এবার হজের সময় আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম হতে পারে। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। আরব নিউজ তাদের অনলাইন সংস্করণে এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, মক্কার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, হজের সময় মক্কার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। বাতাসের আর্দ্রতা থাকতে পারে ৮৫ শতাংশ। আকাশ থাকতে পারে আংশিক মেঘলা। বিশেষ করে দিনের বেলায় মক্কায় আবহাওয়া থাকবে খুবই উত্তপ্ত। আর ওই সময়েই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা চলবে। বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করা, সঙ্গে পানি রাখা এবং বাতাস চলাচল করে—এমন জায়গায় থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পাশাপাশি যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্সি অব মেটেওরোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (পিএমই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মদিনায়ও দিনের বেলায় আবহাওয়া থাকবে বেশ গরম। মক্কায় রাতের বেলায় প্রচণ্ড গরমের ভাব কমে যাবে। হজযাত্রীদের সরাসরি রোদ এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টারের দলনেতা অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুর রহমান বলেন, রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে হজযাত্রীদের। রোদে চলাচলের পর খুব ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না বা শরীরে ঢালা যাবে না। এতে গলা বসাসহ শারীরিক সমস্যা হতে পারে। গরমে ঘামে ভিজে যাওয়া জামাকাপড় নিয়ে এসির ঠান্ডায় বসলে ঘাম শুকিয়ে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
বাংলাদেশি হজযাত্রী নওগাঁর মো. হাফিজুর রহমান এর আগেও কয়েকবার হজ করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অন্যদের মিনার তাঁবুতে থেকেই নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আরাফাতের দিন জাবালে রহমত বা মসজিদে নামিরায় যাওয়ার জন্য রোদে ঘোরাঘুরি না করে নিজ তাঁবুতে থাকাই ভালো। কেউ কেউ আরাফাতে এই প্রচণ্ড রোদে বিনা মূল্যে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্য হজযাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বয়োবৃদ্ধ বা নারীরা রোদ কমে গেলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় পাথর মারবেন। যদি দিনের বেলা বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন।
হজযাত্রীদের জন্য মিনা প্রস্তুত
হজের অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা জিলহজ মাসের ৭ তারিখ (বৃহস্পতিবার) থেকে মিনায় অবস্থান করবেন। এবার মিনার নিরাপত্তা আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। কয়েক বছর আগেও কিছু প্রবাসী দেশ থেকে আসা তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে হজ পালন করতেন। যদিও এভাবে হজের অনুমতি দেয় না সৌদি কর্তৃপক্ষ। এবার প্রবাসীরা হজ করতে চাইলে নিয়ম মেনে হজ পালনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু বিনা অনুমতিতে আর কেউ হজ পালন করতে পারবেন না।
ভিড় এড়ানো ও হজযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে সরেজমিনে দেখা যায়, হজের সময় টহল দেওয়ার লক্ষ্যে পুরো এলাকায় সাতটি হেলিকপ্টার মহড়া দিচ্ছে। হজযাত্রীদের তাঁবুতে তাঁবুতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। তাঁবুর ভেতরে এসি, পানির কল ইত্যাদি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে, যাতে হাজিদের কোনো কষ্ট না হয়। হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ট্রেন সার্ভিস (যদিও সব হাজি পাবেন না) পরীক্ষামূলক যাওয়া-আসা করছে। মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে সব বাতি, এসি চালু করা হয়েছে (সারা বছর বন্ধ থাকে)। মুজদালিফায় হাজিদের জন্য পাথর এনে রাখা হয়েছে, যাতে হাজিরা পাথর সংগ্রহ করে শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছুড়তে পারেন।
হজকে সামনে রেখে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। মিনার বিভিন্ন রাস্তায় পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোনের সংযোগের জন্য খোঁড়া হয়েছিল। ওই সব রাস্তার পিচঢালাই বেশির ভাগ শেষ হয়েছে। মোয়াল্লেমের লোকজন হজযাত্রীর থাকার জন্য ম্যাট, বালিশ, কম্বল বিছানোর কাজ করছেন। মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালিদ ফয়সাল জানিয়েছেন, মক্কার আটটি হাসপাতাল ও ১২৮টি হেলথ সেন্টার হজযাত্রীদের সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।