
আরোবী খন্দকার ও সাদিয়া আকতার দুজনই শৈশবের বন্ধু, খেলার সাথি। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে দুজন পড়াশোনা করছে। আরোবীর বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সাদিয়ার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন।
আরোবীর মা এলাকায় ফেরি করে মাছ বিক্রি করেন। সাদিয়ার মা ছোট মুদি দোকান চালান। আরোবীও পড়াশোনার ফাঁকে মায়ের সঙ্গে মাছ বিক্রি করতে যায়। আর মা যখন সওদা কিনতে শহরে যান, তখন সাদিয়া মুদি দোকানে বসে। এভাবে দুই অসহায় মায়ের শ্রমে-ঘামে ও পরিশ্রমের টাকায় দুজনই এবার এসএসসি পরীক্ষায় বগুড়ার ফাঁপোড় উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
আরোবীর বাবা আজিজুল হকের তিন শতক বসতভিটাটুকুই সম্বল। বগুড়া শহরের একটি প্রতিষ্ঠানের নৈশপ্রহরী ছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে একসময় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সংসারের ভার পড়ে মা আনোয়ারা বেগমের ওপর। তিনি গোদারপাড়া বাজার থেকে মাছ কিনে পাড়া-মহল্লা ঘুরে ফেরি করে বেচে সংসার চালান।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘একটি এনজিও থেকে ১৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মাছের ব্যবসা ধরেছি। সকালে বাজার থেকে মাছ কিনে গ্রামে গ্রামে ফেরি করি। এতে দিনে ১০০-২০০ টাকা রোজগার হয়। এ টাকায় অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা এবং ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাই। মেয়েটা বিদ্যালয়ে পড়লেও কখনো ওর স্বাদ-আহ্লাদ মেটাতে পারিনি। শফিউর রহমান নামে এক স্যার (শিক্ষক) বিনা পয়সায় তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন।’
আরোবী বলে, ‘বাড়িতে বাবা অসুস্থ। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। তাই ইচ্ছে আছে, নিজেই মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হব। বাবার চিকিৎসা ও মানুষের সেবা করব। টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে না। তাই ভাবছি, মেডিকেলে পড়ার সৌভাগ্য না হলেও নার্সিংয়ে ভর্তি হব। সেবিকা হয়ে মানুষের সেবা করব।’
সাদিয়ার বাবার কোনো জমি নেই। গরুর মাংস বিক্রি করতেন তিনি। সাত বছর আগে গরু কিনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান তিনি। এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সংসারের বোঝা এসে পড়ে মা জেসমিন আকতারের ঘাড়ে। বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির গলিতে মুদি দোকান দেন। নিজেই শহরে গিয়ে সওদা কেনেন। এভাবে কষ্ট-সংগ্রাম করে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন জেসমিন।
জেসমিন আকতার বলেন, ‘মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরে দোকানে বসে। এভাবে কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করে সাদিয়া এসএসসিতে ভালো করেছে।’