পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

সারা রাতের জন্য বাসটি ভাড়া নিয়েছিল ডাকাত দল

মহাসড়কে রাতে বাসে ডাকাতির ঘটনায় এই আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শফিকুল ইসলাম যে বাসে উঠে সারা রাত নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিল ডাকাত দল। তারপর বাসচালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের জিম্মি করে রাতভর ডাকাতি করেছিল তারা।

আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ঢাকা ও পাশের জেলাগুলোয় রাতে ডাকাতি হচ্ছে। ডাকাতি যেন না হয়, সে জন্য ঢাকা রেঞ্জ ও ঢাকা জেলা পুলিশের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ একযোগে কাজ করবে। রাতের ঢাকায় আরও বেশি তল্লাশিচৌকি বসানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতির কবলে পড়া ভুক্তভোগী মানুষ মামলা করতে না পারার অভিযোগ করেছেন। থানাগুলোকে মামলা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা নেওয়ায় গড়িমসি করলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে একটি বাসে উঠেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় ডাকাত দলের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ওই নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘হাত, পা, চোখ—সব বেঁধেছিল ওরা। আমার অ্যাজমা আছে। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে ইনহেলার চেয়েছিলাম, দেয়নি। আমি শুধু কলেমা পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ আর দেখা হলো না।’ ডাকাতের কবল থেকে মুক্ত হয়ে থানায় মামলা করতে গিয়েও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম। প্রথমে যাত্রাবাড়ী থানায় তাঁকে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল উত্তরা পশ্চিম থানায়। তবে সেখানে গিয়েও বিফল হয়েছিলেন ভুক্তভোগী এই চিকিৎসক। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে ডাকাতদের ধরতে উদ্যোগী হয় পুলিশ।

এই ডাকাত দলের আট সদস্যকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন দিলীপ ওরফে সোহেল (৪৬), মো. আল আমিন (২৯), নাঈম (২৫), মো. বিপ্লব (৩৫), সজীব (২৩), আজাদ (৪৪), জহিরুল (৩৫) ও আল আমিন (৪৬)। তাঁদের কাছ থেকে চাপাতি, ছোরা, লোহার রড, চোখ বাঁধার গামছা, ডাকাতির কবলে পড়া ব্যক্তিদের ব্যবহৃত ১০টি মুঠোফোন, ২টি খেলনা পিস্তল ও ৯ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন জানান, ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে জোড়া খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে জেলে থেকে তাঁরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও ডাকাতিতে জড়িয়েছেন। দলের সদস্যদের কেউ কেউ দিনের বেলা ডাব বিক্রি বা ভ্যান চালানোর মতো কাজ করেন। রাতে তাঁরাই হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ ডাকাত।

ডাকাত দলের সদস্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র, মুঠোফোন ও নগদ টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, ডাকাত দলটি পুরো রাতের জন্য বাসটি ভাড়া নিয়েছিল। তারপর ওই বাস নিয়ে প্রথমে সাভারের গেন্ডা এলাকায় যায়। সেখান থেকে ডাকাতেরা প্রথমে বাসের চালক ও তাঁর সহকারীদের জিম্মি করে নিজেরাই বাস চালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ঘুরতে থাকেন ও যাত্রী তোলেন। পরে যাত্রীদের কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নিয়ে সকালের দিকে নানা জায়গায় নামিয়ে দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের সদস্যরা আরও জানান, চক্রটি সম্প্রতি ঢাকা জেলার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে ডাকাতি করেছে। চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম ছাড়াও বাস ডাকাতির কবলে পড়া আরও অন্তত তিনজন সাভার ও গাজীপুরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।