অনুষ্ঠানে ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ানের পরিচালনায় ‘নিরাপদ মাসিক—কৈশোর থেকে নারীত্ব পর্যন্ত’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সাতজন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
অনুষ্ঠানে ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ানের পরিচালনায় ‘নিরাপদ মাসিক—কৈশোর থেকে নারীত্ব পর্যন্ত’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সাতজন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

আলোচনায় সভায় তথ্য

স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না দেশের ৮২.৬% নারী

মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে এখনো অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা। মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না দেশের ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোরী ও নারী। তাঁদের অনেকেই এর সঠিক ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সচেতন নন। এতে মাসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নারীদের প্রজননস্বাস্থ্যও রয়েছে হুমকির মুখে, যা ভবিষ্যতে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সেনোরা এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের বিপণন বিভাগের প্রধান জেসমিন জামান। তিনি বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, দেশে মাত্র ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। সে হিসাবে ১০০ জনে প্রায় ৮৩ জন নারীই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না, যা অত্যন্ত ভয়ানক।

জেসমিন জামান বলেন, মাসিকের সময় তুলা, ময়লা কাপড়, এমনকি রাসায়নিক সুগন্ধিযুক্ত নানা স্যানিটারি পণ্য ব্যবহারের কারণে ৯৭ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় জীবাণু সংক্রমিত হন। অনেকের ক্যানসারও হয়।

জেসমিন জামান আরও বলেন, মাসিকের সময় গড়ে তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে প্রায় ৪০ শতাংশ স্কুলছাত্রী। পোশাকশিল্প খাতে কর্মরত প্রায় ৬০ লাখ নারীকর্মী মাসিকের কারণে গড়ে ছয় দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন।

মাসিকের কারণে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারকে আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, উচ্চমূল্যের কারণে অনেক নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন না। তাই নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম মৌলিক এই উপকরণটির দাম কমানো প্রয়োজন।

র‌্যাফেল ড্র এবং মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপনী টানা হয়

দেশে নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে নিজের একটি গবেষণা উপস্থাপন করেন চিকিৎসক অধ্যাপক ফাহমিদা শারমিন। তিনি বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারের সঠিক উপায় জানেন না অনেক নারী। অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে একটি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, কেউ ন্যাপকিনের সঙ্গে টিস্যু ব্যবহার করেন। ফলে নানা রকম ইনফেকশনে আক্রান্ত হন তাঁরা। তাই শুধু ন্যাপকিন ব্যবহার করলেই হবে না, ব্যবহার করতে হবে সঠিক নিয়মে।

২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৬০ শতাংশ নারীকে নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনতে সেনোরা এবং ওজিএসবি যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে বলে জানান স্কয়ার টয়লেট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মালিক মোহাম্মদ সাঈদ।

এ জন্য সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাবা এবং ১ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাই পরিবারের মেয়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনেন। এটি পরিবর্তন হওয়া দরকার। কিশোরী ও নারীরা যেন কোনো দ্বিধা ছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন, সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নারী-পুরুষ সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ানের পরিচালনায় ‘নিরাপদ মাসিক-কৈশোর থেকে নারীত্ব পর্যন্ত’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সাতজন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁরা হলেন ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম, অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানু, অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী ও অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, মহাসচিব অধ্যাপক সালমা রউফ, সদস্য অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম এবং স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক নার্গিস ফাতেমা।

অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান বলেন, ‘মাসিক স্বাস্থ্যকে এখনো এক প্রকার ট্যাবু (গোপন বিষয়) মনে করা হয়। এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সবার উচিত নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করা।’