(বাঁ থেকে) অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন
(বাঁ থেকে) অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন

ধ্বংসযজ্ঞ পরিহার করে শান্ত থাকার আহ্বান

সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং সংবাদ উপস্থাপক ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন। ভিডিও বার্তায় এই আহ্বান জানান তাঁরা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সব ধরনের হিংসাত্মক কাজ, ধ্বংসযজ্ঞ পরিহার করে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনকারী দুই শিক্ষক ও একজন আইনজীবী।

আজ সোমবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে একসঙ্গে বার্তা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং সংবাদ উপস্থাপক ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন। এই আইনজীবীর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ করা হয়। পৃথক ভিডিও বার্তা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনেকেই এখন রাস্তায় নেমেছেন। যাঁদের অনেককেই আমরা আন্দোলনে পাইনি; কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সম্ভাবনাটা তৈরি করলেন, সেই সম্ভাবনা যেন কোনোভাবেই নস্যাৎ না হয়। সবার কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি, এই সম্ভাবন নষ্ট না করে বরং আরও শক্তিশালী করুন। মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরি করুন।’

এর আগে তানজিম উদ্দিন খান আরও বলেন ‘আমরা ইতিহাস রচনার একটি ক্রান্তিকালে আছি। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের অনাস্থার ফল হিসেবে একেবারে নতুন ধরনের এক গণ-অভ্যুত্থান দেখলাম আমরা।’ এ সময় তিনি স্থানীয় পর্যায়ের সব সমন্বয়কের কাছে অনুরোধ করেন, দেশের জেলা-উপজেলাসহ সব জায়গায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নিতে।

ফেসবুক লাইভে অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান (বাঁয়ে) ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন

শিক্ষার্থীরা যে সত্যিকারের বৈষম্যহীন, সাম্য ও মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, সেই বাংলাদেশই দেখতে চান উল্লেখ করে তানজিম আহমেদ খান সবার প্রতি সম্মানবোধ ও সহানুভূতি বজায় রাখার অনুরোধ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বিজয় অর্জনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জন্য সবারই অভিনন্দন প্রাপ্য। কিন্তু একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে এই জাতীয় সংসদ ভবন, গণভবন, ৩২ নম্বর—প্রতিটিই আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা অসাধ্য সাধন করেছি। এই অর্জনের সব ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, যদি আমরা প্রতিশোধের পথ বেছে নিই। আপনারা কারও ওপর হামলা করবেন না।’

সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, যেন কোনোভাবেই আমরা মানুষের জানমালের ক্ষতির কারণ না হই। তাহলে কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগ শাসকদের সঙ্গে কোনো পার্থক্য থাকবে না।’ তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও জনগণের কাছে অনুরোধ করেন ধ্বংসযজ্ঞ না করতে।

সামিনা লুৎফা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে যে আমাদের অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। সেই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার করতে হবে। সামনে আরও অনেক কাজ বাকি আছে। এখনই এমন উন্মত্ততায় মাতবেন না।’

সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা

সংবাদ উপস্থাপক ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবনে লুটপাটের ঘটনার বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি আমরা। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই বিরাট মহান আন্দোলনকে দয়া করে কলুষিত করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনের প্রথম ধাপের বিজয়ের পরই যদি আমরা বৈষম্য দিয়ে শুরু করি, যদি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়, এটা এ আন্দোলনকে কলুষিত করবে। সারা পৃথিবীর সামনে আমাদের লজ্জিত করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ কাজগুলো আপনারা করবেন না এবং সামনে ঘটতে দেখলে আপনারাও প্রতিহত করবেন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে মানজুর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো ধরনের সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবেন না ছাত্ররা। তাঁদের সঙ্গে এবং অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা হতে হবে। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের নিপাত হয়েছে। বৈষম্য দূর করতে আরও অনেক কাজ এখন বাকি আছে আমাদের।’ এই পরিস্থিতিতে দেশের সবাইকে সহনশীল হয়ে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।