মেহেরপুরে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতীকী ছবি

চলতি মাসে সীমান্তজুড়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একই সঙ্গে মেহেরপুর থেকে রাজশাহীগামী বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের জুম মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এদিকে গতকাল রোববার গাংনী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামে ২৮ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশে লকডাউন করা হয়েছে গাংনী উপজেলার হিন্দা ও তেতুলবাড়িয়া এবং মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামকে। আগামীকাল থেকে দুই সপ্তাহ এ লকডাউন থাকবে। লকডাউনের সময় ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ওই এলাকার কোনো ব্যক্তি যদি জরুরি কাজে বাড়ির বাইরে বের হন, তবে তাঁকে উপযুক্ত কারণ দর্শানোর প্রয়োজন পড়বে।

জুম মিটিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী, সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়ারুল ইসলাম, মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফজলুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম শাহীন প্রমুখ।

জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯, গাংনীতে ১৭ ও মুজিবনগরে ৬ জন রয়েছেন। জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২২৭। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯২৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এম কে রেজা বলেন, উপজেলার তেতুলবাড়িয়া, হিন্দা, করমদি, রংমহল গ্রামে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চলমান রয়েছে।

তেতুলবাড়ি গ্রামে দেখা গেছে, গ্রামটিতে লকডাউন চলছে। ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের লকডাউনে কাজ করতে দেখা গেছে।

তেতুলবাড়িয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, করোনা নিয়ে গ্রামে এখন ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে ঘরে ঘরে করোনার প্রকোপ আরও তীব্র হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

জেলা সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন বলেন, ওই সব এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। করোনার বিষয়ে সামাজিক সচেতনতার জন্য প্রচারণা চলছে। এরপরও সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাঁরা গোপন করার চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম খান বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো বাড়ির বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জরুরি ব্যতীত সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, গাংনীর তেতুলবাড়িযা, হিন্দা ও মুজিবনগরের আনন্দবাস গ্রামের সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে, মেহেরপুর থেকে রাজশাহীগামী বিআরটিএ বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।