আইন–অধিকার

জমি আপনার, দখল অন্যের!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পেয়েছেন কিংবা ধারদেনা, সঞ্চয় করে টাকা জমিয়ে অনেক কষ্ট করে একখণ্ড জমি কিনেছেন। নামজারিও হয়তো করা হয়ে গেছে। মালিকানাসংক্রান্ত সব দলিল ঠিকঠাক আছে। কিন্তু এত সাধের জমিটির দখল নিতে পারছেন না। নিজের জমি, অথচ জমিতে আপনি বসবাস করছেন না বা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ সুযোগে আপনার মালিকানাধীন জমি অন্য কেউ এসে দাবি করছে কিংবা গায়ের জোরে কিছু অংশ বা পুরোটাই দখল করে নিয়েছে, নির্মাণ করেছে স্থাপনা। শতভাগ নিষ্কণ্টক জমি হলেও যে বা যারা জমি দখল করছে, তারাও জমির মালিকানা দাবি করছে।

জায়গাজমি নিয়ে এমন ঘটনা অহরহই ঘটে। জায়গাজমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও প্রচুর আমাদের দেশে। কিন্তু জমি দখল নিয়ে বিবাদগুলো নিষ্পত্তি কীভাবে করতে হয়, তা জানা নেই অনেকের। এ কারণে নিজের জমি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ রকমভাবে নিজের জমি যদি অন্যের দখলে চলে যায়, তাহলে কী করতে হবে? জায়গাজমি বেদখল ঠেকাতে এবং জমি ফিরে পেতে রয়েছে নির্দিষ্ট আইন। তবে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রাতারাতি নিষ্পত্তি সম্ভব নয়, কিংবা অল্প দিনের মধ্যে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য ধৈর্য নিয়ে আইনি প্রতিকারের পথ অবলম্বন করতে হবে।

আইনি প্রতিকার

জমির দখল না পেলে বা জমি থেকে অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। এ আইনের আশ্রয় নেওয়ার মানে হচ্ছে দেওয়ানি প্রতিকার এবং এ জন্য দেওয়ানি আদালতে যেতে হবে। নির্দিষ্ট মূল্যমান অনুযায়ী এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে মোকদ্দমা করতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারানুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে ওই জমিতে তাঁর স্বত্ব বা মালিকানা আছে বলে প্রমাণ দিতে হয়, না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ধারায় প্রতিকার চাইতে হলে জমির স্বত্ব, অর্থাৎ মালিকানার দাবিসহ দখল ফিরে পাওয়ার দাবি করতে হবে। মালিকানার ঘোষণা ছাড়া শুধু দখল ফিরে পাওয়ার প্রতিকার এ ধারায় চাওয়া যায় না।

৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে গেলে বাদী শুধু দখলচ্যুত হয়েছেন—এ মর্মে প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্বত্ব বা মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। ৯ ধারার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো, জমিটি বাদীর দখলে ছিল কি না, বিবাদী জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না, বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না ইত্যাদি। তবে ৯ ধারার প্রতিকারের ক্ষেত্রে তামাদি আইন অনুযায়ী, বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হতে পারে। লক্ষণীয়, সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৯ ধারায় মোকদ্দমা করা যায় না।

৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। এসব প্রতিকারের ক্ষেত্রে জমির মূল্যমানের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে এবং মূল্যানুপাতে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। ৯ ধারায় মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মূল্যানুপাতে কোর্ট ফির (এডভেলোরেম) অর্ধেক জমা দিতে হয়ে।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধ এবং এতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এর দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় পক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার নির্ণয় করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে পুলিশকে সরেজমিন তদন্তের আদেশ দিতে পারেন এবং এর ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে পক্ষের দখল যথার্থ বলে মনে হবে বা তিনি যে পক্ষকে প্রকৃত দখলদার সাব্যস্ত করবেন, আদেশ দ্বারা আইনানুগ উচ্ছেদ করা না পর্যন্ত সে পক্ষ আইনানুগ দখলদার বলে গণ্য হবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।

তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী