বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

বাংলাদেশ: বিশ্বমানচিত্রে নতুন সূর্যের অভ্যুদয়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দিন। ক্যালেন্ডারের পাতার এই একটি দিন কেবল তারিখ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অহংকার, আত্মপরিচয়ের চূড়ান্ত দলিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিয়ে উদিত হয়েছিল এক নতুন সূর্য—যার নাম ‘বাংলাদেশ’।

৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী ও অসম যুদ্ধ। একদিকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অন্যদিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে উদ্দীপ্ত বাংলার দামাল ছেলেরা। লাখ লাখ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে কেনা এই স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট—সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি মাথা নিচু করে ৯৩ হাজার সৈন্যসহ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় পরিসরে আত্মসমর্পণের ঘটনা বিরল।

বিজয়ের দিনে ঢাকার রাজপথ। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

দিনটি কেবল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন নয়, প্রতিবেশী ভারতও দিনটিকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে। আমাদের এই মুক্তিসংগ্রামে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। হাজারো ভারতীয় জওয়ান আমাদের স্বাধীনতার জন্য নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। আশ্রয় দিয়েছে প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে। তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বের এক রক্তিম স্মারক।

বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ

আজকের দিনে সমগ্র বাংলাদেশ লাল-সবুজের পতাকায় সেজে ওঠে। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। ১৬ ডিসেম্বরের এই বিজয় কেবল একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ছিল না; এটি ছিল অন্যায়, শোষণ, বৈষম্য ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মানবতা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ আজ যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল একাত্তরের এই সোনালি বিকেলেই।