প্রথম আলোর জরিপ

আয় বেড়েছে ১২% মানুষের, খরচ বেড়েছে ৭৯ শতাংশের

প্রথম আলো গ্রাফিকস

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরের এক বছরে অল্পসংখ্যক মানুষের আয় বেড়েছে। খরচ বেড়েছে বেশির ভাগের। সাধারণ মানুষের আয়রোজগারের ব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার যে কাজ করেছে, তাতে বেশির ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট নন।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৫’-এ এই মতামত উঠে এসেছে। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিডেট।

জরিপে আয়রোজগার, সংসারের ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন ছিল। একটি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ মানুষের আয়রোজগারের ব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যে কাজ করেছে, তাতে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?

উত্তরে প্রায় ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। সন্তুষ্টির কথা বলেছেন প্রায় ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা। বাকিরা সন্তুষ্ট নন, অসন্তুষ্টও নন। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ—তিন আয়শ্রেণিতে সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির হার কাছাকাছি।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহর অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে, তাদের ব্যয় সামান্য কমেছে। তবে প্রায় ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, তাদের ব্যয় বরং বেড়েছে। বাকি ১৬ শতাংশের ব্যয় বাড়েনি, কমেওনি।

জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।

আয় বেড়েছে শুধু ১২% মানুষের

জরিপে আরেকটি প্রশ্ন ছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনার পরিবারের মাসিক আয়ে কী পরিবর্তন এসেছে? উত্তরে শুধু প্রায় ১২ শতাংশ উত্তরদাতা আয় বাড়ার কথা বলেছেন। ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের আয় কমেছে। ৪৬ শতাংশের আয় আগের মতোই রয়ে গেছে।

নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ—তিন আয়শ্রেণিতে আয় বাড়া অথবা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য আছে। ধনীদের একটা বড় অংশের আয় কমেছে। আবার আয় বাড়ার ক্ষেত্রে ধনীর সংখ্যা বেশি। আয় কমার ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ বেশি।

ব্যয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে জরিপে। ৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে, তাদের ব্যয় সামান্য কমেছে। তবে প্রায় ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, তাদের ব্যয় বরং বেড়েছে। বাকি ১৬ শতাংশের ব্যয় বাড়েনি, কমেওনি। ব্যয় বাড়ার কথা বলার ক্ষেত্রে নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ—তিন শ্রেণির হার প্রায় সমান।

সংসার চালাতে কত টাকা লাগে

চারজনের একটি পরিবার সচ্ছলভাবে চলার জন্য মাসিক আয় কত হওয়া উচিত—এটা ছিল জরিপের প্রশ্ন। জবাবে উত্তরদাতারা যে অঙ্ক বলেছেন, তার গড় দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৫০৫ টাকা।

ঢাকার শহরাঞ্চলের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি আয়ের প্রয়োজনের কথা বলেছেন, পরিমাণ ৪২ হাজার ৫০৫ টাকা। আর সবচেয়ে কম বলেছেন ফরিদপুরের গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা, পরিমাণ ২৬ হাজার ৭৮৩ টাকা।

দ্রব্যমূল্য বেড়েছে

জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে কী পরিবর্তন এসেছে? জবাবে ৮২ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, দাম বেড়েছে। প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের মত, দাম অপরিবর্তিত। বাকি প্রায় ৯ শতাংশের মত, দাম কমেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ মূল্যবৃদ্ধির কথা বেশি বলেছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে হারটি কাছাকাছি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ওই বছরের আগস্টে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ; অর্থাৎ এক বছর আগে যে পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কেনা যেত, সেটা কিনতে লাগছে ১০৮ টাকার বেশি।

বিশ্ববাজারে পণ্যের দরপতনসহ নানা কারণে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি একেবারেই কমে গেছে। বাংলাদেশে এখনো চড়া।