
যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন স্থানে এসব দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সমিতি বা সংঘ। তবে এর কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
গত শনিবার পুরান ঢাকার নারিন্দার মুনির হোসেন লেন ও শাহ সাহেব লেন, দয়াগঞ্জের বেগমগঞ্জ লেন, ধোলাইখাল, কলতাবাজার, প্যারিদাস রোড, ডালপট্টি, পাতলা খান লেন, বাংলাবাজার—এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অলিগলির মোড়ে জমে আছে প্রায় ১৯টি আবর্জনার স্তূপ। এর মধ্যে ১৩টি স্থানে আবর্জনা না ফেলার নোটিশ। যেখানে নোটিশ নেই, সেখানেও নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলার কোনো ডাস্টবিন নেই। ফলে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। অন্তত ১২টি স্থানে আবর্জনা ফেলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেন।
দয়াগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দেয়ালের পাশে ঝুড়িতে করে আবর্জনা ফেলতে এলেন এক গৃহিণী। যে স্থানে আবর্জনা ফেলতে এসেছেন, সেখানেই ঝুলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন এখানে ময়লা ফেলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথায় ফেলব? অনেক দিন থেকে এখানেই ময়লা ফেলছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি না, এ এলাকার সবাই এখানেই ময়লা ফেলে।’
আবর্জনার স্তূপের পাশেই রয়েছে কয়েকটি দোকান। দোকানদার কামরুল হাসান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিশ ঝুলিয়েছে। কিন্তু মানছে না কেউ, সবাই আগের মতোই এখানে ময়লা ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, আবর্জনার পচা গন্ধে এখানে থাকাই যায় না, বৃষ্টি হলে ময়লাগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে যায়, ড্রেনে গিয়ে পড়ে, ড্রেন বন্ধ হয়ে পানি জমে যায়।
বেগমগঞ্জ লেনের দয়াগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষেই ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ঠিক ওপরেই ঝুলছে বেগমগঞ্জ পঞ্চায়েত কমিটির নোটিশ। বেগমগঞ্জ পঞ্চায়েত কমিটির এক প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা জনগণের ভালোর জন্যই এ নোটিশ দিয়ে রেখেছি। কিন্তু সাধারণ জনগণ এটা মানছে না।’
আবর্জনার স্তূপের পাশেই আছে টিউবওয়েল। পানি সংগ্রহ করছেন অনেকেই। পানি নিতে আসা রাজিয়া আক্তার বলেন, ‘আপনি নিজেই তো দেখতাসেন এখানে নোটিশ দেওয়া আসে আর সেটা কেউ মানতাসে না। সবাই ময়লা ফালাইতাসে। এহন তো শুকনা সময়। বৃষ্টির সময় ময়লাগুলা পানিতে ভাসতে থাকে। কলের মুখ পর্যন্ত চইলা আসে।’
কলতাবাজারে মহানগর মহিলা কলেজের সীমানা ঘেঁষেই ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ওই পথে যাতায়াত করে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল ও কলেজ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুল, মহানগর মহিলা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। পাশ দিয়ে নাক চেপে সন্তানকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সেন্ট জেভিয়ার স্কুলের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, ‘বর্ষায় এখান দিয়ে হাঁটাই যায় না।’
ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে পাতলা খান লেনের ৩৬-৩৭ নম্বর বাড়ির সামনের গলি। আবর্জনায় ভরা গলিটা দেখা গেল নির্জন।
নিজেদের ব্যবহৃত ও দোকানের ময়লা-আবর্জনায় ভরে ফেলা হয়েছে শরৎ গুপ্ত লেনের ড্রেন। এসব ড্রেন দিয়ে পানি চলাচলের কোনো অবস্থা আর নেই। স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ‘পুরান ঢাকার অলিগলির অনেক ড্রেনই ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষায় এখানে পানি জমে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন আছে৷ সেখানেই সবাইকে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে৷ এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধান সড়কগুলোতে ময়লা রাখতে ১০০টি করে ‘বর্জ্য বিন’ দেওয়া হচ্ছে৷ সবাই নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেললেই নিজ নিজ এলাকা পরিষ্কার থাকবে৷