Thank you for trying Sticky AMP!!

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় হামলা চালিয়ে অপহরণ

ঘরের টিনের বেড়ায় সন্ত্রাসীদের কোপানোর চিহ্ন। গতকাল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। ছবি: প্রথম আলো

মধ্যরাতে কুপিয়ে পথ তৈরি করে টিনের ঘরের ভেতরে ঢোকে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী। এরপর চলতে থাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও ছুরিকাঘাত। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচাতে ঘর থেকে পালিয়ে ডোবায় ঝাঁপ দেয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি। তাতেও রক্ষা হয়নি। ডোবা থেকে তুলে এনে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। পরে ওই ছাত্রীকে নিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন মেয়েটির মা–বাবা।

গত শনিবার রাতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। ওই রাতে ভুক্তভোগীদের চিৎকার শুনে কয়েকজন প্রতিবেশী এগিয়ে এলেও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে কেউ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস পাননি। ঘটনার তিন দিন পার হতে চললেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল আসামি। মেয়েটিকেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ায় অসংলগ্ন আচরণ করছেন মা। আর বাবা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে প্রাণভয়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। রাস্তার পাশেই অবস্থিত টিনের ঘর কুপিয়ে ভেতরে প্রবেশের পথ তৈরি করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে তছনছ করা অবস্থায় বিভিন্ন আসবাব ও তৈজসপত্র। ড্রেসিং টেবিলের পাশে রক্তের দাগ। বাড়ির চারপাশে অদ্ভুত একধরনের নীরবতা। কারও মুখে কোনো কথা নেই। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছিলেন না। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটু সামনে গিয়ে গ্রামের কয়েকজন বিস্তারিত খুলে বলেন। 

মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় বখাটে জাফর (২২) বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলপড়ুয়া মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। একপর্যায়ে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন, কিন্তু ছাত্রীর পরিবার তাদের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় এই হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। 

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, মেয়েটির বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ৬ কাঠা কৃষিজমি রয়েছে। জমিটির প্রতি জাফরের পরিবারের লোভ ছিল। এ জন্য জাফরের মা–বাবা প্রায়ই মেয়েটির পরিবারকে বিয়ের জন্য চাপ দিতেন। বখাটে জাফরের দাপটে ভয়ে গ্রামের লোকজন কিছু বলার সাহস পেতেন না। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপরও চড়াও হতেন। এর আগেও এক নারীকে ছুরিকাঘাত এবং এক বৃদ্ধকে লাথি মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

গত শনিবার মধ্যরাতে এই ঘটনার পর মুক্তাগাছা থানায় মেয়েটির বাবা জাফরকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর গত সোমবারে পুলিশ জাফরের ভাই সাব্বির এবং তাঁর চাচা বাবুলকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাফরসহ অন্য আসামিদের এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে জাফর ও তাঁর পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আছে। ফলে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মূল আসামিকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুইজন আসামিকে ধরা হয়েছে। জড়িত অন্য ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে।