‘ছেলে হারানোর যে কী কষ্ট, সেটি কেবল একজন বাবাই বোঝেন। তাই আমাদের দাবি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হোক’—এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ২০০৯ সালে পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহে নিহত লে. কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর বৃদ্ধ বাবা হাবিবুর রহমান।
পাঁচ বছর আগে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের স্বজনেরাও এ দাবি করেন। ‘শহীদ পরিবারবর্গ ও দেশ উই আর কনসার্নড’ সোসাইটি আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথি অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এ সময় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ও একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানান। এগুলোকে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে মনে করছেন তাঁদের স্বজনেরা। এর পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও ঘটনা পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরার কথাও বলেন তাঁরা।
শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান। একজনের বয়স সাড়ে ছয় বছর, আরেকজনের সাড়ে নয় বছর। কিন্তু ওদের বাবার কোনো স্মৃতিই ওদের মনে নেই।’
হত্যার দিনের সঙ্গে আজকের কোনো পার্থক্য নেই জানিয়ে কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, ‘শহীদ সেনাদের কর্মকর্তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। আচার-ব্যবহারের দিক থেকে ওদের যেকোনো অনুষ্ঠানে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়। কিন্তু ওরা খুঁজে বেড়াচ্ছে, কেন ওদের বাবাকে হত্যা করা হলো?’
রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ নয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটি স্মরণ রাখার অনুরোধ জানান শহীদ লে. কর্নেল লুত্ফর রহমানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। তিনি বলেন, ‘বাবার লাশ আমার মর্গে গিয়ে খুঁজতে হয়েছে। ১৫০ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এটা যথেষ্ট নয়। আমরা চাই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে যেন মনে রাখা হয়। দয়া করে নিহতদের সম্মানটুকু ওনাদের দেন।’
লে. কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে সাকিবুর রহমান বলেন, ‘বিডিআর পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে কেন সুশীল সমাজ টক শোতে কথা বলেন না। আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না তাঁরা।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সাবেক সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত কমিটি সরকারেরই করা। সেই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আসল ঘটনা উদঘাটন সরকারেই দায়িত্ব।’
এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মরণোত্তর বীরত্বের পদক প্রদানের সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।