মধুটিলা ইকোপার্কে অযত্নের ছাপ

প্যাডেল বোট থাকার কথা লেকে। সেগুলো নষ্ট হচ্ছে ডাঙ্গায় পড়ে থেকে। মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে ছবিটি গত শুক্রবার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
প্যাডেল বোট থাকার কথা লেকে। সেগুলো নষ্ট হচ্ছে ডাঙ্গায় পড়ে থেকে। মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে ছবিটি গত শুক্রবার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কটিতে দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। পার্কটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজও হচ্ছে না। সংস্কার না করায় পিকনিক স্পটগুলোও ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে না।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৯০ একর বনভূমিজুড়ে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও কিছু কাজ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে আরও কিছু কাজ করার কথা। এমনকি পার্কটি চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবলও নেই।

ইকোপার্ক এলাকার আবুল হোসেন (৫০) বলেন, প্রতিবছর এই পার্ক থেকে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে। কিন্তু পার্কটি ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হয় না। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।

মধুটিলা রেঞ্জারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পার্কটিতে প্রতিবছর প্রধান ফটক, ওয়াচ টাওয়ার, ক্যানটিন, প্যাডেল বোট ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর এখনো পর্যন্ত এসব ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রধান ফটক থেকে ১২ লাখ ৮০ হাজার এবং ওয়াচ টাওয়ার থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে পার্কটিতে গিয়ে মধুটিলার রেঞ্জার, দর্শনার্থী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্কে প্রবেশমূল্য হিসেবে বাসপ্রতি ৭০০, মিনিবাস ৫০০, মাইক্রোবাস ২০০, প্রাইভেটকার ১৫০, মোটরসাইকেল ২০ ও মাথাপিছু ১০ টাকা আদায় করা হয়। মহুয়া নামের রেস্টহাউসটি ৬ হাজার ৯০০ টাকায় ভাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, এখন ঘোরাঘুরির মৌসুম। তারপরও শুধু শুক্রবারই দর্শনার্থীরা আসেন। প্রবেশমূল্যের রসিদ দেখে জানা যায়, গত শুক্রবার ২০টি বড় বাসে করে দর্শনার্থীরা আসেন। কিন্তু দেড় বছর আগেও ছুটির দিনগুলোতে কমপক্ষে ৪০টি করে বাস আসত।

পার্কের বেশির ভাগ অংশে সীমানাপ্রাচীর নেই। পার্কের লেকে পানি থাকলেও প্যাডেল বোটগুলো লেকের পাড়ে ভেঙে পড়ে আছে। পার্কজুড়ে হাতি, কুমির, বাঘ, হরিণ, সিংহ, মৎস্যকুমারী, সাপ, ব্যাঙসহ নানা ভাস্কর্য আছে। কিন্তু সেগুলোর রং উঠে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

শিশুপার্কের ভেতরে কোনো রাইড নেই। পার্কটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পার্কের ভেতরে ১০টি পিকনিক স্পট আছে। এর মধ্যে ৭টি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এগুলো সংস্কার না করায় ভাড়া দেওয়া যায় না। সারা পার্কে দুটি শৌচাগার আছে। কিন্তু সেগুলো পরিষ্কার করা হয় না। পুরো পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।

ঢাকার মিরপুর থেকে বেড়াতে আসা নুর জাহান বেগম (৩০) বলেন, পার্কটি বেশ সুন্দর। কিন্তু ভাস্কর্যগুলোতে রং নেই। এ ছাড়া পার্কটি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।

মধুটিলার রেঞ্জার মো. ইলিছুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে পার্কে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয় না। দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পার্কের জন্য কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। তিনি ছাড়া তিনজন ফরেস্ট গার্ড ও একজন মালি আছেন। জনবল-সংকটের কারণে তাঁদের প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয়। এসব সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পাহাড়ে ওঠার সিঁড়িগুলো অপরিষ্কার অবস্থায় রয়েছে। পার্কের ভেতরে যাতায়াতের সরু রাস্তাগুলো অনেক স্থানে ভেঙে গেছে।

পার্কের ডাববিক্রেতা আবদুর রাজ্জাক (৬০) বলেন, পার্ক হওয়ার পর থেকে এখানে ব্যবসা করেন। এখন লোকজন খুব কম আসে। তিন-চার বছর আগেও দিনে চার-পাঁচ হাজার টাকার ডাব বিক্রি করতেন। এখন সারা দিনে এক হাজার টাকাও বিক্রি হয় না।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) গোবিন্দ রায় বলেন, এ মাসেই পার্কের প্রধান ফটক, টাওয়ার ও ক্যানটিন ইজারা দেওয়া হবে। লোকবল-সংকটের বিষয়টি তাঁরা জানেন, কিন্তু আপাতত এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ চালাতে হবে। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত পার্কের উন্নয়নকাজ শুরু করা হবে।