
আদালতের আদেশ না মেনে সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে দেশত্যাগ করা শিশুটির বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে সানিউরকে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে।
আদালত অবমাননার দায়ে আজ বুধবার শিশুটির বাবাকে এই দণ্ড দেওয়া হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ ছাড়া আদালতের ইতিপূর্বের আদেশ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সানিউরের বাবা টি আই এম নূরুন নবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে টি আই এম নবীকে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।
শিশুটি ও তার মাকে নিয়ে করা রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম। শিশুটির দাদা টি আই এম নূরুন নবীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহরিয়া কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
ভারতীয় মুসলিম পরিবারের মেয়ে সাদিকা শেখের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সানিউর টি আই এম নবীর ২০১৭ সালের ৪ জুলাই হায়দরাবাদে বিয়ে হয়। ২০১৮ সালে এই দম্পতির এক ছেলে সন্তান হয়। নবীর বিরুদ্ধে স্ত্রী সাদিকাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। সাদিকা ও শিশুটি তখন সানিউরের বাসায় ছিলেন। মারধরের বিষয়টি জানাজানির পর শিশু ও তার মাকে আটক রাখা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্য্যালয়ের একজন শিক্ষক গত ৮ আগস্ট রিট করেন। সামিউর নবী গত ১১ আগস্ট সাদিকাকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৯ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের পর বাবার খরচায় গুলশান ক্লাবে শিশু ও তার মায়ের থাকার ব্যবস্থা করা। বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তবে গত ১৩ নভেম্বর সানিউর শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি। বিষয়টি জানানো হলে হাইকোর্ট শিশুটিকে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর চেম্বারে মায়ের কাছে হস্তান্তর করতে বলেন। এরপরও শিশুটিকে হাজির করা হয়নি। বিষয়টি জানানোর পর ১৬ নভেম্বর বিকেলে হাইকোর্ট শিশুটিকে নিয়ে সানিউরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। শিশু ও তার বাবাকে ২১ নভেম্বর আদালতে হাজির করাতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অনুসারে ২১ নভেম্বর পুলিশ জানায়, শিশুটিকে নিয়ে ১৬ নভেম্বর সকালে তার বাবা দেশত্যাগ করেন।
এরপর গত ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট সানিউর টি আই এম নবীর বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। একইসঙ্গে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং আদালত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সানিউরের বাবা টি আই এম নূরুন নবীকে ৭ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। টি আই এম নূরুন নবীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও শিশুকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করায় সানিউরের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেওয়া হয়।
ধার্য তারিখ ৭ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে টি আই এম নূরুন নবী ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেওয়া হয়। টি আই এম নূরুন নবীকে আগামী ১০ তারিখে আদালতে হাজির হতে হবে।