রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক জুলাই সংলাপে বক্তারা। ২০ আগস্ট, ২০২৫
রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক জুলাই সংলাপে বক্তারা। ২০ আগস্ট, ২০২৫

বিআইপির সংলাপ

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু এল, তা নিয়ে প্রশ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুনায়েদ ইসলাম জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। অভ্যুত্থান নিয়ে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান, কথা বলতে চান, সমালোচনা করতে চান। কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি হয়েছে কি না, সেখানে প্রশ্ন রয়েছে। এখনো আগের জায়গায় যাচ্ছি কি না। এই সরকারের সময়ে খুন বাড়ছে, এখনো সমালোচনা করলে অন্য পক্ষ কীভাবে দেখবে, সেই ভাবনা মনে কাজ করে।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক জুলাই সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

চব্বিশের অভ্যুত্থানে জেল খেটেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান। তিনি বলেন, অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়েছে। আবার কিছু কাজও হয়েছে। এই অভ্যুত্থানে সব ধরনের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। এখন সেই ঐক্যের ছিটেফোঁটাও নেই।

সংলাপে সঞ্চালকের ভূমিকায় বিআইপির সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, গণ–অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল। এক বছর পর সেসব আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির বিষয়গুলো জানতেই এ সংলাপ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে যেসব শিক্ষার্থীর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, এখন তাঁদের পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, যে রাবণ, সে–ই লঙ্কায় যাওয়ার রাস্তা করে নেয়। ৫ আগস্টের অর্জন ৮ আগস্টেই ব্যাহত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী ভেবেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যাঁরা বঙ্গভবনে গেল, তাঁরা ‘সাধারণ’ না।

দেশের ভেতর থেকে, বাইরে থেকে এখানে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে গোলাম রব্বানী বলেন, নানান বয়ান দেওয়ার চেষ্টা করছে নৈরাজ্যকারীরা। আগে কথা বলা যেত না, এখন বললেও শোনে না—দুটিই ফ্যাসিবাদ। সরকার মব সামলাতে ব্যর্থ। বরং সরকারের কেউ কেউ মবকে ‘প্রেশার গ্রুপ’ বলছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই চব্বিশের অভ্যুত্থান হয়েছে।

এই অধ্যাপক বলেন, গত ১৫ বছরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এই এক বছরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা দেখা যায়নি। নিরাপদ বাংলাদেশ পাওয়া গেল না। শিক্ষা সংস্কারে মনোযোগ না থাকায় বলেন, শিক্ষা সংস্কার বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার সম্ভব নয়।

গোলাম রব্বানী উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার সরকার যে অর্থনৈতিক অবস্থা রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে ইউনূস সরকার ধাক্কা সামলাতে পেরেছেন।

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, এ সরকার ভালোমন্দ মেশানো সরকার। কিন্তু সবচেয়ে ‘ইনোসেন্ট’ (নিষ্পাপ) সরকার। একই সঙ্গে সরকার তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। এটার জন্য এককভাবে দায়ী করলে নিজেদের দায় ভুলে যাওয়া হবে। অভ্যুত্থানের পর দায়িত্বও নিতে হবে, শুধু সমালোচনা করলে হবে না।

ফারুক ওয়াসিফ আরও বলেন, জুলাইয়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নানাভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটার জন্য যার অংশীদারত্ব বেশি, তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। যেকোনো কিছুর সমাধান লাগাতার বিপ্লব না। প্রতিদিন বিপ্লব হয় না।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, ৩২ নম্বর ভাঙার মধ্য দিয়ে সরকার প্রথম পিছু হটে। মবকে উসকানি ও প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। ভারতে বিজেপি যেভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার মতবাদ তৈরি করেছে, বাংলাদেশে তার কিছু প্রতিরূপ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতে যেটা সফল হয়েছে, বাংলাদেশে তা হবে না। এ দেশের মানুষ এই মবকে পছন্দ করছে না। এই মব জনসমর্থন পাচ্ছে না।

ফিরোজ আহমেদ আরও বলেন, বর্তমান সরকার অনেকগুলো সংস্কার করতে পারত— শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেত। কিন্তু তা হয়নি। পুলিশের সংস্কার কার্যক্রমও দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে কী হয়েছে, শুধু সেদিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সামনের দিকে এগোতে হবে। সংস্কারের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে।

বিআইপির এ সংলাপে আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আলোকচিত্র সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, স্থপতি ফারহানা শারমিন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম।