সমুদ্র, নদী আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে একটি শহর। এই জনপদেই শান্তির প্রতীক হয়ে প্রাচীনকাল থেকে আলো বিলিয়ে যাচ্ছে শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহার। বৌদ্ধ, মুসলিম, হিন্দু—সব ধর্মের মানুষের জন্যই বিহারের দরজা অবারিত। সহাবস্থান আর সম্প্রীতিই এই জনপদের রীতি। তবু একদিন হঠাৎ যেন বদলে গেল সবকিছু। শান্তির জনপদ পুড়ল হিংসার আগুনে। কীভাবে, কেন সবারই এই প্রশ্ন। বুদ্ধ পূর্ণিমার চাঁদ ঢাকা পড়ল হিংসার বিষে। শুভ্র সাদা চাঁদ হয়ে উঠল কালো চাঁদ।
গত সোমবার শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টসের (বিটা) কালো চাঁদ নাটকের প্রথম প্রদর্শনী।
হ্যাঁ, মঞ্চের দিকে তাকিয়ে ক্ষণে ক্ষণেই দর্শকের মনে পড়ছিল রামুর কথা। নাটকের কোথাও বলা না হলেও এ যেন রামুকাণ্ডকেই নতুনভাবে দেখার চেষ্টা। সম্প্রীতি আর ঐক্যের সুরের মাঝে হঠাৎ কালো চাঁদ উদিত হওয়ার কাহিনি।
রামুতে কী ঘটেছিল অথবা কারা শত বছরের সব প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়েছে তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি এই নাটকে। বরং সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের পেছনে কী মনোভাব কাজ করে সেটাই যেন তুলে ধরতে চাওয়া হয়েছে এই নাটকে। নাটকের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে শাক্যমুনি বিহারের প্রধান ভান্তে জীনপদ থের আর একদা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে আসা বালক রাসুকে ঘিরে। রাসুর পরিচয় জানা না গেলেও ওর গলায় আরবি লেখা তাবিজ পাওয়া গিয়েছিলো। জীনপদের স্নেহে রাসু বড় হতে থাকলেও একশ্রেণীর মানুষের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিষে আক্রান্ত হয় সেও। শেষে কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে মন্দিরের ওপর। বুদ্ধপূর্ণিমার রাতে আগুন দেয় মন্দিরে।
কিন্তু কী কারণে মানুষগুলো মন্দিরে আগুন দিল তা বোঝা যায় না।
এমন আরও অনেক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও নাটকটি শেষ পর্যন্ত দর্শককে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করে। আর এখানেই এর সাফল্য।
নাটকে রাসুর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন শারমিন আক্তার। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন শিশির দত্ত। সংগীত আয়োজনে ছিলেন দীপঙ্কর দে। অশোক বড়ুয়া রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মুকুল আহমেদ।