জামালপুরের সরিষাবাড়িতে এক হাতি নিয়ে কম ‘হইচই’ হলো না! গত ২৮ জুনের ঘটনা। বুনো হাতিটি ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এরপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান! অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সেটিকে ধরা হয় নানান কায়দা-কসরত করে! তো এই হাতি নিয়ে পড়ুন জানা-অজানা মজার কিছু তথ্য:
১. কেবল বিশাল শরীরই নয়, বিশাল হৃদয়েরও অধিকারী হাতি। এদের হৃৎপিণ্ডের ওজন ২৭ থেকে ৪৬ পাউন্ড হতে পারে।
২. এ পর্যন্ত রেকর্ড বইয়ে নাম লেখানো হাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ওজন ছিল ২৪ হাজার পাউন্ড! আফ্রিকান প্রজাতির ওই হাতিটির উচ্চতা ছিল ১৩ ফুট!
৩. হাতির গড় আয়ু ৭০ বছরের বেশি।
৪. হাতিই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী, যে লাফাতে পারে না।
৫. স্থলচর প্রাণীগুলোর মধ্যে হাতির মস্তিষ্কই আকারে সবচেয়ে বড়। যা মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় ৩ / ৪ গুণ বড়। তবে মস্তিষ্ক এত বড় হলেও, হাতির শরীরের তুলনায় তা বেশ ছোট।
৬. মানুষের নাড়িস্পন্দন মিনিটে কত? উত্তর অনেকেরই জানা—৬০ থেকে ১০০ বার। মিনিটে এক হাজার নাড়িস্পন্দন তাহলে কোন প্রাণীর? ভাবছেন হাতির? উঁহু, এই স্পন্দন মাত্রা ছোট্ট ক্যানারি পাখির! আর হাতির মাত্র ২৭!
৭. হাতির চামড়ার পুরুত্ব এক ইঞ্চি।
৮. দৃষ্টিশক্তি ভালো না হলেও হাতির ঘ্রাণশক্তি প্রখর।
৯.১৬ বছর বয়সে বাচ্চা দেওয়ার মতো ক্ষমতা অর্জন একটি মেয়ে হাতি। সারা জীবনে চারটির বেশি বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা এদের ক্ষেত্রে বিরল। একটা সদ্য ভূমিষ্ঠ হাতির বাচ্চার ওজন হয় প্রায় ২৩০ পাউন্ড!
১০. পৃথিবীর সব প্রাণীর মধ্যে হাতির গর্ভাবস্থা সবচেয়ে বেশি দিন স্থায়ী হয়। গর্ভধারণের ২২ মাস পর বাচ্চা প্রসব করে একটি মা হাতি।
১১. বিড়ালের সঙ্গে হাতির একটা মিল আছে। বিড়াল ‘ঘড়ড়ড় ঘড়ড়ড়’ জাতীয় শব্দ করে একে-অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। হাতিও ঠিক তেমনই করে ‘কথা বলে’!
১২. হাতির বড় দাঁত দুটি আসলে ছেদক দন্ত। এই দুটি দাঁত হাতি ব্যবহার করে প্রতিরক্ষার জন্য, মাটির খুঁড়ে পানি বের করার জন্য কিংবা কিছু তোলার কাজে।
১৩. হাতির পেষণ দন্ত (মাঢ়ির দাঁত) চারটি। একেকটি পেষক দন্তের ওজন পাঁচ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যা কিনা একটা ইটের ওজনের সমান!
১৪. হাতির শুঁড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি মাংসপেশি থাকে!
১৫. হাতি প্রায়ই জোরে জোরে শুঁড় নাড়ায়। কেন জানেন? যাতে করে আরও ভালোভাবে গন্ধ শুঁকতে পারে।
১৬. এই শুঁড় দিয়ে হাতি কত বিচিত্র কাজ যে করে! শুঁড় দিয়ে কোনো কিছুর আকার, আকৃতি এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণাও নেয় এরা! এ ছাড়া খাবার তুলে নেওয়া, পানি শুষে নিয়ে সেটা মুখে ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ তো আছেই।
১৭. হাতি কাঁদে, খেলাধুলা করে, এদের স্মৃতিশক্তিও বেশ ভালো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো হাতি হাসতেও জানে।
১৮. হাতি যে সাঁতারে পটু, সরিষাবাড়ির ওই হাতির কাণ্ডকারখানা থেকেই তা পরিষ্কার। সাঁতার কাটার সময় এরা শুঁড়কে স্নোরকেল হিসেবে ব্যবহার করে।
১৯. নিজের ওজন তো কম নয়! বিশাল এই বপু বহন করার জন্য হাতির পায়ের বিশেষ নরম প্যাড বিশেষ কাজে দেয়। এর ফলে হাতি পিছলে পড়ে না, কোনো শব্দও হয় না হাঁটার সময়।
২০. পালের একটা হাতি দূরে থাকলে অন্য হাতিদের পায়ের শব্দ শোনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে এরা শুঁড়টা মাটির সঙ্গে লাগিয়ে রেখে বোঝার চেষ্টা করে, সঙ্গী-সাথিরা কোথায়।
২১. দারুণ সংবেদনশীল ও যত্নবান প্রাণী এরা। একটা বাচ্চা হাতি যদি কোনো বিষয়ে অভিযোগ করে, তাহলেই সেরেছে! পালের সব হাতি এককাট্টা হয়ে সমস্যার পেছনে লেগে পড়ে। বাচ্চা হাতিটাকে সবাই ছুঁয়ে দিয়ে আশ্বস্ত করে—আমরা আছি, ভয় নেই তোমার!
২২. দূরে কোথায় গিয়ে আবার ফিরে এলে দলের বাকিরা একটা হাতিকে নিজেদের নিয়মে ‘সংবর্ধনাও’ দেয়!
২৩. কুলার মতো কান হাতির। পাতলাও বটে। শরীরের রক্ত নালিকার জটিল নেটওয়ার্ক এই কান দুটি হাতির শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
২৪. আমরা যা শুনি না, হাতি তা দিব্যি শুনতে পায়।
২৫. হাতিও পরস্পরকে ‘জড়িয়ে’ ধরে। প্রক্রিয়াটা অবশ্য একটু অন্যরকম। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করে শুঁড়। পরস্পরকে শুঁড় জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা বা স্নেহের প্রকাশ করে এরা।
২৬. চলতি পথে স্বজাতির হাড়গোড় কিংবা দাঁত দেখলে হাতি শ্রদ্ধা জানায়। শুঁড় এবং পা দিয়ে ছুঁয়ে দেয় মৃত স্বজাতির স্মৃতিচিহ্নে। কোনো হাতি প্রিয় সঙ্গীর মৃত্যু ঘটার স্থানে গেলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
সূত্র: হ্যাপিএলিফেন্টকনটেস্ট ডটকম