■ অপারেটররা গ্রাহককে এই বক্স বসাতে বলছেন না। গ্রাহকও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন সময়সীমা বেঁধে দিল সরকার।
■ ৩১ মার্চের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সব গ্রাহকের কাছে সেট টপ বক্স পৌঁছাতে হবে।
■ বিভাগীয় ও মেট্রোপলিটন শহরের জন্য সময়সীমা ৩১ মে।
টেলিভিশনে স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে হলে ডিজিটাল সেট টপ বক্স বসাতে হবে, এ খবর শুনে গত বছরের শেষ দিকে রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়ার বাসিন্দা সাহানা আক্তার স্থানীয় কেব্ল অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তখন তাঁকে জানানো হয়, এ জন্য চার হাজার টাকা লাগবে। এত দাম শুনে তিনি আর আগ্রহ দেখাননি।
সাহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, অপারেটরও তাঁকে কখনো বলেননি সেট টপ বক্স বসাতে হবে। বাসায় টেলিভিশন দেখতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
অথচ গত ৪ নভেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখতে হলে গ্রাহকদের ডিজিটাল সেট টপ বক্স বসাতে হবে। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। আরও বলা হয়েছিল, পরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভাগীয় ও জেলা শহরে এই বক্স বসাতে হবে।
সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। কাজ এগিয়েছে সামান্য। অপারেটররা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে নানা সমস্যা সামনে আনছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সেট টপ বক্স বসানোর জন্য নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
কেব্ল টিভি অপারেটর, ডিটিএইচ সেবাদাতা ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে কেব্ল অপারেটররা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সব গ্রাহকের কাছে ডিজিটাল সেট টপ বক্স পৌঁছার ব্যবস্থা নেবেন। এর পরের ধাপে ৩১ মের মধ্যে সব বিভাগীয় এবং মেট্রোপলিটন শহরে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘নির্ধারিত সময়ে যাঁরা সেট টপ বক্স নেবেন না, তাঁরা অনেকগুলো টিভি চ্যানেল দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন।’
‘ডিশলাইন’ নামে পরিচিত কেব্ল অপারেটরদের সংযোগের মাধ্যমে আসা সিগন্যালকে ডিজিটালে রূপান্তর করাই হলো সেট টপ বক্সের কাজ। কেব্ল টেলিভিশন সেবা খাতকে ডিজিটাল ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা এবং রাজস্ব আদায়ে সরকার সেট টপ বক্স নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। কেব্ল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে কত গ্রাহক আছেন তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায় না। তিন থেকে চার কোটি ধরা হয়।
দেখা যাচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে অপারেটররা গ্রাহকদের এই বক্স কিনতে তেমন কোনো তাগিদ দিচ্ছেন না। আবার যে দাম চাওয়া হচ্ছে, তা দিতে বেশির ভাগ গ্রাহকেরই আগ্রহ নেই। উল্লেখ্য, রাজধানীর কিছু জায়গায় সেট টপ বক্স বসাতে গ্রাহকের কাছ থেকে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।
অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সারা বিশ্বে এখন ইলেকট্রনিকস পণ্যের ‘চিপ’ সংকট। চাইলেই চাহিদা অনুযায়ী এখন সেট টপ বক্স আমদানি করা যাবে না। এখন ক্রয়াদেশ দিলে তা আসতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে।
কেব্ল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি আনোয়ার পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ধরা যাক ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৫০ লাখ গ্রাহক আছেন। এই সংখ্যক গ্রাহককে সেট টপ বক্সের আওতায় আনতে কমপক্ষে সাত থেকে আট মাস সময় লাগবে। তিনি আশা করছেন, এবার যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
কোয়াবের দাবি, দেশে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের মতো সেট টপ বক্স বসানো হয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান সেট টপ বক্স বসানোর দিক দিয়ে এগিয়ে আছে, সেগুলোর একটি বেঙ্গল কমিউনিকেশন। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সরাসরি সংযোগের আওতায় প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাহক সেট টপ বক্স নিয়েছেন। এসব গ্রাহক মূলত উত্তরা, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও বারিধারার। তিনি বলেন, এটা বাজারের ছোট একটি অংশ।
ইউনাইটেড কমিউনিকেশন সার্ভিসের (ইউসিএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোশাররফ আলী মনে করেন, গ্রাহকের চাহিদা তৈরি হবে তখন, যখন বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, অ্যানালগ পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে চ্যানেল কমিয়ে আনতে হবে। একসময় সব গ্রাহকই সেট টপ বক্স নিয়ে নেবেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেব্ল টিভি সেবা ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় গ্রাহক উন্নত মানের সেবা পাবেন। সরকারের রাজস্ব ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আয় বাড়ানোর সুযোগও তৈরি হবে।