Thank you for trying Sticky AMP!!

যে ঘাটে শুধু মাছ আর মাছ

কাকডাকা ভোরে সেখানে শত শত মানুষের হাঁকডাক। ব্যস্ত সবাই মাছ নিয়ে। বড়, মাঝারি, ছোট—সব ধরনের মাছই আছে সেখানে। অতি ব্যস্ততায় দরদাম চলছে। পাইকারি দরে বিক্রি হওয়া মাছ কাঠের বাক্সে বরফের চাঁইয়ের তলে বন্দী হয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এই প্রসিদ্ধ মেছো বাজারটি রয়েছে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটে।

আজ সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সোয়ারীঘাটের চাম্পাতলী মাছঘাটের চিত্র এটি। বলা হয়ে থাকে, এটি ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো পাইকারি মাছের আড়ত। দিনের আলো ফুটতে না ফুটতে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে এই বাজার। এই মাছ পরে রাজধানীর একেক এলাকায় কেজি প্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়।

পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটে মাছের পাইকারি বাজার। ছবিটি আজ সোমবার ভোরে তোলা। ছবি: নাজনীন আখতার

মাছ ব্যবসায়ী মো. গোলাম হোসেন কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ড্রামভর্তি পাঙাশ মাছ নিয়ে। কুমিল্লা থেকে কিনেছেন এসব মাছ। ৯০ টাকা কেজি দরে প্রায় দুই টন পাঙাশ কিনেছেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে সব মাছ বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, পাইকারি দরে রাজধানীর অন্য বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা এসব মাছ কিনে নেন। মাছের আকার অনুসারে একেক কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
আরেকটু এগোলে পাওয়া গেল খেলারাম নামের আরেক বিক্রেতাকে। তিনি লইট্টা মাছ বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

ক্রেতার জন্য মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি আজ সোমবার ভোরে তোলা। ছবি: নাজনীন আখতার

তাঁর পাশেই কিছুটা জায়গাজুড়ে বেশ ভিড় আর শোরগোল। পলিথিনের ব্যাগের ভেতর মাছ ভরে নিলামে বিক্রি হচ্ছে। সেই নিলামে ১৩০ টাকা কেজি দরে ছোট বেলে মাছ কিনে নিলেন মো. নবী। এই প্রতিবেদককে বললেন, হাজারীবাগ সেতুর কাছে বাজারে তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন।
১৩ বছর ধরে এ পেশায় থাকা মো. রমজান জানালেন, তিনি প্রতি কেজি কার্ফু মাছ ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। আশপাশের বাজারে এই মাছ বিক্রি হবে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। তিনি কাতলা মাছ বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি।
৪০ বছরের পুরোনো মাছ ব্যবসায়ী হাজি মো. নাসিরউদ্দিনকে শুধু চিংড়ি মাছ বিক্রি করতে দেখা গেল। তিন আকারের ১৬০ কেজি গলদা চিংড়ি তিনি খুলনা থেকে এনেছেন। বিক্রি করছেন ৪৮০, ৫০০ ও ৫৮০ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতা-বিক্রেতার দর-কষাকষি চলছে। ছবিটি আজ সোমবার ভোরে তোলা। ছবি: নাজনীন আখতার

চাম্পাতলী মাছঘাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর এই আড়ত তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে ব্যবসায়ীরা রাজধানীজুড়ে বিক্রি করেন।
কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় মাছঘাটে। সোয়ারীঘাটের মাছঘাটকে প্রায় ৭৫ বছরের পুরোনো বলে দাবি করলেন। জানালেন, তিনি ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। তাঁর বাবা-দাদাও এ ব্যবসা করতেন। চারপাশ দেখিয়ে বললেন, এখানে ৭০ থেকে ৮০ জন মাছ ব্যবসায়ী রয়েছেন। মাছের সরবরাহের ওপর কেনাবেচা নির্ভর করে। সরবরাহ যথেষ্ট থাকলে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ মণ মাছ বিক্রি হচ্ছে। এই মাছঘাটে বরিশাল, ভোলা, যশোর, খুলনা, মোহনগঞ্জ থেকে মাছ আসে।