Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২০ ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ীমোহনপুর ইউনিয়নের বঙ্কিরোট এলাকার ২৮ নম্বর ও কয়ড়া ইউনিয়নের মহিষাখোলা কামারপাড়া এলাকার ২৯ নম্বর রেলসেতু দুটির গার্ডারে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি লোহার পাতে মরিচা ধরে ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় সেতু দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে চলাচল করা প্রায় ২০টি ট্রেন থেমে থেমে ও ধীরগতিতে পার হচ্ছে সেতু দুটি।

দেড় মাস ধরে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বর্ষা মৌসুমের অজুহাত দিয়ে সেতু দুটি মেরামত করছে না। এই সেতু দুটিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

কয়ড়া ইউনিয়নের মহিষাখোলা কামারপাড়ায় ওই সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, এর গার্ডারে বেশ কয়েকটি ফাটল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত এই সেতুর নিচে লোহার অ্যাঙ্গেল, কাঠের স্লিপার দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছে। এ দুটি সেতুর দুই পাশে ‘সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার’ লেখাসংবলিত সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে। সেখানে রেল বিভাগ থেকে দুজন ওয়েম্যানও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মহিষাখোলা গ্রামের আহসান হবিব, কয়ড়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একটি ট্রেনে অনেক যাত্রী থাকে। তাই এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল মোটেই নিরাপদ নয়। ওয়েম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এক সপ্তাহ ও জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ব্যক্তি এক সপ্তাহ করে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রেন আসতে দেখলেই তাঁরা লাল ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার সংকেত দেন। চালক সংকেত পেয়ে এ সেতুর কাছে এসে ট্রেন থামিয়ে দেন। এরপর গতি কমিয়ে সেতুটি পার হয়। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দুটির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কার পাশাপাশি এ রুটে চলাচলকারী প্রায় সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিটি ট্রেন মাত্র ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে চলছে। ট্রেন সেতুর ওপরে উঠলেই কেঁপে ওঠে। এ সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। 

সেতুর গার্ডারে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফাটল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত এই সেতুর নিচে লোহার অ্যাঙ্গেল, কাঠের স্লিপার দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছে। ছবিটি সাম্প্রতিককালের। প্রথম আলো

জানতে চাইলে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের সিরাজগঞ্জ থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত যত সেতু আছে, তার অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এ সেতু দুটির বয়স ১০০ বছর পার হয়ে গেছে। এ ছাড়া রেলপথের উল্লাপাড়া ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার অংশটি চলনবিলের মধ্যে পড়েছে। প্রতিবছর বন্যা মৌসুমে পানির তীব্র¯স্রোতে উল্লাপাড়ার এ সেতু দুটির গার্ডার দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ রেলপথে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ প্রায় ১৪টি আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও ছয়টি তেল, কয়লা ও অন্যান্য মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। সব ট্রেনই এখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে সেতু দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা শেষ হলেও এখনো সেখানে অনেক পানি। তাই এ অবস্থায় সেখানে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া এ রেলপথটি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ। তাই এ পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আপাতত এ সেতুর নিচে অস্থায়ীভাবে ‘সিসি ক্লিক’ নির্মাণ করা হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ওই সেতুর পাশে বিকল্প ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দুটি নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য কিছুটা সময় তো লাগবেই।