রূপগঞ্জে কারখানায় আগুন

২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর

নিহত ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত। বাকি ২১ জনের মরদেহ হস্তান্তর আগামী শনিবার। তিনজনের পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ছেলে রিপন মিয়ার লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা লিলি বেগম। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।
ছবি: আশরাফুল আলম

৮ জুলাই বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিট। পাবনার শাহাদাত খানের মুঠোফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করতেই ছেলে মোহাম্মদ আলীর ভয়ার্ত কণ্ঠ, ‘আব্বা, আমাদের কারখানায় আগুন লাগছে। আব্বা আমি মরে যাচ্ছি।’ তিন থেকে চার সেকেন্ড কথা বলার পর মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর বাবা শাহাদাত আবার মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে কল দেন। কিন্তু কয়েকবার রিং বাজার পর মুঠোফোনটি বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর ছেলের খোঁজে ঢাকায় আসেন শাহাদাত। ছেলেকে না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিয়ে যান নমুনা। তাঁর ডিএনএর সঙ্গে ছেলের ডিএনএ মিলে যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে ছেলের মৃত্যুর ২৬ দিন পর গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে তাঁর লাশ বুঝে পেয়েছেন বাবা শাহাদাত। ছেলের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর তিনি চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন। বলতে থাকেন, ‘বাবা আমার, বাবারে..।’

কেবল মোহাম্মদ আলী নয়, তাঁর মতো আরও ২৪ শ্রমিকের মরদেহ গতকাল স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুড কারখানায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে মারা যান ৫২ শ্রমিক। রক্ত মাংসের মানুষগুলো আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। চেনার উপায় ছিল না। তাঁদের মধ্যে ৪৮ জনের মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নেওয়া হয়। সব ধরনের ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে ইতিমধ্যে ৪৫ জনের মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। বাকি ২১ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে আগামী শনিবার।

মরদেহ গতকাল হস্তান্তর করা হবে, এমন সংবাদ আগে থেকেই জানতেন নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা। সকাল থেকে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে ভিড় করেন। নিম্ন আয়ের এসব মানুষের হাতে ছিল প্রিয় মানুষের ছবি। স্বজনদের মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হয় বেলা ১টা ৪০ মিনিটে। তখন সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে একে একে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মর্গ থেকে শ্রমিকদের কফিনবন্দী মরদেহগুলো যখন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছিল, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমাম হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, কারখানার ৪৮ শ্রমিকের মধ্যে ৪৫ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বাকি তিনজনের মরদেহ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগির তাঁদের পরিচয় জানা যাবে।

শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডের কারখানায় আগুনে মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলা তদন্ত

করছে সিআইডি। এ মামলায় হাসেম ফুডের মালিক আবুল হাসেমসহ আটজন গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে হাসেমসহ চারজন জামিনে আছেন। বাকিরা কারাগারে।

ইতিমধ্যে তদন্তে উঠে এসেছে, হাসেম ফুডের কারখানায় ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না ভবন থেকে নামার জরুরি কোনো সিঁড়ি। সিআইডির ডিআইজি ইমাম হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বৈদ্যুতিক তার থেকে কারখানায় আগুন লাগে। তদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ দেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রতিবেদন, বিশেষজ্ঞদের মতামত দরকার। সেগুলো সংগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।