তি। তবে ঠিক কতজন প্রবাস থেকে ফিরেছেন, তার সঠিক হিসাব এখনো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। ফলে শনাক্ত করে তাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আনার উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে গত কয়েক মাসের একটি তালিকা পেয়েছি। এখন ওই তালিকা থেকে চলতি মাসের তালিকা আলাদা করতে হবে। আমরা গতকাল সে কাজ শুরু করেছি। আশা করি দু–এক দিনের মধ্যে সেটা হয়ে যাবে।’

তবে সিভিল সার্জনদের কাছে থাকা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্যে জানা গেছে, চলতি মাসে এ বিভাগে ৮ হাজারের বেশি প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দেশে ফিরে আসা একটি বিরাট অংশের প্রবাসী এখনো কোয়ারেন্টিনের বাইরে। এতে সারা দেশে করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিভিল সার্জনদের ভাষ্য, এসব প্রবাসী দেশে ফিরলেও অনেকে গ্রামের বাড়িতে আসেননি। তাঁরা ঢাকা বা অন্যান্য স্থানে রয়েছেন। যাঁরা গ্রামে ফিরেছেন, তাঁদের শনাক্ত করে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আনার ব্যাপারে জোর তৎপরতা চলছে।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর গতকাল পর্যন্ত ১৫৫টি দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৭ হাজার ১৬৭ এবং সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭৯ হাজার ৭৩১ জন। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ৮ মার্চ দেশে প্রথম যে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হন, তাঁরা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু গত শনিবার দুজন, সোমবার তিনজন এবং গতকাল আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত বলে জানায় আইইডিসিআর। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন ইতালি ও জার্মানিফেরত এবং বাকি পাঁচজন দেশে তাঁদের সংস্পর্শে আসা, নয়তো পরিবারের সদস্য।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে গতকাল দুপুরে কথা বললে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে স্থানীয়ভাবে বিদেশফেরতদের একটি তালিকা পেয়েছেন। তাতে ছয় জেলায় বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংখ্যা ৮ হাজার ১০৬ বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বেশি—প্রায় ৩ হাজার। এ ছাড়া বরগুনায় প্রায় ৮০০ জন, পিরোজপুরে ১ হাজার ৫০০ জন, ভোলায় ১ হাজার ৩০০ জন, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ১০০ জন ও ঝালকাঠিতে ৪০৬ জন।

অন্যদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিভাগের ছয় জেলায় বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীর সংখ্যা ৯০–এর মধ্যে বরিশালের রয়েছেন ২৬ জন, ভোলায় ৬ জন, পটুয়াখালীতে ২১ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১০ জন, পিরোজপুরে ১৯ জন ও বরগুনা জেলায় ৮ জন প্রবাসী বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। গত সোমবার এ সংখ্যা ছিল ৫০। গতকাল এক দিনেই বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার সংখ্যা বেড়ে ৪০ হয়েছে।

ছয় জেলার সিভিল সার্জনরা বলছেন, যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে আসেননি, ঢাকায় বা অন্যান্য স্থানে অবস্থান করছেন, তাঁদের শনাক্ত করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এ কাজে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এটা অবশ্যই খুবই উদ্বেগের বিষয়। যত দ্রুত সম্ভব প্রবাসীদের শনাক্ত করতে মাঠে নামতে হবে এবং এদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে হবে। সময়ক্ষেপণ মানেই ঝুঁকি বাড়ানো।