কক্সবাজার

সব কিছু ছিল কাল সমুদ্র ঘিরে

গতকাল শিল্পী অসীম হালদার সাগর পারফরমিং আর্টের মাধ্যমে করলেন অশুভর বিরুদ্ধে শুভর প্রতিবাদ l ছবি: প্রথম আলো
গতকাল শিল্পী অসীম হালদার সাগর পারফরমিং আর্টের মাধ্যমে করলেন অশুভর বিরুদ্ধে শুভর প্রতিবাদ l ছবি: প্রথম আলো

সমুদ্রের কী আছে? মানুষ কী টান অনুভব করে সমুদ্রের প্রতি? সমুদ্র মানে সেই সারি সারি ঢেউয়ের বারবার আছড়ে পড়াই তো! নাকি আরও বেশি কিছু? কেন মানুষের সমুদ্রপ্রীতি?
গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী কক্সবাজার ২০১৫-এর তৃতীয় দিন। বিকেলে পাভেল পার্থ বলবেন সাধারণ মানুষের ধারণায় সমুদ্র কেমন তা নিয়ে। এ নিয়েই ৮-১০ বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন তিনি। একে একে তিনি বলতে থাকেন নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে সাগরকে ঘিরে নিজেদের জীবন ও সংস্কৃতি গড়েছে। এর মধ্যে গড়ে উঠেছে সাগর ঘিরে নানা কল্পকাহিনি, রূপকথা।
যেমন তিনি বললেন, শ্রীমঙ্গলের মানুষ এক রকম ধানের নাম রাখে সমুদ্রফেনা। চালের রং সাদা। কিন্তু যেমন-তেমন সাদা নয়। ওই অঞ্চলের মানুষ বলে, সমুদ্রের ফেনার মতো সাদা রং তার! অথচ এই জনপদের মানুষ তো সমুদ্র দেখেনি কখনো! তবু তাদের কল্পনায় আছে সমুদ্রের ফেনার রং।
পার্থ বলে চলেন, পৃথিবীর সৃষ্টির যত রকম কাহিনি আছে, সবগুলোতেই আছে সমুদ্র থেকে জীবনের সৃষ্টির কথা। অথচ সব পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়, সমুদ্র হলো নদীর মিলনস্থল। নদী সমুদ্রের দিকে যায়। সমুদ্র কোথাও যায় না। তার মানে সমুদ্র কি স্থির? কিন্তু ওই ঢেউগুলো তো গতির কথা বলে। শুধু নিস্তরঙ্গ বয়ে যাওয়া নয়, বলে জড়কে আঘাত করার কথাও।
পাভেল পার্থ বলেন, পর্যটনের নামে আজ সাগরকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাঁর কথাই যেন পারফরমিং আর্টের মাধ্যমে পরিবেশন করলেন শিল্পী জয়দেব রোয়াজা। পরিবেশনায় তিনি তুলে ধরেন যেখানে-সেখানে জিনিসপত্র ফেলে বেলাভূমিকে নোংরা করার সংস্কৃতি।
চারপাশে দৈনিক পত্রিকা ছড়ানো, মাঝে নারকেলের ছোবড়া। একটু পর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। পুড়ে কালো হলো সব। তার মাঝেই সাদা ময়দা ছড়িয়ে দিলেন শিল্পী। যেন অশুভের মধ্যে শুভকে ছড়িয়ে দেওয়া। অসীম হালদার সাগর ‘একজিস্ট্যান্স অব আইডেনটিটি’ পরিবেশনায় তুলে ধরেন নানা পরিস্থিতিতে অসহায় সত্তার কথা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দুর্বলেরা সবলের শিকারে পরিণত হয়, তাদের কথাই তিনি বললেন। এরপর ছিল জুয়েল এ রবের আরেকটি পরিবেশনা।
প্রদর্শনীতে রিপন সাহার কয়েকটি পেইন্টিং আছে। আছে অসীত মিত্রের ছাপচিত্র, আফসার হীরার পেপার কোলাজ। আর জহর সিনহার ভাস্কর্য কিংবা অপু ধরের শিল্প স্থাপনাগুলো চোখ কেড়ে নেয় দর্শকের। এ রকম আরও কয়েকটি ভাস্কর্য ও শিল্প স্থাপনা রয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
বাংলাদেশ, ভারত ও কোরিয়ার ৫২ জন শিল্পীকে নিয়ে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আজ।
লক্ষ করুন: গতকালের প্রথম আলোতে পৃষ্ঠা ৩-এ ছাপা হওয়া ‘শিশুরা দেখাল পুতুলনাচ’ সংবাদটির সঙ্গে ছাপানো ছবির ক্যাপশনে প্রদর্শনীর নাম ভুল করে ‘এশীয় দ্বিবার্ষিক চিত্রকলা প্রদর্শনী’ ছাপা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।